Published : 17 Jul 2011, 07:13 PM
উপস্থিত পাঠকবৃন্দ,
শুভেচ্ছা নিন।
আপনারা আমার গত ইন্টারভিউটি পড়েছেন এবং ভালো-মন্দ মতামত জানিয়েছেন, এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ, থ্যাংক মিঁউ। আপনারা পরষ্পরকে বলেন থ্যাংক ইউ, আমরা বিড়ালরা বলি থ্যাংক মিঁউ। সুতরাং, থ্যাংক মিঁউ।
বাংলাদেশে পশুপ্রেমী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তাঁরা পশুদের ভালোবাসেন। তবে এই বৃদ্ধিটা এখনও কুকুর সমাজের জন্য প্রযোজ্য। আমার বন্ধু নেড়ি কুকুর শুধু দেশে ভাষণ দিচ্ছেন না, তিনি এখন বিদেশেও ভাষণ দিচ্ছেন। তিনি ফোবানা সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
কিন্তু মেনি বিড়ালের ভাগ্যে এমনটি ঘটেনি। দেশি বিড়াল আমেরিকায় যেতে পারে না। তাঁদেরকে বাংলাদেশেই থাকতে হয়। আমেরিকায় যেমন মানুষ কুকুরকে ভালোবাসে, তেমনই বিড়ালকেও ভালোবাসে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা বিড়ালকে গুরুত্ব দেন। সেখানে বিড়ালরাও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে থাকতে পারে।
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বিড়ালের নাম ছিল ট্যাবি। বিল ক্লিনটনের বিড়াল ছিল দুইটি। এগুলোর নাম ছিল সকস ও বাডি। জর্জ জুনিয়ার বুশের ৩টি বিড়াল ছিল। কাউবয় নামের বিড়ালটি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় বুশ খুব দুঃখ পেয়েছিলেন।এছাড়া প্রেসিডেন্ট রেগ্যান, জিমি কার্টার, কেনেডি, রুজভেল্টসহ অনেক আমেরিকান প্রেসিডেন্টেরই এক বা একাধিক বিড়াল ছিল। সুতরাং বিড়ালকে অবহেলা করার কিছু নেই। কিন্তু বিড়ালকে অবহেলা করা হয়। ফোবানা সম্মেলনে গিয়ে নেড়ি কুকুর বক্তৃতা দিতে পারলেও মেনি বিড়াল পারে না। সুতরাং আমি ভেবেছিলাম, অন্তত দেশে কোনো একটি সম্মেলনে আমাকে বক্তৃতা দিতে ডাকা হবে। দুঃখের বিষয়, সে সুযোগও ঘটেনি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের বিড়ালপ্রীতি থাকলেও বাংলাদেশের নেতাদের বিড়ালপ্রীতি নেই। খালেদা জিয়ার বাসা থেকে অনেক কিছু উদ্ধার হলেও কোনো বিড়াল উদ্ধার হয়নি। শেখ হাসিনার বিড়াল আছে কি না সে বিষয়েও আমরা কিছু জানতে পারিনি। তবে আমি এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের বিড়ালপ্রীতির কথা শুনিয়ে দিলাম। আমেরিকাকে নকল করার অভ্যাস আছে আমাদের দেশের, সুতরাং ভবিষ্যতে বিড়ালের কথার কদরও এই দেশে বাড়তে পারে। আমি যদি ছাত্রলীগের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেতাম, তাহলে কী বলতাম, সেটাই এখন ভাবছি।
ছাত্ররাজনীতিতে নতুনত্ব প্রয়োজন
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। আপনারা লক্ষ করে দেখবেন ইদানীং ছাত্র সমাজের একটা বড় অংশ আর ছাত্র রাজনীতিতে উৎসাহিত নয়। আমি বিড়াল হিসেবে এর কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারব না, কিন্তু আমার মনে হয় ক্যাম্পাসে এখন সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি করে এমন ছাত্রদের সংখ্যা মোট ছাত্র সংখ্যার খুব ক্ষুদ্র একটি অংশ হবে। দেশে এখন অর্ধশতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, উচ্চবিত্তের পাশাপাশি উচ্চমধ্যবিত্ত এমনকি কখনো কখনো মধ্যবিত্তের সন্তানরাও এসব বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ছে। সেখানে ছাত্র রাজনীতি নেই, পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে আছে এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ। এসব ক্যাম্পাসে আছে ডিবেট ক্লাব, পরিবেশ ক্লাব, মিডিয়া ক্লাব, সোশ্যাল ক্লাব। একই ধরণের সংগঠন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আছে, সংখ্যা ও গুরুত্বে সেগুলোর কথাও বলতে হবে আমাকে, কিন্তু তারপরও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাধান্য বিস্তারকারী সংগঠন বলতেই বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড় সংগঠন।
এ দেশে ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য আছে, ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচারি সরকারগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব ছিল।
এখন সেই গুরুত্ব ক্রমেই কমে আসছে। ভালো হোক, মন্দ হোক, ৯০ সালের পরে মাঝের দুই বছর ছাড়া বাকি সময়টুকু এদেশে ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। সেই ভোটের রাজনীতিতে ছাত্র সংগঠনগুলো মূল দলকে বড় আকারের কোনো সাহায্য করতে পারেনি।
আপনারা ভোটাররা ভালো বলতে পারবেন, কিন্তু একটি বিড়াল হিসেবে আমি কথাবার্তা শুনে যা বুঝেছি, তাতে এ কথা পরিস্কার যে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলকে দেখে কেউ নৌকা কিংবা ধানের শীষে ভোট দেয় না। সুতরাং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ছাত্র সংগঠনের তেমন বড় ভুমিকা আজকাল নেই।
বরং ক্ষমতা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনের ভুমিকা আছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে প্রথম যে কেলেংকারির মুখে পড়ে তাঁর নাম ছাত্রলীগ। সারা বাংলাদেশে তাঁদের মারামারি কাটাকাটি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বিব্রত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগের এসব ভুমিকা বিরোধী পক্ষের প্রচারণায় বড় একটি হাতিয়ার হবে। যদিও বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা যে সুযোগ পেলে এর চেয়ে কম কিছু করতেন, তা আমি বিড়াল হিসেবে বিশ্বাস করি না। সব বিড়ালের লেজ এক না হলেও সব রসুনের গোড়া এক।
ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তনের বিষয়টুকু অনেক আগেই ধারণা করতে পেরেছেন শেখ হাসিনা। অতীতে তিনি কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন। একটা বড় উদ্যোগ ছাত্রলীগ নেতাদের বয়েসসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া। কিন্তু তাঁর প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়া এই কাজটি করেন নি। ছাত্রনেতা হিসেবে তাঁর পছন্দ আদু ভাইদের। যেকোনো বয়েসে এবং পেশায় থেকেও ছাত্রদলের নেতা হওয়া যায়। আগামীকাল যদি শোনা যায় যে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা কিংবা ব্রিগেডিয়ার (অব) হান্নান শাহ ছাত্রদলের সভাপতি হয়ে গেছেন, তাহলে আমি অন্তত আশ্চর্য হব না।
বয়েসসীমার মতোই শেখ হাসিনা ছাত্রলীগে আরো কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারেন। তিনি সেটি করলে রাজনৈতিক ভাবে তাঁর জন্য সেটি সুনামের বিষয় হবে, এবং একই সঙ্গে ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী ক্ষমতার লোভে ও গরিমায় অন্ধ, তাঁদেরকেও নিয়ন্ত্রন করা সহজ হবে। একই কাজ অবশ্য খালেদা জিয়াও করতে পারেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে তিনি এই ভাষণ শুনবেন। তিনি সাধারণত কিছু শোনার আগেই 'না' বলে দিতে পারেন।
আমি এগুলো নিয়েই ভাবছিলাম। আমার ভাবনাগুলোকে একটি তালিকা করে ফেলি এখন।
সাংগঠনিক ক্যালেন্ডার তৈরি:
ছাত্রনেতার বয়েসসীমার মতো, পদেরও মেয়াদ নির্ধারণ করে দিতে পারে মূলদল। একজন সভাপতি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সভাপতি হবেন। পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত সভাপতি থাকার যে ধারা এখন আমাদের দেশের রাজনীতিতে আছে, সেটিই সমস্যার একটি বড় কারণ। একবার কেউ সভাপতি কি সাধারণ সম্পাদক হয়ে পড়ার পরে আর সহজে সেই পদ ছাড়তে চান না, তখন পেছনে লাইন লেগে যায়। সেই লাইন থেকে তৈরি হয় নানা দল উপদল। সেই দল উপদলগুলো তখন নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, সেই ছবি পত্রিকায় চলে আসে এবং মূল দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কার্যকাল হতে পারে একবছর বা দুইবছরের। একবছর হওয়াই ভালো। সেটি শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী হবে। ১ জুলাই থেকে সাংগঠনিক বর্ষ শুরু হবে এবং সেটি পরের বছরের ৩০ জুন স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ হয়ে যাবে। কমিটির কেউই একই পদে দুইবার থাকতে পারবেন না। এই প্রক্রিয়া কেন্দ্র থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত চলবে।
কাউন্সিল অনুষ্ঠান সময়সাপেক্ষ, ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। রাজনৈতিক অবস্থার কারণেও অনেক সময় কাউন্সিল করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে শুধু সাংগঠনিক জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে কেন্দ্রে একটি গোপন ভোটাভুটিতে পরবর্তী নেতা নির্বাচিত হবেন।
সভাপতি যখন নির্বাচিত হবেন তিনি একবছর আগেই নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ এবার নির্বাচিত করা হবে ২০১২ সালের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। 'পরবর্তী সভাপতি' ও 'পরবর্তী সম্পাদক' নামেই দুইটি পদ নিয়ে তাঁরা কমিটির অন্তর্ভূক্ত থাকবেন। তাঁরা আগামী একবছর নিজেরা নেতৃত্ব দেওয়ার আগে চলতি কমিটিতে থেকে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সহায়তা করবেন। এতে করে তাঁদের অভিজ্ঞতা বাড়বে।
একবছর আগে নেতা নির্বাচিত করার সুবিধা শুধু এই প্রশিক্ষন ও অভিজ্ঞতা অর্জনে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সুবিধা হচ্ছে চলতি নেতা চাইলেও তাঁর পদ আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে পারবেন না। তিনি বলতে পারবেন না যেহেতু কাউন্সিল করা যায়নি, তাই বাধ্য হয়ে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছি। কারণ পরের বছর ১লা জুলাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরের সভাপতি ও সম্পাদক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে যাবেন।
তাই যে নেতা সংগঠনের দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের কাজ হবে পরের বছরের নয়, আরো একবছর পরের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। যেহেতু তিনি নিজে ক্ষমতায় থাকতে পারবেনই না, সুতরাং সেই নির্বাচন করতে তাঁর কোনো সমস্যা হবে না। এভাবে ২০১১ সালের মেয়াদে নির্বাচিতরা ২০১৩ সালের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং তাঁদের মেয়াদে ২০১৫ সালের নেতাদের নির্বাচিত করবেন। তাঁরা ক্ষমতা ছেড়ে দিবেন ২০১৪ সালের নেতাদের কাছে, যে নেতারা ২০১২ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এই নির্বাচনের তারিখও নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। সেই তারিখটা হতে পারে জানুয়ারি মাসের কোনো একটি নির্দিষ্ট তারিখ। এতে করে দায়িত্ববান সভাপতির মেয়াদের মধ্যখানে হবে বিষয়টি। তিনি তখন অনায়াসে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় নির্বাচনে যারা ভোট দেবেন, তাঁদের ইউনিটগুলোর নির্বাচন হতে পারে নভেম্বরে অথবা ডিসেম্বরে। তারিখ এখানেও নির্দিষ্ট করা থাকবে, প্রতিবছর একই তারিখে নির্বাচন হবে।
নতুন দিনের কর্মসূচি:
ছাত্ররাজনীতিবিদদের কাজ কী? আপনারা হয়তো বলবেন, ক্যাম্পাসে দিনে রাতের যেকোনো সময়ে মিছিল করা, প্রতিপক্ষকে মারধর করা, দলীয় শিক্ষকদের পদলেহন এবং ক্যাম্পাসে বাকি খাওয়া। এদের মধ্যে অনেকেই টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজ বলেও আপনারা মন্তব্য করতে পারেন।
কিন্তু আমি বিড়াল ভেবে দেখলাম, এসব হচ্ছে খই ভাজা কাজ। বাংলায় প্রবাদ আছে- নেই কাজ তো খই ভাজ। ছাত্রনেতাদের হাতে কোনো কাজ নেই। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লেজুড় সংগঠনের। কারণ অভিভাবক মূল দল ক্ষমতায়। সুতরাং সরকারের সব পদক্ষেপেই তাঁদেরকে জ্বি হুজুর বলতে হবে। ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই যে ক্যাম্পাসের কোনো কাজে তাঁরা লাগবেন। আজকাল প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের পরেই মানে মানে হল থেকে কেটে পড়েন এবং পরবর্তী পাঁচবছর বিড়ালের মতোই মিঁউ মিঁউ করে কোনো রকমে টিকে থাকেন। অতএব, প্রতিপক্ষকে জব্দ করার কাজটাও তেমন করতে হয় না এদের।
সুতরাং নতুন দিনের ছাত্র রাজনীতিতে এসব ইউনিটগুলোকে মূল কাজে ফেরত আনতে হবে। এ নিয়ে নির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষনা করা যেতে পারে। প্রতিটি ইউনিট নিয়মিত পাঠচক্র করতে পারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে, সেটি দেশীয় হোক কি বিদেশী হোক, সেটা নিয়ে মুক্ত আলোচনা, সেমিনার কিংবা বিতর্কের আয়োজন করতে পারে। তাঁদের মূল দলের জনমুখি কর্মসূচিগুলোর কথা বিস্তারিত তথ্যের মাধ্যমে সাধারণ ছাত্রদের কাছে পৌঁছে সমর্থন আদায়ের কর্মসূচি নিতে পারে। এমনকি নিজের দলের লোকদেরকে কিরিচ দিয়ে না কুপিয়ে বরং ক্যাম্পাসের ঝোঁপঝাড় সাফ করে ক্যাম্পাসকে মশকমুক্ত করার কর্মসূচি নিতে পারে।
সংগঠনগুলোর ইউনিট কমিটিগুলো এসব কাজ এমনিতে করবে না। সেগুলো করার জন্য তাঁদেরকে প্রণোদনা দিতে হবে। প্রতিটি ভালো কাজের জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকতে পারে। এমনকি মিছিল করার জন্যও পয়েন্ট থাকতে পারে। সেই পয়েন্ট অনুসারে তাঁদের সারাবছরের কাজকর্ম অনুসারে দেশ সেরা ইউনিট, বিভাগ সেরা ইউনিট কিংবা থানার সেরা ইউনিট এরকম করে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে। কাজটি কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
ভবিষ্যতে যারা কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাঁরা ইউনিট হিসেবে নিজেদের এসব পুরস্কারের কথা ফলাও করে প্রচার করে নির্বাচন করতে পারেন। অন্যরা তখন বুঝতে পারবে যে অমুক নেতা যেহেতু তাঁর ইউনিটকে দেশের অথবা বিভাগের চ্যাম্পিয়ান অথবা রানার্সআপ করতে পেরেছিলেন, তিনি কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবেও ভালো করবেন।
সাংগঠনিক পরিবর্তন:
একটি ছাত্রসংগঠনের ওয়ার্ড কমিটি কিংবা পাড়া কমিটি থাকার প্রয়োজনীয়তা আমি বিড়াল হিসেবে বুঝতে পারি না। ছাত্ররা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করবেন, তাঁদের ইউনিট হবে ক্যাম্পাস ভিত্তিক। এর বাইরে কর্মসূচি সমন্বয় করার জন্য উপজেলা এবং জেলা কমিটি থাকতে পারে। কিন্তু এর নিচে তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রসংগঠনের ইউনিয়ন-ওয়ার্ড-পাড়ামহল্লা কমিটি থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। এসব ক্ষুদ্র ইউনিটগুলো সংগঠনের জন্য সবসময় ভালো ফল বয়ে আনে না। অধিকাংশ সময়েই পাড়ার মারামারির দায় দলগত ভাবে নিতে হয়।
ছাত্র সংগঠনের নিয়মিত সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করা উচিত। সদস্যদের একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ থাকা প্রয়োজন। আজকাল কম্পিউটারের মাধ্যমে সেটি করা সহজ। সদস্যদের নাম-ঠিকানা-রোল নাম্বার থেকে শুরু করে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ এবং ব্লাডগ্রুপ সহ অনেক কিছুই থাকতে পারে ডাটাবেজে। সেক্ষেত্রে সারা বাংলাদেশে বড় কর্মসূচি পালন সহজ হবে। নেতা নির্বাচনে প্রকৃত ভোটারদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
কিন্তু ঘন্টা বাঁধবে কে?
বড় দলগুলোকে ভাবতে হবে বড় করে। ব্যক্তি তৈরীর রিপোর্ট লেখালেখি বাদ দিয়ে তাঁদেরকে মনোযোগ দিতে হবে দলের ভাবমূর্তি তৈরির কাজে।
এ চিন্তা যে বড় দলগুলোর কেউ করেন না, তা নয়। তবে তাঁরা বলতে ভয় পান। নতুন কিছু বলা মানেই নিজেকে সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কারপন্থী হওয়া মানে নিজের রাজনীতির কবর খোঁড়া। সুতরাং বিড়ালের গলায় কেউ ঘন্টা বাঁধতে এগিয়ে আসে না।
আমি নিজে বিড়াল। আমার ঘন্টা বাঁধার কোনো দায় নেই। আমার রাজনৈতিক উচ্চাশাও নেই। কিন্তু আমার কথা শোনার কোনো মানুষও নেই। সুতরাং লেখাকে আলাদা করতে নেড়ি কুকুরকে নকল করে আমাকেও নিজের ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে। আমি নিজের ঘন্টা নিজেই বাজিয়ে যেতে পারি। ডিং ডং, ডিং ডং।
আমার এই দীর্ঘ ইন্টারভিউ শোনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। থ্যাংক মিঁউ।