শনিবার সাময়িকীটির এক সম্পাদকীয়তে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বেসামাল ভারত সরকারের এমন কড়া সমালোচনা করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনডিটিভি।
বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত চিকিৎসা সাময়িকীটি বলছে, মোদী প্রশাসনের ‘নিজেদের ভুল স্বীকার’ করে নেওয়ার উপরই সঙ্কট থেকে উত্তরণে ভারতের সফলতা নির্ভর করছে।
“সঙ্কটের এই সময়ে সমালোচনা ও খোলামেলা আলোচনার কণ্ঠরোধ করতে মোদী যা করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।
“কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে প্রথম দিকে ভারতের যে সফলতা ছিল, তা তারা নিজেরাই তছনছ করে দিয়েছে। এপ্রিলের আগ পর্যন্ত, দেশটির সরকারের কোভিড-১৯ টাস্কফোর্স কয়েক মাস ধরে বৈঠকেই বসেনি। সেই সিদ্ধান্তের পরিণতি আমাদের সামনে স্পষ্ট, নিয়ন্ত্রণহীন এ সঙ্কট মোকাবেলায় ভারতের এখন উচিত তাদের উদ্যোগ ঢেলে সাজানো,” বলা হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তে।
“ওই চেষ্টার সফলতা নির্ভর করছে সরকারের নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেওয়া, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা, যার কেন্দ্রে থাকবে বিজ্ঞান,” সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে।
সাময়িকীটি বলছে, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপদ ও করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ধরনের আবির্ভাব নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সতর্ক করা সত্ত্বেও টানা কয়েক মাস শনাক্ত রোগী কম দেখে কোভিড-১৯ কে ‘পরাজিত করা গেছে’ এমন দৃশ্যকল্প হাজির করেছিল ভারত সরকার।
“মার্চের শুরুতে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শনাক্ত বাড়ার আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ভারত মহামারীর ‘শেষ অঙ্কে’ আছে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন,” উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
ল্যানসেট বলছে, “সুপার-স্প্রেডার অনুষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করা সত্ত্বেও দেশটির সরকার ধর্মীয় উৎসব চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে, যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মানুষ এসেছে। তারা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনায় সুস্পষ্ট ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বড় বড় রাজনৈতিক সমাবেশ করতে দিয়েছে।”
ভারতের কোভিড-১৯ টিকাদান নীতিকে ‘তালগোল পাকানো’ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ‘সমন্বিত নয়’ বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছে সাময়িকীটি।
“কোনো কোনো সময়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে মহামারী নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার চেয়ে টুইটার থেকে সমালোচনা সরিয়ে ফেলায় বেশি আগ্রহী দেখা গেছে।
“ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের মূল্যায়ন অনুযায়ী ভারত ১ অগাস্টের মধ্যেই ১০ লাখ মৃত্যু দেখতে পারে। তেমনটা হলে মোদী সরকারকেই নিজেদের ডেকে আনা জাতীয় বিপর্যয়ের জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হবে,” বলেছে তারা।
ল্যানসেট ছাড়াও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতজুড়ে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় মোদী সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা চলছে।
‘ভারতকে লকডাউন থেকে বের করে মোদী একে কোভিড কেয়ামতের দিকে নিয়ে গেলেন,’ সম্প্রতি ব্রিটেনের সানডে টাইমসের এক নিবন্ধের শিরোনামে এমনটাই বলা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদপত্র বলছে, “দম্ভ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা মিলে ভারতে তৈরি হয়েছে এমন এক বিরাট সংকট, যখন দেশটির নাগরিকদের সত্যি সত্যি দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম আর তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী জনতার ভিড়ে আত্মপ্রসাদে মগ্ন।”