Published : 03 Jun 2020, 04:56 PM
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ ২০২০ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ধাপে ধাপে এই বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সাথে সংযুক্ত রাখার নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশক্রমে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে তাদের পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে যা এখনও চলমান।
অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নতুন নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনেকদিন আগে থেকেই তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী – অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স চালু করেছে। ইউটিউবে শিক্ষামূলক চ্যানেল আছে বেশকিছু যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হয়। যেখানে বাংলাদেশের অনেকে এ ধরনের অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। তবে, ব্যপকতা আগে কম ছিল।
বৈশ্বিক এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে একদম মাঠ পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তির এই ব্যবহার কিছুদিন পূর্বেও অভাবনীয় ছিল। সরকারি কলেজসমূহও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার করে, গুগল ক্লাসরুম, জুম অ্যাপ এবং অনেকক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাথে সহজতর উপায়ে সংযুক্ত হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুককে ব্যবহার করে তাদের উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
শিক্ষা কোন স্থবির বিষয় নয়। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষা প্রদান ও গ্রহণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটে। শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাই সময়ের সাথে সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। তথ্য প্রযুক্তির যুগে যখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য শিক্ষকগণ ই-লার্নিং এর উপর জোর দিচ্ছেন তখন শিক্ষাক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের আভাস পাই। যা অবশ্যই ইতিবাচক।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা আবশ্যক। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক দিন আগে থেকেই টি কিউ আই (টিচিং কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট) প্রকল্পের আওতায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী আইসিটি ট্রেনিং পরিচালিত হয়ে আসছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। অনেক শিক্ষকই নিজ উদ্যোগে ওবিএস, দ্য ভিঞ্চি রিজল্ভ, এডোবি প্রিমিয়ার প্রো, কাইন মাস্টারসহ (স্মার্ট ফোনে ব্যবহার উপযোগী) নতুন নতুন সফটওয়্যারের ব্যবহার শিখে নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। বিষয়টি প্রশংসাযোগ্য।
জুম অ্যাপ ব্যবহার করে অল্প সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীর ক্লাস নেওয়া সুবিধাজনক হলেও বেশীরভাগক্ষেত্রে এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এত বড় সংখ্যার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুবিধার জন্য বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করে কলেজগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্লাস লেকচার আপলোড করা হচ্ছে। ফেসবুকে কিছু অনলাইন ক্লাসের পেজও খোলা হয়েছে।
ক্লাস রেকর্ড করার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যাবোধ করলেও ইতোমধ্যে সেই অবস্থা তারা কাটিয়ে উঠেছেন। তবুও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যেমন, ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি সংযোগ ঘটার বিষয়টি অনলাইনে কনটেন্ট আপলোড করলে হয় না। কোনো ভিডিও কনটেন্টে কয়েক সেকেন্ডের বিরতিও লম্বা বিরতি বলে মনে হয়। এই সময়ের ব্যবধানটির সাথে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লেগেছে শিক্ষকদের। আরেকটি সমস্যা হলো- শিক্ষার্থীগণ ঠিকমতো ক্লাসগুলো দেখছে কিনা সেটি নিশ্চিত করা কঠিন। এদিকে জুম অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল হলে লেকচার ঠিকমতো শুনতে পায় না শিক্ষার্থীরা।
তারপরেও তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে প্রাথমিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে বাংলাদেশের ই-লার্নিং কার্যক্রম ভবিষ্যতের ক্লাসরুমভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কার্যকরভাবেই চালু থাকবে বলেই মনে করি। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের অনলাইন বা অফলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইন্টারনেট ভাতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান জরুরি। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট সংযুক্তি মজবুত করা আবশ্যক। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এই অল্প সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে এগিয়ে যাবে সে আশাই রাখি।