‘বিশ্বকে নাড়িয়ে’ দিতে আওয়াজ তুলছে মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা

গণতান্ত্রিক সংস্কার ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে আসা সামরিক অভ্যুত্থানের তিন মাস পরও জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে মিয়ানমারের জনগণ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2021, 09:13 AM
Updated : 2 May 2021, 09:13 AM

রোববারও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষকে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের সঙ্গে সমন্বয় করেই বিক্ষোভকারীরা এদিনের কর্মসূচি নেয়। নাম দেয় ‘বিশ্বজুড়ে মিয়ানমারের বসন্ত বিপ্লব’।

“মিয়ানমারের জনগণের একতার আওয়াজে বিশ্বকে নাড়িয়ে দাও,” এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন আয়োজকরা।

মিয়ানমারে রোববারের বিক্ষোভকে ঘিরে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

তবে ১ ফেব্রুয়ারি নোবেলজয়ী অং সান সুচি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতায় বসা জেনারেলদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে হওয়া টানা বিক্ষোভ অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে কেবল একটি।

গত তিন মাস ধরে দেশটির উত্তর ও পূর্বের এলাকাগুলোতে জাতিগত সশস্ত্র বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই তীব্রতর হয়েছে; যার ধাক্কায় লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

কিছু কিছু এলাকায় বেসামরিক নাগরিকরা ঘরে বানানো অস্ত্র নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়ছেন। কেন্দ্রীয় এলাকার বিভিন্ন সামরিক ও সরকারি স্থাপনাগুলোতে প্রায়ই রকেট হামলা, ছোট ও রহস্যজনক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপরিচালিত সম্প্রচারমাধ্যম তাদের শনিবার সন্ধ্যার প্রধান সংবাদ বুলেটিনে আগের ৩৬ ঘণ্টায় ১১টি বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে। বিস্ফোরণগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে ইয়াংগনে; সামান্য ক্ষয়ক্ষতির কথা জানালেও বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, তা বলেনি সম্প্রচারমাধ্যমটি।

শেষ খবর পর্যন্ত কেউ এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি।

“কিছু দাঙ্গাবাজ, যারা দেশের স্থিতিশীলতা চায় না তারা সরকারি ভবন ও সড়কগুলোতে হাতে তৈরি বোমা ছুড়ছে এবং পুঁতে রাখছে,” বলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে।

এসব বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে জান্তার মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খিট থিট রোববার ইয়াংগনের একটি পুলিশ ব্যারাকের বাইরে বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়ে গেলেও হতাহতের কোনো তথ্য দেয়নি তারা। পরে শহরটিতে আরও একটি বিস্ফোরণের খবরও নিশ্চিত করেছে তারা।

উত্তরপশ্চিম শান রাজ্যের একটি সংবাদ পোর্টাল সুপরিচিত এক ব্যবসায়ীর বাড়ির বাইরে বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে।

মিয়ানমারের ঘটনাবলীর ওপর নজর রাখা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্সের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৭৫৯ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।

এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশটির সেনাবাহিনী ২৪৮ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নেয়। সহিংসতার সূত্রপাত ঘটানোর পর তাদের মৃত্যু হয়েছে, বলে সামরিক জান্তা।

অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক সদস্যও নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

তবে রয়টার্স এসব তথ্য স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি।

টানা তিন মাস ধরে বিক্ষোভের পাশাপাশি আইন অমান্য আন্দোলন ও ধর্মঘট মিয়ানমারের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

মহামারী ও রাজনৈতিক সংকটের দ্বৈত প্রভাবে ২০২২ সালের মধ্যে দেশটির আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।