Published : 01 Jun 2020, 10:12 PM
প্রিয় বিশ্ববাসী,
করোনাভাইরাস আমাদের যে বাস্তবতায় নিয়ে এসেছে, তাতে, "বর্তমান বাস্তবতায় অবশ্যই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সকল রাষ্ট্রসমূহকে বিবেচনায় নিতে হবে যে বৈশ্বিক এই সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিক সম্মিলিত পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই।" (বিশ্ববাসীর কাছে খোলা চিঠি-০২) শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নয়, জাতিসংঘসহ সকল সংস্থাকেই যুক্ত হওয়া উচিত ছিল এই বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায়।
"কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্ব যে মহাসংকটকাল পার করছে, তা প্রাথমিকভাবে একটি ভাইরাস বা একটি রোগের সাথে সংগ্রাম হলেও, শেষ পর্যন্ত এই সংগ্রাম রূপ নেবে একটি অর্থনৈতিক সংগ্রামে, যার শুরু ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এই সংগ্রাম ক্রমাগত ঘণীভূত হতে থাকবে এবং বিশ্বব্যাপী নেমে আসবে এক অর্থনৈতিক মহাবিপর্যয়।"- (বিশ্ববাসীর কাছে খোলা চিঠি) এই অর্থনৈতিক সংগ্রামের আছে দুটি দিক;
এক. বিশ্বব্যাপী স্থবির হয়ে যাওয়া বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড;
দুই. করোনা মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। আবার করোনাভাইরাস বা রোগের সাথে সংগ্রামেও আছে দুটি দিক;
ক. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা- ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, হাসপাতাল, ওষুধ, বিভিন্ন কারিগরি সুবিধা ইত্যাদি;
খ. রোগসংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যে লকডাউনের ব্যবস্থা, যা বিবিধ প্রশাসনিক কাজের মহা এক যজ্ঞ, বিশ্বের ইতিহাসে একটি ভাইরাস বা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য এত প্রশাসনিক পদক্ষেপ- নিষেধাজ্ঞা, লকডাউন, কার্ফু ইত্যাদি কখনো গ্রহণ করতে হয়নি। একটি রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রায় সারা বিশ্বকে, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তি পর্যায়, যুক্ত হতে, অতীতে আর কখনো প্রয়োজন পড়েনি। তবে এই যুক্ত হওয়ার মধ্যে একটি রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ যুক্ততা শুধু নয়, বৈশ্বিকভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ক্ষেত্র বিশেষে আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুক্ততার প্রয়োজন ছিল, হওয়া উচিত ছিল সম্মিলিত একাত্মতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক তা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ, চিরায়ত প্রাতিষ্ঠানিক বিবেচনায়, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর নেতৃত্ব দেবে স্বাস্থ্য বিভাগ–এটাই স্বাভাবিক। আর সে কারণে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেখি সক্রিয় ভূমিকায়, এই সংস্থার যথাযথ ভূমিকা নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সংগঠিত করেছে। উহানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে একে পর্বেক্ষণে রেখেছে এবং ৩০ জানুয়ারি ২০২০, বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করে এবং করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা ২০ নির্দেশনা প্রকাশ করে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে পুরো বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। এই নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোঁয়া। যথাযথ তাপে ও ভালোমত রান্না করা। হাঁচি ও কাশি দিলে অবশ্যই টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখা। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর হাত ধুতে ফেলা। হাতে গ্লাভস না পরে বা নিজে সুরক্ষিত না থেকে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির মুখ ও দেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা। জ্বর-সর্দি অনুভূত হলে যে কোনো ভ্রমণ বাতিল করা, পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও ওষুধ খাওয়া। ইত্যাদি। ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ইস্যুতে স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব, করণীয় ও অধিকারসহ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরমধ্যে প্রথম ১৫টি স্বাস্থ্য সেবার ও ব্যবস্থার পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের অধিকার। শেষ ১০টি স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব।
১৫ এপ্রিল ২০২০ তারিখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে প্রতিক্রিয়ায় তাদের 'প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ' হয়েছে এমন মন্তব্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প বিশ্ব সংস্থাকে অর্থায়ন স্থগিত করে দেয়। উল্লেখ্য, এককভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে সবচেয়ে বড় অঙ্কের অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর এই তহবিলে যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৪০ কোটি ডলার- যা ছিল সংস্থাটির বার্ষিক বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯ মে ২০২০ তারিখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৩তম বার্ষিক সমাবেশ ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির (ডব্লিউএইচএ) অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সংস্থার বার্ষিক সমাবেশ ডব্লিউএইচও ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাজুক চিত্রটা সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে রাজি হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অধিকাংশ সদস্য দেশ। 'কোভিড-১৯ সাড়াদান' শীর্ষক প্রস্তাবটিতে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকান ইউনিয়নের দেশ মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি দেশ সমর্থন দিয়েছে।
যখন অনেক দেশই লকডাউন শিথিলের কথা বিবেচনায় আনে, তখন ০৮ মে ২০২০ তারিখে লকডাউন তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে সব দেশকে ছয়টি পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এসব শর্ত পূরণ হলেই কেবল লকডাউন তুলে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে সংস্থাটি। পরামর্শগুলো হলো:
১. রোগীর সংখ্যা কমতে থাকা ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসা।
২. প্রত্যেক রোগী চিহ্নিতপূর্বক পৃথকীকরণ, পরীক্ষা ও চিকিৎসা করা এবং রোগীর সংস্পর্শে আসা সকল ব্যক্তিকে শনাক্ত করার সক্ষমতা স্বাস্থ্যব্যবস্থার থাকা।
৩. স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে আসা।
৪. কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্য যেসব জায়গায় মানুসের যাতায়াত, সেসব স্থানে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিশ্চিতকরণ।
৫. বিদেশফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকা।
৬. লকডাউন শিথিল করার পর নতুন করে স্বাভাবিক অবস্থার সাথে সবাইকে সংশ্লিষ্ট করতে এবং এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ক্ষমতায়নের দিকে সচেতন থাকা।
আগেই উল্লেখ করেছি, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ, চিরায়ত প্রাতিষ্ঠানিক বিবেচনায়, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এর নেতৃত্ব দেবে স্বাস্থ্য বিভাগ, এটাই স্বাভাবিক। সে কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক ধরনের কর্মতৎপরতা লক্ষ্য করি। ভুলত্রুটি, অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগ, যাই থাকুক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার মত করে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু এমন একটি বৈশ্বিক মহাসংকট মোকাবেলায় শুধুমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মতৎপরতাই কি যথেষ্ট ছিল? জাতিসংঘ, ইউএনইও, এফএও, ইউএনডিপি, ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ, এমন কি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কি কোনও ভূমিকার দরকার ছিল না, যেখানে, এই মহাসংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের বাইরে, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্যের রয়েছে অনেক বড় ভূমিকা? পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে বর্তমান বাস্তবতায় এই সকল প্রতিষ্ঠানের সহায়ক ভূমিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চেয়ে কম তো নয়ই, ক্ষেত্রে বিশেষে বেশিই হতে পারত।
এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যানে যা বলে, তাতে ধনী দেশসমূহ করোনাভাইরাসে অধিক আক্রান্ত। কিন্তু এর বিপরীতে এটি হয়নি যে গরীব দেশসমূহ নিরাপদ- গরীব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবে না। ২৬ মে ২০২০ তারিখের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিবেচনায় আনি, তাহলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শীর্ষ ৫০টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪টি দেশকে পাব, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, যে দেশের নাগরিকের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় (নমিন্যাল) ৩ হাজার ডলারের নিচে। বাৎসরিক মাথাপিছু আয় (নমিন্যাল) ৫ হাজার ডলারের নিচে ধরলে এই ৪টি দেশের সাথে আরও ৪টি দেশ যুক্ত হবে- ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন, ফিলিপাইন এবং মিশর। আমরা ধরে নিতে পারি এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শীর্ষ ৫০টি দেশের মধ্যে মাত্র ৮টি দেশ দুর্বল অর্থনীতির দেশ, বাকি দেশসমূহের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশসমূহ এবং আর্থিকভাবে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দেশসমূহ রয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির দেশেও যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। সাধারণত দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলি শুধু অর্থনৈতিকভাবেই দুর্বল হয় না, দুর্বল হয়ে থাকে অনেক ক্ষেত্রেই, যেমন- স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সক্ষমতা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, উদ্ভাবনী চিন্তা ইত্যাদি। আর তাই বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে থাকা দেশগুলি যত বেশি আক্রান্ত হবে, তত বেশি জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দায় বাড়াতে হবে। বলা যায়, বাড়ানো উচিৎ ছিল আরও আগে থেকেই।
পূর্ণ লকডাউনের ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের জন্য বড় একটি সংকট হচ্ছে আর্থিক সঙ্গতি। পূর্ণমাত্রায় লকডাউন পালনে আপাত আর্থিক সংকট না থাকলেও, অর্থাৎ লকডাউন চলাকালীন সামর্থ্যহীন সকল জনগণের দায়দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের থাকলেও, ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কথা ভেবে অনেক দেশই পূর্ণমাত্রায় লকডাউনের দিকে যেতে পাচ্ছে না। আবার সামর্থ্যবান দেশের ক্ষেত্রেও যা ঘটেছে বা ঘটছে, তা হল, ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং প্রভাবকে প্রাধাণ্য দিতে কোন কোন দেশ প্রথমেই লকডাউনে আসতে গড়িমসি করেছে, আবার কোন কোন দেশ করোনা-নিয়ন্ত্রণে না আসার আগেই লকডাউনকে শিথিল করছে।
সময়ে সময়ে লকডাউনের বিপরীতে বিভিন্ন তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। প্রথমে লকডাউনের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে হার্ড ইমিউনিটিকে, এরপর জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন- জীবিকা না থাকলে জীবন কীভাবে চলবে? আর এখন এ বাক্যটিকে জোরেসোরেই প্রচার করা হচ্ছে, তা হল, ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত করোনা যাবে না, করোনাভাইরাস নিয়েই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে। যার অর্থ হল করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া এবং একে নিয়ন্ত্রণের ভার ভবিতব্যের উপর ছেড়ে দেওয়া। যাদের অর্থের বাইরে আর কোন আরাধ্য নেই, অর্থই সকল শক্তির উৎস মনে করেন, তারাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তত্ত্ব উপস্থাপন করে করোনাভাইরাস নিয়েই জীবনযাপনের পক্ষে সম্মতি উৎপাদনের চেষ্টা করছেন।
"অনেকের মনেই প্রশ্ন, করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ না করে, অর্থনীতিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া কি এতটাই জরুরি ছিল? আমরা চাইলে কি বৈশ্বিক সম্মিলিত উদ্যোগে নির্দিষ্ট সময়ে, ধরে নেয়া যাক ৩ অথবা ৪ মাসের মধ্যে এই ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না? আমাদের বিশ্বনেতারা কি চেষ্টা করেছেন সমন্বিত উদ্যোগ এবং প্রায় অভিন্ন দিকনির্দেশনার মধ্যে দিয়ে এই বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলার? … করোনাকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্বব্যাপী পূর্ণ-লকডাউন এবং মৃত্যুর হার কমাতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদক্ষেপের বিকল্প নেই। হতে পারে তা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে" (বিশ্ববাসীর কাছে খোলা চিঠি)।- দিন দিন পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে, হতে পারে তা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নয়, হতে হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এমন একটি মহাসংকটকালে জাতিসংঘ নিরব ভূমিকা পালিন করছে। ১৯ মে ২০২০ তারিখয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভার্চুয়াল সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, কিছু দেশ করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া পরামর্শ উপেক্ষা করায় এখন পুরো বিশ্বকেই চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। সম্মেলনে আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, 'একেক দেশ একেক পথে হেঁটেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিপরীত কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে, যার চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের সবাইকে।' 'করোনাভাইরাসের এই মহামারি বিশ্ববাসীর জন্য একটি 'জেগে ওঠার ডাক'।' সংকট মোকাবিলায় বিশ্বকে আরও একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।'
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে এই মহাসংকট থেকে মুক্ত হতে বিশ্বকে একাতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়, জাতিসংঘের মহাসচিব উপলব্ধি করেছেন, বক্তব্যে বলেছেন কিন্তু কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এমন কি বিপরীত কৌশল বলতে কী বোঝায় এবং কোন কোন দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ উপেক্ষা করেছে, কোন কিছুই বিস্তারিত বলেননি তিনি। এ নিয়ে কোন রিপোর্টও প্রকাশ করেনি জাতিসংঘ। জাতিসংঘ কোভিড-১৯ ইস্যুতে কোন সভাও আহ্বান করেনি। ভার্চুয়্যাল একটি সভা হতেই পারত নিরাপত্তা পরিষদের। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে টক্কর লাগার চাইতেও করোনা ইস্যু অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের নিরাপত্তা বিবেচনায়। এমনকি ভার্চুয়ালি হতে পারত সাধারণ পরিষদেরও একটি বিশেষ সভা।
যেহেতু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুধু একটি ভাইরাস বা রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম নয়, তাই সাংগ্রামের কর্মীবাহিনী শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী নন, কর্মীবাহিনীতে রয়েছেন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, আবাসন, অর্থ, বাণিজ্য প্রভৃতি বিভাগের কর্মী তাই আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে পর্যবেক্ষণ এবং পরামর্শক হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপর ছেড়ে দিয়ে অন্যরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এর কোন বাস্তব প্রেক্ষাপট বর্তমান নেই। অবিলম্বে জাতিসংঘকে করোনা নিয়ন্ত্রণে শুধু পর্যবেক্ষণ এবং পরামর্শক হিসেবেই নয়, কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে অন্যান্য সকল সংস্থাসহ সক্রিয় হতে হবে। বর্তমানে যখন দেখা যাচ্ছে যে শিশুরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে, তখন ইউনিসেফের বসে থাকার আর কোন সুযোগ থাকছে না।
ইউএনইও-কে ভাবতে হবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির সাথে কোভিড-১৯ এর কোনও সম্পর্ক আছে কি না? কোন কোন কর্মকাণ্ড প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ? আরও অনেক বিষয় নিয়ে ইউএনইও-কে এখন থেকেই সক্রিয় থাকাটা জরুরী। একইভাবে জরুরী সক্রিয় থাকা এফএও-কে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যদি কৃষিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে এফএও-কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন ইউএনএইচসিআর? কারণ- বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শহরে রয়েছে অসংখ্য ঘরহীন মানুষ। এরা সকলেই রয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে। এই সকল ঘরহীন মানুষের সাময়িক বসবাসের জন্য বিশেষ আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলার অনিবার্যতাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই- বলা চলে সাময়িক সময়ের জন্য এরাও উদ্বাস্তু। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যত পদক্ষেপ, প্রতিটি বাস্তবায়নে প্রয়োজন কাড়িকাড়ি অর্থ। রাষ্ট্রকেই বিভিন্ন আয়োজনে এই অর্থের জোগান দিতে হবে, এটিই প্রথম কথা। কিন্তু ইউএনডিপি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি প্রভৃতি সংস্থাকে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানকে শুধু তথাকথিত উন্নয়ন খাত নয়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাণিজ্যের বাইরে এসে মানবিক জায়গা থেকে অংশগ্রহণ করতে হবে, তা অনুদানই হোক অথবা সুদমুক্ত দীর্ঘমেয়াদী ঋণের আঙ্গিকেই হোক।
করোনার সময়ে জাতিসংঘ যে কাজগুলি দায়িত্ব নিয়ে করতে পারে-
১. ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কোন রাষ্ট্রের পদক্ষেপজনিত সাফল্য ও ব্যর্থতা।
২. ব্যর্থতা থাকলে, সেই রাষ্ট্রের করোনা প্রতিরোধে আশু যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
৩' অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় রাষ্ট্রের যে পথে হাঁটা উচিৎ, তার দিক নির্দেশনা।
৪. সংকটাপন্ন রাষ্ট্রের পাশে আর্থিক এবং লজিস্টিক সকল সহযোগিতা দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করা এবং পাশে দাঁড়ানো।
৫. শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক পদক্ষেপ।
রাষ্ট্রের পদক্ষেপজনিত সাফল্য ও ব্যর্থতা নিরূপণের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত নির্ভরযোগ্য উপাত্ত, উচ্চতর গণিতিক হিসেব ও সমীকরণ। হয়তো বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে এ কাজটি সম্পন্ন করবেন, যদিও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বা গাণিতিক হিসেবের মধ্যে দিয়ে আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক বা সরকারের পদক্ষেপসমূহের সাফল্য ও ব্যর্থতার সুনিপুণ হিসেবনিকেশ করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তবে উদাহরণ হিসেবে অতি সাধারণ একটি গাণিতিক হিসেবে বিভিন্ন দেশের সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতা উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে- এটি জনৈক একজন ফেসবুক বন্ধুর লাইভে এবং পরবর্তিতে ইউটিউব-এ ( https://www.youtube.com/watch?v=G0j66XCN-go&list=PLo5wWhwgdqZs0CQ8WHYWRy8kJ0liWHGIe&index=19)
প্রকাশ পেয়েছে, যা উচ্চতর কোনও গাণিতিক হিসেব বা সমীকরণ না হলেও, এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপের সফলতা এবং ব্যর্থতার সূচকের একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়, যা নিম্নরূপ-
যদি অতি সরলভাবে বলি, তাহলে-
সরকারের পদক্ষেপজনিত ব্যর্থতা = মোট আক্রান্তের সংখ্যা।
কিন্তু সমীকরণটির এই ভাবে উপস্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই; কারণ একটি দেশের জনসংখ্যাকে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। ধরা যাক, একটি দেশের জনসংখ্যা ১০ কোটি এবং সেই দেশে করোনায় আক্রান্ত হল ১ লাখ মানুষ। পাশাপাশি একটি দেশের জনসংখ্যা ৬ কোটি এবং সেই দেশেও করোনায় আক্রান্ত হল ১ লাখ মানুষ। তাহলে ১০ কোটি দেশের সরকার প্রধান তো দাবি করতেই পারেন যে তাঁর ব্যর্থতা কম। তাহলে সমীকরণটি এইভাবে লেখা যায়-
সরকারের পদক্ষেপজনিত ব্যর্থতা = মোট আক্রান্তের সংখ্যা/ দেশের মোট জনসংখ্যা।
এবার ধরা যাক, দুইটি দেশের জনসংখ্যা ১০ কোটি এবং সেই দেশ দুটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হল ১ লাখ মানুষ। কিন্তু একটি দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৫০ /বর্গ কিলোমিটার এবং অপর দেশের ঘনত্ব ৩০০/ পার বর্গ মিটার। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় কম ঘনত্বের দেশটি অধিক সুবিধা পাবে। এ কারণে সমীকরণে একটি দেশের জনসংখ্যার ঘনত্বও বিবেচনায় আনা দরকার। সেক্ষেত্রে সমীকরণটি হতে পারে-
সরকারের পদক্ষেপজনিত ব্যর্থতা = মোট আক্রান্তের সংখ্যা/ দেশের মোট জনসংখ্যা X দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব।
পদক্ষেপজনিত ব্যর্থতা/ Neglect of Initiative: NI
মোট আক্রান্তের সংখ্যা / Total Cases: TC
দেশের মোট জনসংখ্যা / Country Population: CP
জনসংখ্যার ঘনত্ব / Population Density: PD
NI= TC/(CPXPD)
একটি দেশের জনসংখ্যার পরিমাণ এত বড় সংখ্যা যে, এবং এর সাথে সেই দেশের ঘনত্ব গুণনের ফলে যে সংখ্যা বের হয়, তা দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যাকে ভাগ করলে যে অতি বৃহৎ ভগ্নাংশ প্রকাশ পায়, তা সূচক হিসেবে মোটেও স্বাভাবিক সংখ্যা নয়। তাই হিসেবের সুবিধার্থে একটি দেশের মোট জনসংখ্যা এবং ঘনত্বকে পৃথকভাবে বর্গমূল করে নিয়ে, উভয়ের গুণফল দিয়ে মোট আক্রান্তকে ভাগ দিলে, দুইএকটি ব্যতিক্রম বাদে সূচক ১ থেকে ২৫ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, যা একটি সূচক নির্দেশের জন্য স্বাভাবিক সংখ্যা। তাহলে সমকরণটি দাঁড়াচ্ছে-
NI= TC / (√CPX √PD)
এই সমীকরণের দ্বারা কয়েকটি দেশের সরকারের পদক্ষেপজনিত ব্যর্থতা নিরূপণের চেষ্টা করা যাক। উল্লেখ্য, পদক্ষেপজনিত ব্যর্থতা চূড়ান্তভাবে নিরূপণের সময় এখনোও হয়নি, এর জন্য প্রয়োজন আরও কিছুটা সময়, এই মুহুর্তে একটি রাষ্ট্রের পদক্ষেপজনিত সাফল্য-ব্যর্থতার প্রাথমিক চিত্র পাওয়া যাবে। আমরা ২৬ মে ২০২০ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ধরে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, মেক্সিকো, পেরু এবং রাশিয়ার সূচক নির্ণয়ের চেষ্টা করা যাক।
চীন
NI= TC / (√CPX √PD) = ৮২,৯৯৫ / (√১,৪০২,১৬০,৮৪০X √১৪৫)
= ৮২,৯৯৫ / (৩৭৪৪৫X ১২) = ৮২,৯৯৫ / ৪৪৯,৩৪০ = ০.১৯
যুক্তরাষ্ট্র
NI= TC / (√CPX √PD) = ১,৭৪৭,৪৮৭ / (√৩২৯,৬০৭,৬২৩X √৩৪)
= ১,৭৪৭,৪৮৭ / (১৮১৫৫X ৫.৮) = ১,৭৪৭,৪৮৭ / ১০৫,২৯৯ = ১৬.৬০
ইতালী
NI= TC / (√CPX √PD) = ২৩১,১৩৯ / (√৬০,২৫২,৮২৪X√২০০)
= ২৩১,১৩৯ / (৭৭৬২X১৪) = ২৩১,১৩৯ / ১০৮,৬৬৮ = ২.১৩
স্পেন
NI= TC / (√CPX √PD) = ২৮৩,৮৪৯ / (√৪৬,৯৩৪,৬৩২X√৯৩)
= ২৮৩,৮৪৯ / (৬৮৫১X৯.৬) = ২৮৩,৮৪৯ / ৬৫,৭৬৯.৬ = ৪.৩২
দক্ষিণ কোরিয়া
NI= TC / (√CPX √PD) = ১১,৩৪৪ / (√৫১,৭৮০,৫৭৬ X√৬৫২)
= ১১,৩৪৪ / (৭১৯৭X২২.৭) = ১১,৩৪৪ / ১৬৩,৩৭২ = ০.০৭
ভারত
NI= TC / (√CPX √PD) = ১৫৯,০৫৪/ (√১,৩৬০,৮৯৯,৩৩৯ X√৪১৪)
= ১৫৯,০৫৪ / (৩৬৮৯০ X২০.৩ = ১৫৯,০৫৪ / ৭৪৮,৮৬৭= ০.২১
বাংলাদেশের
NI= TC / (√CPX √PD) = ৪০,৩২১/ (√১৬৮,৪২২,৫৫২ X√১১৭০)
= ৪০,৩২১ / (১২,৯৭৮ X৩৪) = ৪০,৩২১ / ১০১,২৫২ = ০.৪০
ব্রাজিল
NI= TC / (√CPX √PD) = ৪১৪,৬৬১/ (√২১১,৩৭৬,৪৩০ X√২৫)
= ৪১৪,৬৬১ / (১৪,৫৩৯ X৫) = ৪১৪,৬৬১ / ৭২,৬৯৫ = ৫.৪৮
পেরু
NI= TC / (√CPX √PD) = ১৩৫,৯০৫ / (√৩২,১৬২,১৮৪ X√২৫)
= ১৩৫,৯০৫ / (৫,৬৭১ X৫) = ১৩৫,৯০৫ / ২৮,৩৫৫ = ৪.৭৯
রাশিয়া
NI= TC / (√CPX √PD) = ৩৭৯,০৫১/ (√১৪৬,৮৭৭,০৮৮ X√৯)
= ৩৭৯,০৫১ / (১২,১১৯ X৩) = ৩৭৯,০৫১ / ৩৬,৩৫৭ = ১০.৪৩
এই সমীকরণ দিয়ে ব্যর্থতা নিরূপণের চেয়ে যেটি জরুরি তা হল, ব্যর্থতার আলোকে সম্ভাব্য ভয়াবহতা বিবেচনায় আনা। অর্থাৎ ব্যর্থতা কতটা ভয়াবহতা তৈরি করতে পারে, তা বুঝে নেওয়া। আমরা যদি বিবেচনায় আনি যে ০.৫০০ পর্যন্ত হচ্ছে সাফল্যের সূচক। ০.৫০১ থেকে ১ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ব্যর্থতার সূচক। ১.০০১ থেকে ৩ পর্যন্ত ব্যর্থতার সূচক। ৩.০০১ থেকে ৫ পর্যন্ত চরম ব্যর্থতা, ৫.০০১ এর পর থেকে ১০ পর্যন্ত মহাব্যর্থতা এবং ১০ এর উপরে চরম মহাব্যর্থতা।
আমরা একটি দেশের আলোকে এইভাবে দেখতে পারি- বাংলাদেশ যদি সাফল্যের শেষ স্তরে থাকে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা হবে ৫০,৬২৬ জন। আর যদি প্রাথমিকভাবে ব্যর্থতার শেষ স্তরে থাকে তাহলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হবে ১০১,২৫২, বাংলাদেশ যদি চরম ব্যর্থতার পর্যায়ে অর্থাৎ সূচক যদি ৩.০০১ হয় তাহলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হবে ৩০৩,৮৫৭ জন, যদি মহাব্যর্থতার শেষ পর্যায়ে থাকে অর্থাৎ সূচক যদি ১০ হয় তাহলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হবে ১,০১২,৫২০ জন। পদক্ষেপজনিত ব্যর্থতার সূচক যত বেশি হবে আক্রান্তের সংখ্যাও তত বাড়বে।
একটি দেশের পক্ষে অন্য দেশের করোনাভাইরাস বিষয়ক ব্যবস্থাপনার চুলচেরা ব্যাখ্যা করা এবং সেই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশের করোনা-বিষয়ক ব্যবস্থাপনার চুলচেরা ব্যাখ্যা করা একমাত্র জাতিসংঘের পক্ষেই সম্ভব। এছাড়া জাতিসংঘের পক্ষে সাপ্তাহিক এমন রিপোর্টও প্রকাশ করা সম্ভব যেকোনও একটি দেশ কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং তাতে কোন ভুলত্রুটি রয়েছে কি না। এখন বোধহয় বিমূর্ত বাক্যে, 'একেক দেশ একেক পথে হেঁটেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিপরীত কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে, যার চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের সবাইকে'- বিবৃতি বা বক্তব্য প্রদানের সময় নয়, সময় নয় কৌশলী বক্তব্য দেয়ার। এখন সময়, উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার। যদি জাতিসংঘের কর্মপরিধির বাইরে গিয়েও কোন পদক্ষেপ নিতে হয়, তাও নিতে হবে- বর্তমান বাস্তবতাকে মাথায় রেখে। কোন দেশের পদক্ষেপজনিত পরিসংখ্যান নিরেপেক্ষভাবে প্রকাশ করার সক্ষমতা এবং অধিকার একমাত্র জাতিসংঘেরই আছে- সারা বছর বিভিন্ন ইনডেক্স প্রকাশ করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি। যদি বিভিন্ন দেশের পাশে সম্মিলিতভাবে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে জাতিসংঘকেই দাঁড়াতে হবে, জাতিসংঘ এ দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বা এ দায় এড়িয়ে যাওয়া উচিতও নয়।
পরিশেষে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই- 'করোনাভাইরাসের এই মহামারী বিশ্ববাসীর জন্য একটি 'জেগে ওঠার ডাক'।' সংকট মোকাবিলায় বিশ্বকে আরও একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।' এবং একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে এইটুকুই বাড়তি বলতে চাই, বিশ্বের সকল সংস্থা এবং রাষ্ট্রকে একতাবদ্ধ করতে জাতিসংঘকেই মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
ধন্যবাদান্তে,
জনৈক বিশ্বনাগরিক