বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা এবং ‘গাভী বিত্তান্ত’

আনিসুর রহমান
Published : 14 July 2020, 07:50 AM
Updated : 14 July 2020, 07:50 AM

আমার স্কুলের স্মৃতি দিয়েই শুরু করি। আমার মাধ্যমিকের পড়াশোনা টাঈাইলের মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে। তারও পরের বছর ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধ্যাদেশ জারি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসন দিলেন। প্রতিষ্ঠানটি এ বছর শতবর্ষে পদার্পণ করল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা বিষয়ে বিশদ আলোচনায় যাবার আগে শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ও মহৎ শিক্ষকদের বিষয়ে দুয়েকটি কথা বলে নিতে চাই। বিদ্যালয়টি ছিল মুক্তিযুদ্ধের ফসল, তা যেমন এর নামে ছিল, কার্যক্রমেও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্নের একটা নমুনা। ওই বিদ্যালয়ে হিন্দু-মুসলমান মিলিয়ে কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন যাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার যোগ্যতা ছিল। এরকম একজন ছিলেন মফিজুর রহমান। তিনি ইংরেজিতে এম এ করেছিলেন এবং পরে মাদ্রাসা মাধ্যমে কামিল করেছিলেন। দুটো ডিগ্রিতেই তার ফলাফল এতটা ঈর্ষণীয় ছিল, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, স্যার আপনি তো চাইলে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারতেন, আপনি কেন স্কুলের চাকরি বেছে নিলেন? তিনি বললেন, শিক্ষক হিসেবে শিশু ও কিশোর ছাত্রছাত্রীদের মাঝে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সম্পর্কটা আমি মনে মনে লালন করেছি। স্কুলের চাকরিটা আমার ভালবাসার কাজ।

তিনি আমাদের ইংরেজি এবং ইসলামী শিক্ষা পড়াতেন। উনি এত সহজ ও বোধগম্য করে পড়াতেন, ক্লাসের সব পড়া ক্লাসেই শেখা হয়ে যেত। বাড়িতে গিয়ে আর বই খোলার দরকার হতো না। পাঠ্যক্রমের পরে তিনি নানা বিষয়ে আমাদের গল্প শোনাতেন। ওনার ক্লাস আমাদের সকলকে খুব আকর্ষণ করত। এরকম শিক্ষক পেয়েছিলাম বলেই আমার মত অনেকেই শালবন খ্যাত মধুপুর গড় এলাকার অজপাড়াগাঁ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যাপিঠের ছাত্র হবার সুযোগ পেয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। পশ্চিমা দুনিয়ায় চলমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবেচেয়ে পুরনো বিদ্যাপীঠ ইতালির বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (Bologna University) প্রতিষ্ঠা ১০৮৮ সালে। তার ছয়শ বছর আগে ৪২৭ খ্রিস্টাব্দে এই ভারতবর্ষে, যখন বাংলা বিহার-উড়িষ্যা একই জনপদ তখন নালন্দা বিহার যা আজকের নবযাত্রার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নালন্দা বিহার চালু ছিল ১১৯৭ সাল পর্যন্ত।

এখন প্রশ্ন হল বিশ্ববিদ্যালয় কী? আজকের দুনিয়ার প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয় ধ্যান ধারণার পূর্বে কি উচ্চশিক্ষা বা জ্ঞানচর্চার রেওয়াজ ছিল না? সোজাসাপ্টা উত্তর বিস্তর ছিল। সে যুগেও বিজ্ঞানী, দার্শনিক জ্ঞানীগুণী মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে। গ্রিক, দার্শনিকসহ বিভিন্ন সভ্যতার মূলে নানা মনীষীর দৃষ্টান্ত খেয়াল করলে বুঝতে পারব। যদি প্রশ্ন করি সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, লালন শাহ, হযরত মুহম্মদ (সা:), গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নিয়েছিলেন?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিভা তৈরি করে না। প্রতিভা লালনও করে না। বিশ্ববিদ্যালয় বরং কখনও কখনও প্রতিভা ধ্বংস করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মেধা তৈরি করে না। তবে মেধার সমাহার ঘটায়; মেধার লালনও যেমন করে, তেমনি মেধা ধ্বংসও করে।

তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার তাৎপর্য কী? এখানে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার ব্যবস্থা থাকে। এখন আমার প্রশ্ন, কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমাদের দেশের তাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সুযোগ এবং চর্চা কি রয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের পাঠদানই কি শেষ কথা? অবশ্যই না। তাই বলা হয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করেও, বারান্দা দিয়ে ঘুরে আসলেও অনেক কিছু শেখা যায়। এই কথার তাৎপর্য কী?

আদতে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে তরুণদের চোখ খুলে দেওয়ার জায়গা। চিন্তার জগৎ অবারিত করে দেয়ার এক মেলা। একই সঙ্গে স্বপ্নের জগৎ নির্মাণের আর বীজ রোপণ করে দেবার জায়গা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি সেই জায়গায় আছে? তাই যদি থাকবে, তাহলে প্রায়ই কেন পত্রিকায় খবর আসবে, হতাশায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা।

এই পর্যায়ে আমাদের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা আরো একবার বলতে চাই। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের ডান পাশে বড় করে লেখা ছিল, এসো জ্ঞানের সন্ধানে। আর বামপাশে লেখা ছিল, বেরোও দেশের কল্যাণে। এই বাক্য দুটো কেবল কথার কথা ছিল না। আমাদের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সেভাবে অনুপ্রাণিত করতেন।

আমাদের বিদ্যালয়ের ফটকের দুই পাশের দুটি কথার তাৎপর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গেও যায়। আর এটা হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় যোগসূত্র। এখানে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী প্রায়োগিক বিদ্যাও রপ্ত করবেন। এখানে রাষ্ট্র তার প্রয়োজন ও দীক্ষা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবে, পৃষ্টপোষকতা দেবে, রাজস্ব ব্যয় করবে। এখান থেকে রাষ্ট্রের দুটো লাভ। প্রথমোক্ত অর্জন যোগ্য জনশক্তি গড়ে তোলা আর নানাখাতে প্রয়োজনভিত্তিক যেমন সরকার পরিচালনা, কূটনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, সৃষ্টি ও কৃষ্টির নানা স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের কাজে খাটানো। পরোক্ষ অর্জন, বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক পরিচালিত নানা গবেষণালব্ধ ফলাফল রাষ্ট্র তার প্রয়োজনে ব্যবহার করবে, এতে জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে।

আমার প্রশ্ন, আমাদের রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় সেই জায়গায় নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছে কি? আজ যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছর, তেমনি আমাদের স্বাধীনতার অর্ধশত বছরও। বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে নানা হতাশাজনক প্রশ্নের জন্যে দায় কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের একার নয়। রাজনীতিতে গলদ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ও তা থেকে মুক্ত থাকবে না। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী যেভাবে চাইবেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্ত্বশাসিত ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও, বিশ্ববিদ্যালয় অনেকটা সেভাবেই চলবে।

পাশের দেশ মিয়ানমারে যেমন সেনাবাহিনীর মতো পোশাক ও আচার মেনে বিশ্ববিদ্যালয় চলে, আবার গণতান্ত্রিক দেশে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী একই টেবিলে বসে পানাহার করছে, এমন কি চুরুটও টানছে।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ ইদানিং ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা মানুষদের নজরে আসার জন্যে নেতাদের আদলে পোশাক ও আচার রপ্ত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানার্জন যদি শিক্ষার্থীর জন্যে অপ্রয়োজনীয়, অপাংক্তেয় বা অপ্রাসঙ্গিক হয়, তাহলে শেষতক সনদটুকই সার। আর এই ফাঁকটুকুই ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার কবর রচনা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার প্রবর্তন করা হয়েছে। লাভের লক্ষ্য মাথায় রেখে আর যাই হোক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা একটি জাতির মনন ও বিকাশে কার্যকর অবদান রাখতে পারবে না। শিক্ষাকে পণ্য কেনাবেচার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মত জাতীয় বিপর্যয় আর কী হতে পারে?

রাষ্ট্র তার কর্মবাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রূপরেখা দেবে। সেই অনুযায়ী পৃষ্ঠপোষকতা। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের প্রয়োজন মেটাবে। দেখা যায় পড়াশোনা করল প্রকৌশল বিষয়ে; চাকরির বাজারে এমন প্রক্রিয়া, প্রস্তুতি নিয়ে নানা ধাপ পেরিয়ে হয়ে গেল কূটনীতিক। তাহলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে যারা পড়বেন, তারা কি করবেন? অন্যদিকে দেখা গেল পড়াশোনা করল উর্দু, পালি, বাংলা, আরবি বা ইংরেজিতে, চাকরি পেয়ে গেল ব্যাংকে। এই দায় বা গলদ কার? এটা রাষ্ট্রকেই নির্ধারণ করতে হবে। ওইসব বিষয়ে পড়াশোনা করে আসা তরুণদের জন্যেও কর্মসংস্থান থাকতে হবে, প্রয়োজন অনুযায়ী। বিশ্ববিদ্যালয় যখন মেধা ধ্বংস বা বেকার তৈরির কারখানা হয়ে যায়, তার দায় কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, রাষ্ট্রেরও।

ইদানিং আলোচনা শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্যে দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ও প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদদের আমন্ত্রণ করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে এনে শিক্ষা ও গবেষণার মানে অগ্রগতি অর্জন করা। এরকম উদ্যোগে যাবার আগে একটা প্রশ্ন তোলা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষক দুনিয়ার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কেন পড়ছে না? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে ও পরীক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়ন ও সংস্কারের জন্যে তো সদিচ্ছাই যথেষ্ট। এজন্যে আলাদা বাজেট বা প্যাকেজের দরকার নাই।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে দোকানদারী সান্ধ্যকোর্স বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। এটা বন্ধ করতে বাধা কোথায়?

শিক্ষকেরা প্রায়ই গবেষণার জন্যে বাজেট সঙ্কটের কথা বলেন। সেটা যেমন অনেক ক্ষেত্রে সত্য। তবে এটা বড় কোনো বাধা নয়। এই বাধা দুর করার পথও অসম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে আমরা যেমন এর অর্জনের তালিকায় মোটাদাগে অনেক ঘটনা ও অনেক নাম বলতে পারব। তেমনি একটা ঘটনা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। অথচ প্রহসনটা দেখুন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট কেবল ইংরেজি ভাষায়।

আমি এর আগে শিক্ষার প্রায়োগিক দিক নিয়ে বলছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রকাশনা সংস্থা থাকলেও তার প্রকশনা কার্যক্রম যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। একটা অনুবাদ ব্যুরো থাকলেও তার কার্যক্রম প্রায় পাঁচ দশক ধরে শূন্যের কোঠায়। অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দুই নম্বরি, দুর্নীতির তো শেষ নাই। এই তো সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ভর্তি কেলেঙ্কারির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ একাধিক কর্তার নাম প্রকাশ পেলেও উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বিতর্কিতদেরই আবার গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে। তাহলে দায় তো রাজনীতির উপর মহলও এড়াতে পারেন না।

সবচেয়ে অসহ্যকর গলদ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের গবেষণা ও পাঠদানের প্রতি প্রয়োজনীয় মনোযোগের বড়ই অভাব। অর্থ, ক্ষমতা আর গণমাধ্যমের নজর কাড়ার প্রতি আগ্রহের প্রবল ঝোঁকের বশে নানা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, অতিরিক্ত টাকা কামানোর জন্যে নানা ফরমায়েশি কর্মযজ্ঞ, এনজিও এবং কর্পোরেট গোষ্ঠীর নানা কাজ বাগানোসহ এমন সব কাজে আমাদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যস্ত, তাতে তাদের মূল কাজের গলদ কোনো অংশে কম নয়।

তাদের ব্যস্ততা দেখে গ্রাম বাংলার একটা চিত্র আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কোনো গ্রামে গরু বা মহিশ মারা গেলে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে মুচিরা যে যেখানে যে অবস্থায় থাকে সেখান থেকেই হাতে একটা চাকু নিয়ে মরা গরুর চামড়া ছাড়াবার জন্যে দৌড় দেয়। এটা এমন এক প্রতিযোগিতা শেষ মুচিটি যদি মরা গরুর কাছে নাও আসতে পারে অসুবিধা নাই, গরুটি যে ক্ষেতে ফেলা হয়েছিল শেষ মুচিটি যদি তার সঙ্গে থাকা চাকুটি ঐ ক্ষেতে ছুড়ে ফেলতে পারেন, ঐ ক্ষেত থেকে চামড়া নিয়ে সীমানা পাড়ি দেবার আগে, তিনিও সমান ভাগের অধিকারী হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক পদ ও পদবীর লোভে শিক্ষকদের একটা অংশ হরপ্রশাদ শাস্ত্রীর 'তৈল' প্রবন্ধের তাৎপর্য এমনভাবে রপ্ত করেছেন, নানা সরকারের সময়ে ওপর মহল ওই তেল ভালই গ্রহণ করেছেন। ধন্য হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তবে আমাদের চাওয়া ভিন্ন। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটা ভৌত অবকাঠামো হবে না। এটা একটা আধুনিক কার্যকর রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

একটি রাষ্ট্র কেমন চলছে- তার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা দেখে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়। রাষ্ট্রপ্রধান যার আচার্য। তা এমনি এমনি না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাঁচানোর জন্যে এবং এগুলোকে স্ব ধারণায় ফিরিয়ে আনতে হলে উদ্যোগটা সরকারকেই নিতে হবে। এজন্যে সংস্কার কমিশন গঠন করা যেতে পারে। দরকার এখন সংস্কার কমিশনের অধীনে দেশি-বিদেশি বিশেজ্ঞদের সমন্বয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করে দলকানা দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষ সাধনে উদ্যোগ নেয়া।

শেষ করার আগে আহমদ ছফা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে একটু বলতে চাই। আহমদ ছফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি পিএইচডি অসমাপ্ত রেখে লেখালেখিতে মনোযোগী হয়েছিলেন। তার ফলে আমরা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই পেয়েছি। তার মধ্যে 'গাভী বিত্তান্ত' বইটির কথা উল্লেখ করতে পারি। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপজীব্য করে লেখা একটি উপন্যাস। বইটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের ধারণা থাকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুটা মঙ্গল হতে পারে।