ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ওই ব্যাপক বিক্ষোভ মিয়ানমারকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, মডেল ও অভিনেতা পেইং তাখোন অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন এবং অনলাইনে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সরব ভূমিকা পালন করেছিলেন। মিয়ানমারে তার লাখ লাখ ভক্ত ও অনুসারি আছে।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে অং সান সু চির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। তারপর ক্ষমতা দখল করে ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করে।
তাখোনের বোনের ফেইসবুক পোস্টের ভাষ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের এক দিনে স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় আটটি সামরিক ট্রাকে করে আসা প্রায় ৫০ জন সৈন্য তাখোনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
এর আগে ২৪ বছর বয়সী তাখোনকে বেশ কিছু বিক্ষোভ ও মিছিলে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল।
তিনি ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চির বেশ কিছু ছবি পোস্ট করে তার মুক্তি দাবি করেছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই সু চিকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। সম্প্রতি ভিন্নমত উস্কে দেওয়া ও কোভিড বিধি ভঙ্গের দায়ে তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, পরে সাজার মেয়াদ কমিয়ে দুই বছর করা হয়।
“আমরা সামরিক অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানাই। স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্ট, বেসামরিক সরকারের মন্ত্রীদের ও পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্যদের আশু মুক্তির দাবি জানাই,” এক অনলাইন পোস্টে তাখোন এমনটি লিখেছিলেন বলে জানা গেছে।
“আমরা ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে শ্রদ্ধা জানানোর এবং যত দ্রুত সম্ভব এনএলডির নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টের মাধ্যমে নতুন বেসামরিক সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছি,” বলেছিলেন তিনি।
গ্রেপ্তারের পর তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়, পাশাপাশি ফেইসবুক অ্যাকাউন্টও বন্ধ করা হয়। ইনস্টাগ্রামে তার ১০ লাখেরও বেশি অনুসারি আছে। পরে এক ভক্তের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ফের সচল করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ঘনিষ্ঠ পরিচিত এক ব্যক্তি এর আগে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাখোন বিষণ্নতায় ও শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তখন সে ‘ঠিকমতো দাঁড়াতেও’ পারছিল না বলে জানিয়েছেন তিনি।
তার জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে তাখোন সে বিষয়ে ‘সজাগ’ ছিলেন এবং তা নিয়ে ‘মোটেও ভীত ছিল না’ বলে জানিয়েছেন তার সহযোগীরা।
গ্রেপ্তারের সময় সৈন্যরা তার সঙ্গে তার উভয় মোবাইল ফোনও নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন তারা।
তাখোনের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাকে কঠোর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাখোনের পরিবার আপিল করার কথা বিবেচনা করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সেনা শাসিত মিয়ানমারে তাখোনের মতো আরও কয়েকজন জনপ্রিয় তারকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন মিস মিয়ানমার সুন্দরী খেতাব জেতা তারকা ও একজন কৌতুক অভিনেতাও আছেন। তারা উভয়েই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছিলেন।
গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি বড় ধরনের জয় পেয়েছিল। এর কয়েক সপ্তাহ পর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। যদিও নির্বাচন কমিশন সামরিক বাহিনীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল।
ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অশান্তি চলছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও লড়াইয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ১৭৮ জনের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাসিস্ট্যান্স অব পলিটিকাল প্রিজনার্স (এএপিপি) ।