Published : 07 May 2011, 10:45 PM
স্বাধীনতা দিবস আসছে, তাই মনটা ভালো ছিল, হঠাৎ করে দেখি মনটা ভালো নেই। স্বাধীনতা দিবসে লক্ষ মানুষ নিয়ে আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত "আমার সোনার বাংলা" গাইব। এখন শুনছি সেই গান গাওয়ার জন্যে টাকা দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নিজেদের ইসলামী ব্যাংক! যে গানটির একটি কথা মুখে উচ্চারণ করার জন্য এই দেশের মানুষকে যারা চোখ বন্ধ করে জবাই করেছে, তাদের দল এখন এই গানটি গাওয়ার জন্য টাকা দিবে আর সেই টাকা নিয়ে আমাদের গানটি গাইতে হবে, আমাদের কী এতই খারাপ অবস্থা হয়েছে?
উদীচীকে দুই হাতে স্যালুট, তারা বলে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের টাকা দিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে তারা সেখানে জাতীয় সঙ্গীত গাইবে না। আমাদের ভালোবাসার এই গানটির সম্মান রক্ষা করার জন্যে তাদের এই ভূমিকার কথা দেশের মানুষ অনেক শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে।
আমি এখন পর্যন্ত যত তরুণ-তরুণী কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেছি তারা সবাই বলেছে, অনেক আগ্রহ আর উৎসাহ নিয়ে তারা এই ঐতিহাসিক মূহুর্তটির জন্যে অপেক্ষা করছিল, এখন তারা আর নিজের ভেতর উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছে না। আমাদের তরুণ প্রজন্ম কোনটি সঠিক কোনটি ভুল অনুভব করতে পারে দেখে আমি খুব আশান্বিত হয়েছি।
স্বাধীনতা দিবস আসছে, এখন আমি মনখারাপ করা কথা বলতে চাই না। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মতো এত সুন্দর একটি সঙ্গীত আর কোনো দেশের আছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম তাদের কাছে এই গানটির একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আবেদন আছে, তার একটি একটি চরণ যখন আমরা শুনি আমাদের চোখ ভিজে আসে।
এটি যদি শুধু একটি গান হত তাহলে সবাই নিজের মতো করে গাইতে পারত, কিন্তু এখন এটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, তাই এটি এখন আর নিজের মতো করে গাইতে পারব না। এটি শুদ্ধভাবে গাইতে হবে। আমি লক্ষ্য করেছি, অনেক বড় অনুষ্ঠানেও এটি পুরোপুরি শুদ্ধভাবে গাওয়া হয় না, এক-দুটি লাইন বাড়তি যোগ করে দেওয়া হয়। গানটি কীভাবে গাইতে হবে শেখানোর জন্যে স্কুলের ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ে সেটি লিখে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এই প্রজন্ম যখন বড় হবে তখন তারা আমাদের জাতীয় সঙ্গীতটিকে ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে সঠিকভাবে গাইবে।
এই লেখার সঙ্গে আমি জাতীয় সঙ্গীতটি যেভাবে গাইতে হবে সেটি যুক্ত করে দিচ্ছি। খবরের কাগজ হলে কেটে সবাই যেন তার পকেটে রেখে দেয়। কপি করে অন্যকে দেয়। (আমার পকেটে সবসময় এর কপি থাকে!) ইন্টারনেট হলে এক কপি প্রিন্ট করে নিয়ে নেয়, নিজে রাখে, অন্যকে দেয়।
শেষ করার আগে সরকারের কাছে অনুরোধ, ইসলামী ব্যাংকের দেওয়া টাকাটা যেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়– আমরা আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীতটি ভালোবাসা দিয়ে মর্যাদা দিয়ে সম্মান দিয়ে গাইতে চাই। আমাদের আশাহত করবেন না– দোহাই আপনাদের।
গাওয়ার জন্য জাতীয় সংগীতের পূর্ণপাঠ
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ,
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস,
আমার প্রাণে
ও মা, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি,
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে কী দেখেছি
আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী সেèহ, কী মায়া গো-
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে-
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন
ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।