বাঙালি সাহিত্যে কেন নোবেল পুরস্কার পাচ্ছে না?

আনিসুর রহমান
Published : 6 Oct 2020, 08:05 AM
Updated : 6 Oct 2020, 08:05 AM

দিন কয়েকের মধ্যে আসছে বৃহস্পতিবার অক্টোবরের ৮ তারিখে এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখকের নাম ঘোষণা করা হবে। এই পুরস্কার নিয়ে সারা দুনিয়ার লেখক-পাঠকের দারুণ আগ্রহ। পৃথিবীর আর কোনো পুরস্কারই মনোযোগ, মর্যাদা আর আলোচনার কেন্দ্রে নোবেল পুরস্কারের ধারেকাছেও আসতে পারেনি। এরকম একটি ঈর্ষণীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৯১৩ সালে। আজ থেকে শতাধিক বছর পূর্বে। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন ইউরোপ মহাদেশের বাইরে প্রথম নোবেল জয়ী বিরল প্রতিভা, বিরল এক বাঙালি। এতটুকু আমরা প্রায় সকলেই জানি। এই সময়ে একটি প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক বাঙালি কী সাহিত্যে আর নোবেল পুরস্কার পাবে না?

অথবা প্রশ্নটিকে ঘুরিয়ে এভাবেও বলা যায়, বাঙালি সাহিত্যে কেন নোবেল পুরস্কার পাচ্ছে না?

এই প্রশ্ন মাথায় রেখেই একটু ঝালিয়ে নেয়া যাক নোবেল পুরস্কারের বাছাই প্রক্রিয়াটা কেমন? নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেল ফাউন্ডেশন পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হলেও বাছাই প্রক্রিয়াটার এখতিয়ার সুইডিশ একাডেমির হাতে। স্বাধীন ও স্বায়ত্ত্বশাসিত এই একাডেমি সুইডেনের রাজা কর্তৃক আজীবনের জন্যে নিয়োগকৃত লেখক, কবি, অধ্যাপক আর পণ্ডিতের সমন্বয়ে ১৮ সদস্যের পরিচালকমণ্ডলী দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ১৮ সদস্যের মাঝ থেকে প্রতি তিন বছরের জন্যে তিন সদস্যের সমন্বয়ে নোবেল পুরস্কারের জন্যে একটি কমিটি করে দেয়া হয়। কমিটি প্রয়োজনে বাড়তি সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, একাডেমির ১৮ সদস্যের ভেতর থেকে। এই কমিটিকে সাহায্য করার জন্যে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটিও থাকে। বিশেষজ্ঞ কমিটি পুরস্কারের জন্যে জমা পড়া দীর্ঘ নামের তালিকা থেকে পনের থেকে বিশ জন লেখকের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরিতে সাহায্য করে, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে।

এর পরের প্রশ্ন, এই মনোনয়ন প্রক্রিয়াটা কেমন? কারা মনোনয়ন দিতে পারেন? সাধারণত সাহিত্য এবং ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক, পূর্বেকার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখকগণ এবং দেশে দেশে জাতীয় পর্যায়ের সাহিত্য সংগঠন বা লেখক সংঘের সভাপতিগণ এই পুরস্কারের জন্যে নাম প্রস্তাব করতে পারেন। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে পরবর্তী বছরের পুরস্কারের জন্যে এরকম ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কাছে মনোনয়ন প্রদানের জন্যে সুইডিশ একাডেমির নোবেল কমিটি ছয় শতাধিক চিঠি পাঠায়। তবে নোবেল কমিটির চিঠি না পেলেও এই পুরস্কারের মনোনয়নের জন্যে যোগ্য কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও পুরস্কারের জন্যে নাম প্রস্তাব করতে পারে। তবে কেউ এই পুরস্কারের জন্যে নিজের নাম প্রস্তাব করতে পারবে না। সেপ্টেম্বরে চিঠি পাবার পরে সামনের বছর জানুয়ারির ৩১ তারিখের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হবে নোবেল কমিটি বরাবর। এপ্রিল মাসে নোবেল কমিটি জমা পড়া নামগুলো থেকে যাচাই বাছাই করে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করবে। এই সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে চূড়ান্ত বিবেচনার জন্যে পাঁচ জনের একটি তালিকা করবে নোবেল কমিটি।

মে থেকে অগাস্ট মাস জুড়ে সুইডিশ একাডেমির সদস্যরা এই পাঁচ মনোনীত লেখকের সাহিত্যকর্ম পঠনপাঠন বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামত নেবে। সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে এই পাঁচ জনের লেখাজোখা নিয়ে আলোচনা চলবে। অক্টোবরের শুরুর দিকে এই পাঁচটি নাম থেকে চূড়ান্ত নামটি বাছাই করা হবে, ১৮ সদস্যের মাঝে ভোটাভুটির মাধ্যমে। উপস্থিত মোট সদস্যের অর্ধেকের বেশি ভোট যে লেখকের পক্ষে পড়বে তিনিই হবেন চূড়ান্ত পুরস্কার বিজয়ী। পুরস্কার প্রদানের ৫০ বছর পরে পুরস্কার প্রক্রিয়ার তথ্য, নাম ও বিস্তারিত উন্মুক্ত করার রেওয়াজ রয়েছে। তার আগে পুরো প্রক্রিয়াটা গোপন থাকে।

পুরস্কারকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা বিতর্ক চালু থাকলেও গোটা প্রক্রিয়াটা সাধিত হয় পুরোপুরি পেশাদারি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা অক্ষুণ্ণ রেখে।

এই পর্যায়ে আমরা একটু ঝালিয়ে নিতে পারি, বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে কিভাবে আবিষ্কার করা হয়েছিল? ব্রিটিশ চিত্রকলার শিক্ষক রতেনস্টাইন এবং আইরিশ কবি ইয়েটসের ঘষামাজার পরে রবীন্দ্রনাথের অনূদিত ইংরেজি গীতিকাব্য বিলেতের দি ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয় ১৯১২ সালে। প্রকাশের প্রথম বছরেই বইটি দশবার পুর্নমুদ্রিত হয়। বইটি পড়ে রাজকীয় ব্রিটিশ সাহিত্য সমাজের সদস্য থমাস স্টার্জ মুর সুইডিশ একাডেমিতে পত্র লিখে নোবেল পুরস্কারের জন্যে রবীন্দ্রনাথের নাম প্রস্তাব করেন। তারপর সুইডিশ একাডেমি রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি সংস্করণ সংগ্রহ করে। রবীন্দ্রনাথের নাম পুরস্কারের জন্যে নির্ধারিত শীর্ষ পাঁচটির মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। প্রথম নামটি ছিল ফরাসি লেখক এমিল ফগ। ওই সময় সুইডিশ একাডেমিতে ছিলেন লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এসাইয়াস টেগনের যিনি বাংলা পড়তে পারতেন। এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথের লেখার স্বাদ মূল ভাষায় খতিয়ে দেখার জন্যে সুইডিশ একাডেমি রবীন্দ্রনাথের নৈবেদ্য, খেয়া এবং গীতাঞ্জলি বই তিনটি সংগ্রহ করে। ইংরেজি গীতাঞ্জলি পড়ে সুইডিশ একাডেমির সদস্য কবি হেইদেনস্টাম একটি প্রবন্ধ লিখেন। এতসব কিছুর পর চূড়ান্ত বাছাইয়ে পাঁচটি নামের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ঘটনাটি দুনিয়ার এক বিষ্ময়।

এই বিষ্ময়ের মর্যাদাসম্পন্ন উত্তরাধিকারী বাঙালি লেখকরা শতাধিক বছর পরে এসে এই পুরস্কার বিবেচনায় কোন অবস্থানে আছেন? নোবেল পুরস্কারের বাছাই প্রক্রিয়া এবং রবীন্দ্রনাথের পুরস্কার লাভ – এই দুটি বিষয় থেকে একটি আবশ্যক সত্য আমাদের সামনে চলে আসে।

সত্যটি হচ্ছে সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণ। এই আন্তর্জাতিকীকরণে কয়েকটি অবকাঠামো ভূমিকা রাখে। অবকাঠামোগুলো হচ্ছে:

১।      একাডেমি; বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগ

২।      জাতীয় পর্যায়ে সাহিত্য এবং লেখক সংঘ

৩।      আন্তর্জাতিক মানের পেশাদারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান

৪।      আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকা/সাহিত্য সাময়িকী

৫।      রাষ্ট্রীয়; ব্যবসায়ী, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কর্তৃক যুথসই পেশাদারি পৃষ্টপোষকতা

৬।      আন্তর্জাতিক মানের অনুবাদ

১৯০১ সাল থেকে অদ্যাবধি যেসব লেখক এই পুরস্কার পেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই যোগ্যতার নিরিখে এই ধাপগুলো মর্যাদার সঙ্গেই পার করে এসে ঐ পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এমনকি আমাদের রবীন্দ্রনাথও সব ধাপ পার করেই সুইডিশ একাডেমির আলোচনার টেবিলে পৌঁছেছেন।

আন্তর্জাতিকীকরণের অবকাঠামোগুলো খতিয়ে দেখা যাক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে সব একাডেমি রয়েছে, ধরা যাক ফরাসি একাডেমি, সুইডিশ একাডেমি, ডেনিশ একাডেমি বা দিল্লীর সাহিত্য একাডেমির সঙ্গে কি কোনো কার্যকর যোগাযোগ, লেনদেন বা এই ধরনের কর্মযজ্ঞ চালানোর মত দক্ষ ও প্রাজ্ঞ পরিষদ আমাদের একাডেমির আছে?

আমাদের জাতীয় পর্যায়ে সেরকম সাহিত্য সংঘ বা লেখক সংঘ কি আমরা গড়ে তুলতে পেরেছি? ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধু লেখক ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই লেখক ট্রাস্ট ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আমরা কী সেটা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি? নানা সীমাবদ্ধতার পরও যে দুয়েকটি সংঘ সচল রয়েছে তাদের না আছে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি না আছে পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গি। এসব প্লাটফরম আকড়ে রেখে এক একজন সংস্কৃতি অঙ্গনের মোড়ল সেজে সংঘগুলোকে রাজনৈতিক দলের টোকাই সংগঠনে রূপান্তরিক করেছেন। সেই সঙ্গে দুই একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া এসব সংঘ বা প্লাটফরমের কর্তারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট লাভের লোভে মাস্তান বুদ্ধিজীবীতে পরিণত হন।

আমাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো পেশাদারিত্বের বেলায় এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পাঠও নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তো সুদূর পরাহত। ক্ষমতা ও অর্থকড়ির কেন্দ্রে থাকা নানাজনের সংস্রব ও সংযোগে সংক্ষিপ্ত পথে অযাচিত সুযোগ নিয়ে অর্থ ও ব্যবসায় রমরমা অবস্থা করা যায় বটে। এরকম দৃষ্টান্ত ভুরিভুরি। আদতে কি আমাদের কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়েছে যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে?

কিঞ্চিত ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের কি জাতের কোনো সাহিত্য সম্পাদক আছে? কেরানি মার্কা লোকজন দিয়ে পাতা ভরানো যায় কিন্তু সাহিত্য হয় না। কর্পোরেট সিন্ডিকেট আর নির্লজ্জ ধান্দাবাজি দিয়ে তো আর সাহিত্য হয় না। যে কারণে সাহিত্য সমালোচনা দাঁড়ায়নি। সম্ভাবনাময় মেধা ও প্রতিভা সময় মতো তুলে ধরা হয়নি। নিজ দেশেই যদি লেখকের ভাত না থাকে, নাম না থাকে, বিদেশে সে নাম পৌঁছবে কেমনে?

রাষ্ট্রীয়, ব্যবসায়ী বা গোষ্ঠীগত কোনো পর্যায়ে উল্লেখ করার মতো আন্তর্জাতিকমানের পৃষ্টাপোষকতা কি সাহিত্য বা লেখকের জন্যে আমাদের রয়েছে? যদি না থাকে তাহলে? বিদেশি সংস্থা, বিদেশি কর্তৃপক্ষ বা ব্যবসায়ীর এমন কী দায় পড়েছে আমাদের লেখক বা লেখালেখিকে আন্তর্জাতিক দরবারে তুলে ধরবেন। এতটা আজগুবি স্বপ্ন দেখা কি ঠিক হবে?

রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি নিজে অনুবাদ করেছিলেন, তা ঘষামাজা করেছিলেন দুইজন জাত প্রতিভা যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি পড়ে ইয়েটস বলেছিলেন, বাঙালি ইংরেজি জানে না। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি ফেলনা ছিল না যদিও, কিন্তু মাতৃভাষা তো না। তিনি তার তাবৎ লেখালেখির চল্লিশ ভাগই লিখেছিলেন ইংরেজিতে। এমনকি ভারতীয় দার্শনিক কবি কবির দাশের কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করে ১৯১৫ সালের ম্যাকমিলান থেকে প্রকাশ করেছিলেন। সে উত্তরাধিকার বয়ে চলা আমরা বঙ্গবন্ধুর লেখাজোখারও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অনুবাদ করতে পারিনি। যদিও মুজিব শতবর্ষে আমরা অনেক কথাই বলেছি। তাহলে?

এইবার সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণের অবকাঠামো থেকে নজর সরিয়ে খোদ বাংলা সাহিত্য বা বাংলা লেখালেখির কী অবস্থা, সেই দিকটাও একটু খতিয়ে দেখা দরকার।

নোবেল পুরস্কারের পর্যবেক্ষণ থেকে প্রতীয়মান হয় প্রতিটি পুরস্কারের পেছনেই একজন লেখকের লেখার সাধ্য, গভীর মনোবিশ্লেষণ, নিজস্ব ভাষাভঙ্গি, ভাবনার গভীরতা, ভাষা ও প্রকাশের নতুনত্ব – সর্বোপরি সৃষ্টিশীলতার নতুন এক আবিষ্কার এককথায় অভিনব এবং এই অভিনব হতে হবে বিশ্ব দরবারে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এই 'অভিনব' কথাটা তিন বাঙালির বেলায় হলফ করে বলে দেয়া যায়; রবীন্দ্র পূর্ব প্রজন্মের লালন ফকির, রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্র পরের প্রজন্মে শামসুর রাহমান। এরপরে?

সাহিত্যের বিভাজনগুলো যদি আলাদা করে বিবেচনায় আনি- যেমন প্রবন্ধ, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, জীবনী, সাহিত্য সমালোচনা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, সংবাদ নিবন্ধে কার নাম বলব আমরা? কেন বলব? কিভাবে বলব?

এখানেই শেষ নয়, ইংরেজি অনুবাদের বদৌলতে এই সময়ের একাধিক বাঙালি লেখক, বাংলাদেশের লেখক বিদেশে নামধাম করার চেষ্টা করতেছেন। আমাদের নিজ দেশের মানদণ্ডে যাদেরকে তৃতীয় বা চতুর্থ কাতারের লেখক হিসেবে বিবেচনা করা যাবে হয়তো। অথচ এরাই রবীন্দ্রনাথ-শামসুর রাহমান উত্তর প্রজন্মের বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব যদি করে তাহলে আমাদের সাহিত্যের মুখটা কি থাকল?

আমাদের এই সময়ের বেশিরভাগ লেখক এবং লেখালেখির দৌড়টা হলো গরুর রচনা শেখার মতো, গরুর রচনা লেখার মতো। অথচ গরুর রচনা ধাঁচের লেখালেখি নিয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত সময় ও পথে জাতে উঠতে চাই। লেখালেখি বড়ই কঠিন কাজ। এর জন্যে চাই রক্ত ঘাম মেধা ও প্রতিভা। জীবনের সমান সময়। জীবনের সমান রক্ত। জীবনের সমান প্রেম।

অথচ আমাদের লেখকরা জগতের অন্য রকম এক বিষ্ময়। তারা কেবল লেখক নন – তারা সচিব, তারা বিচারপতি, তারা ব্যবসায়ী, তারা অধ্যাপক, গবেষক কূটনীতিক, সংগঠক। এতকিছু হয়ে তারা লেখক হতে চান। হয়ে থাকেন বটে। আর এই হওয়ায় আর যাই হোক সাহিত্যের মর্যাদাসম্পন্ন আন্তর্জাতিকীকরণ সম্ভব না। কেউ কেউ জনপ্রিয় হতে পারেন। ঘন্টার পর ঘন্টা অটোগ্রাফ দিতে পারেন, দিতে থাকুন। তবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্যে রবীন্দ্রনাথের দেখানো পথেই বাঙালিকে হাঁটতে হবে। তারপর নিজস্ব পথ বাতলে নিতে হবে।

লেখালেখিতে সংক্ষিপ্ত কোনো পথ নাই। নোবেল পুরস্কারের পথটা আরো দীর্ঘ।