Published : 08 Jan 2012, 08:31 PM
৬৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে যতটা না, তারচে অনেক বড় সংবাদ হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অনেকগুলো ক্যাম্পাসে একযোগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ধর্ষণের চেষ্টা এবং ইত্যাকার কীর্তি ঘটিয়ে। বুয়েট, কুয়েট, জগন্নাথ, বেগম রোকেয়া এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর ঘটলো শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারী দলের সংঘবদ্ধ কিংবা বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা। ছাত্রলীগ এর সাথে দখল, হামলা কিংবা ধর্ষণ যে কোন একটি শব্দ জুড়ে দিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করুন, অসংখ্য ভুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু এটা কি শুধু একা ছাত্রলীগের মামলা? তা তো নয় মোটেই। ছাত্র দলের নাম নিয়েও একই রকম অনুসন্ধানের ফলাফল পাওয়া যাবে, তবে আগের আমলটা এনালগ ছিল বলে ইন্টারনেটে সংবাদ কম মিলবে।
হামলা, নিপীড়ন বা ধর্ষণের মত চরম ঘটনাগুলো ঘটিয়ে ছাত্রলীগ সংবাদ হয়, কিংবা কখনো কখনো প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা সংবাদ তৈরি করেন। এই দুইয়ের বাইরে চিরস্থায়ী যে বন্দোবস্তে শিক্ষার্থীরা দিন কাটান, সেটা এতটা গা সওয়া যে, তা সংবাদের যোগ্যই না। ছাপা হওয়া সংবাদের ভেতর যদিও সেই ছাপা না হওয়া সত্যিটাও লুকিয়ে থাকে। একটা সংবাদের উল্লেখ করি: ('প্রোগ্রামে আসে না, মারবো না তো কী করবো?'Mon, Jan 17th, 2011 11:55 am BdST বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- "কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল থেকে ২২ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে বের করে দিয়েছে সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগ।
সোমবার ভোররাতে ওই ছাত্রদের বের করে দেওয়া হয় বলে হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। হল শাখার ছাত্রলীগ সভাপতির ভাষায়, তাদের সম্মান না করায় শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি সংগঠনের এ খড়গ নেমে এসেছে।
ছাত্ররা সাংবাদিকদের জানায়, সূর্যসেন হলের অতিথি কক্ষে রাতে হল ছাত্রলীগের নিয়মিত সভা হয়। সেখানে সব শিক্ষার্থীকে আসতে বলা হয়।
সভায় উপস্থিত না হওয়ায় ২২ শিক্ষার্থীকে রাত ২টার দিকে তাদের কক্ষ থেকে ডেকে আনা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তখন ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতি সাইদ মজুমদার সভায় উপস্থিত না হওয়ার কারণ জানাতে চাইলে তারা পরীক্ষার কথা জানান। আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা প্রথমে অতিথি কক্ষের দরজা বন্ধ করে ২২ জনকে মারধর করে। তারপর হল থেকে বের করে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি সাইদ মজুমদার সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বড় ভাইদের সালাম দেয় না, সম্মান করে না, প্রোগ্রামে আসে না- তাদের মারবো না তো কী করবো?"
তবে ছাত্র নির্যাতনের এ বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষ খন্দকার আশরাফ হোসেনের অজানা ছিলো সকাল ১১টায়ও। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ বিষয়ে এখনো আমি কিছু জানি না।"
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যের চিত্র নতুন নয়। হলের সরকারি সংগঠনের মিছিলে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার অভিযোগও অনেক পুরনো।"
এই হল একটি সংবাদের নমুনা, যেখানে একসাথে ২২ জন ছাত্রকে পিটিয়ে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। এখান থেকে মোটাদাগে যে সিদ্ধান্তগুলোতে একজন পাঠক পৌঁছাবেন, সেগুলো হল: ক. সূর্যসেন নামের একটা হলে অতিথি কক্ষে সকল ছাত্রকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়; খ. সেখানে শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত পর্যালোচনা হয়; গ. সভায় হাজিরা নিয়মিত না থাকলে ছাত্রাবাসে বাস করার অধিকার হারান শিক্ষার্থীরা; ঘ. হলের ছাত্রদের নিয়মিত বড় ভাইদের সালাম দিতে হয়, আদবলেহাজ বজায় রাখতে হয়; ঙ. হল থেকে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়া হলেও পরদিন ১১ টা পর্যন্ত ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাধ্যাক্ষটি সে বিষয়ে জ্ঞাতই ছিলেন না।
সংবাদটি অন্যান্য জাতীয় দৈনিকেও এসেছিল, মোটামুটি বয়ান একই। দৈনিক প্রথম আলোর ছাপা সংবাদটিতে প্রাধ্যক্ষ আর হল শাখার সভাপতির কর্মকাণ্ড ও দায়িত্বপালনের আরও কিছু বিবরণ ছিল, সেই সংবাদটাও পড়া যাক:
"ছাত্রলীগ নেতার দায়িত্বজ্ঞান
কনকনে শীতের রাতে গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের অতিথি কক্ষের চিত্র ছিল কিছুটা আলাদা। ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতি ও তাঁর অনুসারীদের সামনে 'কাঠগড়ায়' দাঁড়িয়েছিলেন বিভিন্ন বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ১০-১২ জন ছাত্র। তাঁরা সবাই হলের ২২৬ (ক) কক্ষে থাকেন। তাঁদের অপরাধ—অতিথি কক্ষে ছাত্রলীগের সভায় উপস্থিত হননি, বড় ভাইদের দেখেও সালাম দেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা জানান, জেরার একপর্যায়ে হল শাখার সভাপতি সাইদ মজুমদার ও তাঁর অনুসারী কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই শিক্ষার্থীদের ভাঙা টেবিল ও চেয়ারের পায়া দিয়ে মারধর শুরু করেন। ছাত্রলীগের ওই নেতাদের মধ্যে একজন এ সময় কয়েকজন ছাত্রের মাথা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শফিক। এ ছাড়া বিশ্ব ধর্মতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষ, উর্দু বিভাগের বাশার এখনো হলের বাইরে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে হল সভাপতি সাইদ মজুমদার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, 'বড় ভাইদের সালাম দেয় না, সম্মান করে না, প্রোগ্রামে আসে না—তাদের মারব না তো কী করব?' তবে বিকেলে সাইদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, 'কিছু ছাত্র হলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিল। তাই তাদের হল থেকে বের করে দিয়েছি।' এটা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না জানতে চাইলে সাইদ মজুমদার বলেন, ছাত্রলীগের একটি শাখার নেতা হিসেবে এটা তাঁর দায়িত্ব। রাতের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা যখন যোগাযোগ করেছিলেন, তখন রাগের মাথায় তিনি কথাগুলো বলেছিলেন।
হল প্রাধ্যক্ষ খোন্দকার আশরাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, 'বিষয়টি আমি জেনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।' ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, হলের শিক্ষার্থীদের দেখাশোনার দায়িত্ব হল কর্তৃপক্ষের—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, 'রাখেন আপনার অধ্যাদেশ। কেউ অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নিতে পারব না।'
এইখানে একটু ধাক্কা লাগে। রাজনৈতিক চাপে দায়িত্ব পালন করতে অসহায় ব্যর্থতা নয়, পরিস্কার একটা সহায়ক ভূমিকার সন্দেহ তৈরি হয়। প্রাধ্যক্ষটি নিজ দায়িত্ব পালন করছেন না, হয় তিনি অর্পণ করেছেন কিংবা তার হয়ে হলের প্রশাসনিক দায়িত্ব তুলে নিয়েছে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট নেতৃবর্গ। জানার প্রয়োজন মনে করছেন না, নিজে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও গ্রহণ করছেন না, এবং যে ছাত্রদের হল থেকে পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে, তারা প্রাধ্যাক্ষের কক্ষে অভিযোগ জানাতে আসবেন, এই আশায় বসে আছেন।
মোটামুটি ভাবে এই চেহারাটি গোটা দেশের। ভোট দিয়ে কি শুধু সংসদে কোন দল ক্ষমতায় যাবে তাই নির্বাচন করা হয়? উহু, আমাদের দেশে ভোট দিয়ে শুধু রাজসিংহাসনটাই কার দখলে যাবে, সেটা বছর পাঁচেকের জন্য ঠিক করা হয় না, বরং নগর ভবন থেকে টেম্পুস্টান্ড, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রামগঞ্জের বিদ্যালয় পর্যন্ত ইজারা বদল হয়। ভিসির চেয়ার বলুন আর একাডেমির চেয়ার বলুন, সব গদিতেই টান পড়ে ক্ষমতার পালা বদল হলে। ভিসি ইত্যাদি হয়তো একটু রয়েসয়ে পাল্টে যায়, হলের দখল পাল্টায় ভোট গুনতির রাত শেষ হবার আগেই। সদলে দলবদলও ঘটে বহু।
একটা অদ্ভুদ পরিস্থিতি তৈরি হয় এর ফলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃত্ব ঠিক কাদের হাতে? কোনো একটা সমস্যায় পড়লে শিক্ষার্থী কার কাছে নালিশ করবেন? তার শিক্ষাজীবন ও আস্ত জীবনটারই নিরাপত্তা কে দেবেন? কার কাছে দাবি দাওয়া পেশ করবেন? না, বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ নন, অনানুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষই অনেক বেশি শক্তিশালী এখানে। শুধু শিক্ষার্থীদের শাসনে রাখাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা রকম নিয়োগ, ভর্তি, পরীক্ষার ফল এসবেও তাদের প্রভাব কমবেশি আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় চলা চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি, দোকানদারি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণেও এই দখলদারির বিরাট বাণিজ্য আছে। এই অনানুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাচর্চার মাত্রা একেক জায়গায় একেক রকম, বটেই। বুয়েটে এক রকম, মেডিকেল কলেজে আরেক রকম। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ভেদে তাদের সংস্কৃতি, নিপীড়নের ধরন, ক্ষমতার দাপট নানান মাত্রার। কিন্তু সর্বত্রই তাদের প্রবল উপস্থিতি লক্ষণীয়।
নব্বই দশকের একটা সময়ে বড় একটা হুজুগ উঠেছিল, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়া হোক। দেশের কিছু নামীদামী বুদ্ধিজীবীও সেই জোয়ারে শরিক হয়েছিলেন। ছাত্র রাজনীতি বন্ধে নয়, ছাত্র সমাজের একটা বড় অংশকে রাজনীতি বিমুখ কিংবা বিযুক্ত করতে তারা সফল হয়েছেন ভালভাবেই। কিন্তু সত্যি সত্যি যা বন্ধ হয়েছে, সেটা হলো বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ সংসদগুলোর নির্বাচন!
যাদের অভিসন্ধি ভিন্ন তাদের নিয়ে কথা বলে লাভ নেই, কিন্তু একদম সরল মনে যারা শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক তৎপরতার বিরোধিতা করছেন, তারা একটা বিষয় কখনোই ব্যাখ্যা করেননি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কটি কীভাবে নির্ধারিত হবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষার্থীদের মাঝে ভারসাম্য রক্ষার কাজটি সম্পন্ন হবে কী করে, শিক্ষার্থীদের নিজেদের আন্তসম্পর্ক বজায় রাখার কাজটি কী করে হবে- যেটা করে ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষক সমিতি, আইনজীবী সমিতি, চিকিৎসকদের সমিতি?
আর একটা দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতির একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে, এবং সেটার ধারাবাহিকতা যদি আমরা স্মরণ রাখি, বিশেষ করে ডাকসু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিকাশের একটা সূচক হিসেবে খুব কার্যকর ছিল, অন্যান্য শিক্ষাঙ্গনগুলোও কমবেশি রাজনৈতিক জাতীয় বিকাশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবেই সক্রিয় ছিল। স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনে প্রগতিশীল শক্তি ছাত্র ইউনিয়ন ডাকসুতে বিজয়ী হয়, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপরেই "পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন-মুজিববাদী ছাত্রলীগ যৌথ প্যানেল দিয়েছিল। তাদের প্রতিপক্ষ ছিল জাসদ ছাত্রলীগের মাহবুব-জহুর পরিষদ। নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছিল লেনিন-গামা যৌথ পরিষদের। তখন পরাজয়ের বেদনা ও গ্লানি মুছতে ডাকসু নির্বাচনের ব্যালটবাক্স হাইজ্যাক করা হয়েছিল।" (আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুজ্জান মান্নার ৪ জানুয়ারি ২০১২, প্রথম আলোতে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃত) সম্ভবত এই প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে এই যে, যাদের ভরাডুবি হয়েছে বলা হচ্ছে, তাদের একটা সংগঠন স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক আগে ডাকসুতে ছিল, অপরটি স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী প্রথম ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা যাদের বিপুল হারে ভোট দিয়েছিল, ডাকসুতে যারা বিজয়ী হতে যাচ্ছিল, তারা সেই তুলনায় ছাত্রলীগেরই একটা বিদ্রোহী অংশ, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যারা নতুন আকাঙ্ক্ষায় জারিত হয়েছে এবং সেই স্বপ্ন অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। ওই বছরই, ৭৩ সালে ছাত্র ইউনিয়নের দুই কর্মী মতিউল-কাদের ভিয়েতনাম দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, এবং এই ঘটনার প্রতিবাদ করে ছাত্র ইউনিয়ন দেশজুড়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার সম্মুখীন হয়। এই প্রেক্ষিতে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের যৌথ প্যানেল শিক্ষার্থীদের অবিশ্বাস উদ্রেক করেছিল, আওয়ামী ছাত্রলীগ ভোট পায়নি স্রেফ তার মুক্তিযুদ্ধোত্তোর নিপীড়ক ভূমিকার জন্য, ছাত্র ইউনিয়ন পায়নি ছাত্রলীগের সাথে জোট বাধার জন্য। পরের ডাকসু নির্বাচনগুলোতেও জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের বিজয়ের এই ধারা অব্যাহত দেখা গেছে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শেষ দিকে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ অবশ্য প্রধান ছাত্র সংগঠন হিসেবে দেশজুড়েই প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ছাত্র মৈত্রী, জাসদ-ছাত্রলীগ ইত্যাদি সংগঠনের প্রতাপও অগ্রাহ্য করার মত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানের একচেটিয়া দখলদারিত্বের এই চেহারা স্বাধীনতার আগে দেখা যায়নি। পাকিস্তান আমলের এনএসএফের গুন্ডামি সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের একটা প্রতিরোধী মনোভাব সর্বদাই ছিল। কিন্তু, কমলকুমার মজুমদারের সেই গল্পের মত– বাঁচার জন্য রামনাম জপি, রামই যখন মারেন, তখন আর কার নাম নেই—স্বাধীনতাউত্তর কালটিতে অচিরেই স্থায়ী ছাত্রাবাস দখলের রাজনীতি শুরু হয়। '৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি ঢাকতে আর কোন ডাকসুর আয়োজন করা হয়নি, বরং মনোনীতদের হাতে শিক্ষাঙ্গন ইজারা দেয়া শুরু হয়। আবারও উদ্ধৃত করি: (সোহরাব হাসান,৩০-০৪-২০১১, প্রথম আলো) "মুহসীন হলের এ ঘটনা ৩৬ বছর আগের আরেকটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিল। ১৯৭৪ সালে এই মুহসীন হলেই ছাত্রলীগের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সাতজনকে হত্যা করেছিল ব্রাশফায়ারে। সেই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি ছিলেন শফিউল আলম প্রধান, তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বিচারে তাঁর কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান তাঁকে সসম্মানে জেলখানা থেকে বের করে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। সেই থেকে এককালের বঙ্গবন্ধুর সৈনিক জিয়া-খালেদার আশপাশেই ঘোরাঘুরি করছেন এবং সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষবাণ ছুড়ছেন। ছাত্রলীগ করার সময় প্রধানরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বাইরের সবাইকে দেশদ্রোহী মনে করতেন। অন্য সংগঠনের কর্মী কিংবা সাধারণ ছাত্রদেরও ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে বাধ্য করতেন। ছাত্রলীগ প্রধানকে ত্যাগ করলেও তাঁর আদর্শ ত্যাগ করেনি। কয়েক মাস আগে ফজলুল হক হলে সংগঠনের মিছিলে যোগ না দেওয়ার শাস্তি হিসেবে বেশ কিছু ছাত্রকে তাদের আশ্রয়স্থল অতিথিকক্ষ থেকে মধ্যরাতে বের করে দিয়েছিল ছাত্রলীগ হল শাখার নেতৃত্ব। ১৯৭৪-এ সাত খুনের আসামি না হলে প্রধান এখন আওয়ামী লীগই করতেন এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তার জিহ্বা ছিঁড়ে ফেলতেন। যাক, সাত খুনের বিনিময়ে কিছু জিহ্বা তো রক্ষা পেল!"
সোহরাব হাসান এর স্মৃতিচারণ থেকে '৭৪ এর বাংলাদেশেও ছাত্রদেরকে জোর করে মিছিল করাবার সংস্কৃতির সংবাদ পাওয়া যায়। অন্য একটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ, যে কেউ ভাবতেই পারেন যে তখন হয়তো অন্তত হত্যার মত গুরুতর অপরাধে শাস্তি দেয়ার সংস্কৃতিটা চালু ছিল! আসলে সেটা নয়, ওই সময়ে দেশজুড়ে অসংখ্য খুনের বিচার না হলেও শফিউল আলমরা প্রধানত বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির সাথে তার টানা বিবাদের কারণে, শফিউল আলম-মনিরুল হক নিয়মিতভাবে যুবলীগের দখল, পারমিটবাজি প্রভৃতির বিরোধিতা করে সভাসমাবেশ করতেন, আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বিনাশে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। যুবলীগ আর ছাত্রলীগের কোন্দল এই সময়ে ছিল চরমে, সেই সূত্রের সাত খুনের নারকীয় ঘটনাটি ঘটে, প্রধান জেলে গেলেও মনিরুল হক চৌধুরী নিয়মিতভাবেই ছাত্রলীগের ওপর যুবলীগের পীড়ন নির্যাতন বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন। সাত খুনের মত বীভৎস ঘটনা আর না ঘটলেও শিক্ষাঙ্গনে দখলদারি অব্যাহতই ছিল।
জিয়াউর রহমান ছাত্র রাজনীতিতে নিয়ে আসেন গোয়েন্দা সংস্থাকে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানই প্রথম ১৯৭৬ সালে আইন করে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক ও অন্য সংগঠনগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে অঙ্গসংগঠন হিসেবে রাখার বিধান করেন। এর প্রভাব হয় ভয়াবহ নেতিবাচক, স্বাধীন ধারার রাজনীতির চেতনা ছাত্র ও পেশাজীবীদের মাঝে দুর্বল হয়। জনপ্রিয় ভিত্তির অভাবে সন্ত্রাসী তৈরিতে তার ভূমিকাও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নির্বাচিত সংসদগুলোর একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে কোন্দল, খুনোখুনি একটা নিয়মিত ঘটনা ছিল। বহুক্ষেত্রে স্বৈরাচারকে টিকিয়ে রাখার জন্য গোয়েন্দাসংস্থাগুলো এই কোন্দলের রসদ যোগাতো, লক্ষ্য ছিল দুটো, এক, সংগঠনগুলোর (সাধারণত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন, প্রগতিশীল শক্তিগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক কম ব্যবহৃত হয়েছে) মাঝে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখা এবং দুই, সরকার বিরোধী আন্দোলনের যে কোন তুঙ্গ মূহুর্তগুলিতে খুনোখুনি কিংবা দখল-পাল্টা দখলের পরিস্থিতি তৈরি করে বিপদ কাটানো। দল-লীগের অসংখ্য উপদল এই পরিস্থিতিকে জটিলতর এবং কর্তৃপক্ষের জন্য সুবিধাজনক করে ফেলল। এই পরিস্থিতি উদ্ভবের পেছনে একদিকে ছাত্র সমাজের মাঝে জনপ্রিয়তাহীন স্বৈরাচারের উস্কানি ছাড়াও এরশাদ বিরোধী জনপ্রিয় আন্দোলনে প্রধান যে দুটি সংগঠন ক্রমশ নেতৃত্বে চলে আসছিল, তাদের চরিত্রও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরকারের কোন জনপ্রিয় কর্তৃত্ব ছিল না বলে, এবং একই সাথে এই কর্তৃত্ব অর্থ-অস্ত্র-ক্ষমতার বিরাট উৎস হয়ে উঠছিল বলে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি আর খুনোখুনি ছাত্ররাজনীতির অদৃষ্টপূর্ব প্রধান দিক হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন উত্তর পাড়া দক্ষিন পাড়ার মত সেনানিবাসের চেহারা পায়। এর পরও অস্ত্রের ভারসাম্য এবং উভয়েরই বিরোধী দলে অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী রাজত্বের একটা ভারসাম্য বজায় রাখলেও নব্বই এর পর দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে একেবারে কোনঠাসা করে ফেলে ছাত্রদল। পরের দফায় ক্ষমতায় যেয়ে অচিরেই ছাত্রদলকে উচ্ছেদ করে প্রতিশোধ নেয় ছাত্রলীগ। তারপর থেকে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, সহাবস্থান শব্দটার বিলোপ ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে।
নব্বই এর পর যখন হল সংসদে নির্বাচনের প্রয়াস চলে, বিরোধী সংগঠনগুলো এই সহাবস্থানের প্রশ্ন তুলেই তা হতে দেয়নি, এবং বরাবরই এই বক্তব্যে ন্যায্যতা আছে। মুশকিল শুধু এই যে, নিজেরা ক্ষমতায় গেলে এই ন্যায্যতার প্রশ্নটা ভুলে যাওয়াও রীতি। ওদিকে সরকারী দলের কী আসে যায় ডাকসুর নির্বাচন না হলে! যথাযথ একটা নির্বাচনে পরাজয়ের অনেক সম্ভাবনা, নির্বাচন বরং না করে হলগুলো নিজেদের মাঝে বাটোয়ারা করাটাই অনেক বেশি সুবিধাজনক।
কিন্তু এই সব কিছুর মাঝে কীভাবে জীবন যাপন করেন আমাদের শিক্ষার্থীরা? আমার জানা নেই দুনিয়ার আর কোন দেশে শিক্ষার্থীরা এতটা অসন্মানের জীবন যাপন করেন কিনা। আশির দশকের পিস্তল, কাটা রাইফেল আর পাইপগানের ঝনঝনানি নব্বই তে এসে ক্রমশ কমেছে, কেননা এখন আর প্রতিপক্ষ অন্য সংগঠন নয়; কিন্তু একেবারে বিলুপ্তও হয়নি, কেননা প্রতিপক্ষ এখন উপদল। অস্ত্রের প্রাবল্য না থাকুক, প্রতিটা হল এক একটা কয়েদখানা, পাহারাকক্ষের ভেতর দিয়ে অর্ভ্যথনা পায় তারা হলে, তাদের প্রতিটা নড়াচড়ার ওপর থাকে সতর্ক চোখ। প্রায় প্রতিটা হলে নামডেকে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের। আদব লেহাজে গড়বড় হলে কী শাস্তি হয়, সেটা উদ্ধৃত সংবাদটাতে ভালভাবেই বোঝা যায়। এই ক্যাডারদের জন্য হলে আছে আলাদা থাকার কক্ষ, আলাদা খাবার ব্যবস্থা। ছুটিছাটায় বাড়ি যাবার সময় নেতাদের দেয়া বকশিশ, সাপ্তাহিক হাতখরচা। নেতাদের আবার স্তরবিন্যাস আছে, অনেকটা মজুর-সর্দারদের মত। ছাত্রাবাসে আসন বরাদ্দে কর্তৃপক্ষের প্রায় কোন ভূমিকা নেই, আঞ্চলিক কিংবা অন্য কোন সূত্রে পরিচিত বড় ভাই ছাড়া হলে ওঠা যায় না। এবং যে সূত্রেই ওঠা হোক না কেন, সেই দাম পুরো শিক্ষা জীবন জুড়ে দিয়ে যেতে হয়। হলের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা ছাড়া প্রাধ্যক্ষদের কী কাজ ছাত্ররা সামান্যই জানে। ভিসি পদবীর ব্যক্তিদের দরবারে সর্বদাই এই বড়ভাইদের রমরমা, প্রক্টরগণ রাউন্ডে বেড়োন ক্যাডারকূল পরিবেষ্টিত হয়ে, প্রভোস্টরা জানেন না তাদের অভিভাবকত্বে থাকা ছাত্রদের চেয়ারের পায়া দিয়ে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এটা খুবই রহস্যজনক মনে হতে পারে যে কারও কাছে, এই ছাত্র সংগঠন ধরে রাখার দায়টা কী! জাতীয় রাজনীতিতে সরকারি দলগুলোর পরাজয়ের পেছনে প্রায় প্রতিবারই শিক্ষাঙ্গনে তাদের মাস্তান বাহিনীগুলোর তৈরি করা কাহিনীগুলো রসদ জুগিয়েছে। সেঞ্চুরি মানিক বা ডগশিশির এর গল্পের মত অসংখ্য ঘটনা মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। তারপরও কেনো উচ্চ থেকে নিন্মস্তর পর্যন্ত এই রকম রংবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়?
একটা কারণ আনুষ্ঠানিক। বাংলাদেশের মত একটি দেশে যেখানে আদিম কায়দায় সম্পদ উপার্জন এখনো অব্যাহত রয়েছে শেয়ার বাজার হোক আর আমদানি রফতানিতে হোক, মাস্তানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী উপর মহল থেকে পাঁচশ টাকা হপ্তার নিন্মস্তর পর্যন্ত দেশব্যাপী এই একটা ক্ষমতার ভারসাম্য গড়ে ওঠে। অপরটি অনানুষ্ঠানিক। একের পর এক সবগুলো সরকারী দলই ক্ষমতায় এসে শিক্ষাক্ষেত্রে যে আর্থিক কর্মসূচি অনুসরণ করছে, তা মূলত একই। এবং এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন তাদের পক্ষে সম্ভবই না দল বা লীগের সহায়তা ছাড়া। খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সাধারণ ছাত্রদের ওপর সরকারী দলগুলোর হামলার একটা বড় অংশের উপলক্ষ্য সরকারের শিক্ষাখাতে বরাদ্দ হ্রাসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। বলা উচিত, সরকারী ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্বব্যাঙ্ক-সরকারী নীতিনির্ধারকদের প্রত্যক্ষ লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবেই তাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করছে।
অগণতান্ত্রিক শাসনের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সম্পদের বন্টনও ঘটবে স্বেচ্ছাচারী কায়দায়। যাদের নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে তাদের বক্তব্য দেয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। রাষ্ট্রের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের এই পরিসরগুলোতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় ভূমিকা পালন করার কথা ছিল ছাত্র সংসদগুলোর। উপরোক্ত দুটি কারণেই বাংলাদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সংস্কৃতিটাই শাসকদের স্বার্থের পরপন্থী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু বুদ্ধিজীবী পরিস্থিতির এই দিকটি উপলদ্ধি না করে সরকারি বেসরকারী মাস্তানদের ভূমিকাকেই একমাত্র ছাত্র রাজনীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, মাস্তানতন্ত্রের এতে ক্ষতি সামান্যই হলেও ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক প্রগতিশীল উপাদানগুলো এতে আরও দুর্বল হয়েছে।
ছাত্র সংগঠনগুলো, যারা এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চায়, মাস্তানতন্ত্রের বিলোপ চায়, রাষ্ট্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলোর সাথে দরকষাকষিতে ছাত্র সমাজের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে চায়, তাদের প্রধান কর্মসূচি তাই হবার কথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতন্ত্রায়নের দাবি, হলসংসদগুলোকে কার্যকর করার দাবি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অনানুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের বদলে আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা গ্রহণে বাধ্য করার দাবি। যথাযথ নির্বাচন হলেও হতেই পারে যে, প্রথম এক বা দুই বার সরকারি ও বিরোধী মাস্তান বাহিনীই বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সংসদগুলোয় নির্বাচনে বিজয়ী হবে। কিন্তু সমাজ নিয়ে ভাববার, ভাবাবার সংস্কৃতি চালু হবে, তাতে অচিরেই প্রগতিশীল শক্তিগুলোও আরও বহুগুন শক্তি অর্জন করবে। শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কিত বিষয় শুধু না, এর বাইরের রাষ্ট্র, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি, রাষ্ট্রতত্ত্ব, দর্শন, সংস্কৃতিচর্চা সকলই পুনরায় ছাত্রদের মাঝে আলোচনায় কিছুটা হলেও ফেরত আনার উদ্যোগ শুরু হবে, যদি সংসদগুলো কার্যকর করা সম্ভব হয়। বছর বছর ছাত্র সংসদ মানেই জবাবদিহিতার সংস্কৃতিরও বিকাশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্তানতন্ত্র উচ্ছেদ এবং ছাত্র সংসদগুলো কার্যকর করাটাই তাই গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের বিষয় হওয়া উচিত।
ফিরোজ আহমেদ: রাজনৈতিক কর্মী, প্রাবন্ধিক ও গবেষক।