চীন সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ভারতীয় কমান্ডো নিহত

পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলে চীন ও ভারত সীমান্তের প্যাংগং হ্রদের তীরে মাইন বিস্ফোরণে ভারতের স্পেশাল ফোর্সেস ইউনিটের একজন কমাণ্ডো নিহত ও অপর একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2020, 05:12 AM
Updated : 3 Sept 2020, 07:05 AM

ভারতের তিন জন সরকারি কর্মকর্তা ও নিহত কমান্ডোর পরিবারের দুই সদস্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমনটি জানিয়েছেন।  

এই ঘটনায় ভারতীয় বাহিনীর স্বল্প পরিচিত একটি অভিজাত যোদ্ধা বাহিনীর অস্তিত্বের বিষয়টি সামনে এসেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

নিহত তেনজিং নিয়াম নামের ৫৩ বছর বয়সী ওই কমান্ডো ভারতে আশ্রয় নেওয়া তিব্বতি পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে। তিনি ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের (এসএফএফ) অংশ ছিলেন বলে তার পরিবার ও ভারতের ওই সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

এসএফএফ এর অধিকাংশ সদস্যকেই ভারতে আশ্রয় নেওয়া তিব্বতি শরণার্থী পরিবারগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। ১৯৫৯ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর কয়েক লাখ তিব্বতি পরিবার দালাই লামার সঙ্গে তিব্বত থেকে পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এসএফএফ এ কিছু ভারতীয় নাগরিকও আছেন। 

রয়টার্স জানিয়েছে, ১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধের পর গোপন এই বাহিনীটি গড়ে তোলা হয়, প্রকাশ্যে এদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য নেই। ভারতীয় দুই কর্মকর্তার হিসাবমতে, এই বাহিনীটিতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সৈন্য আছে।

ভারতীয় সরকারের তিব্বত বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অমিতাভ মাথুর রয়টার্সকে বলেছেন, “সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট উচ্চতায় যুদ্ধ ও পবর্তারোহণে পারদর্শী এসএফএফ মূলত ক্রাক ফোর্স।

“যদি তাদের মোতায়েন করা হয়, আমি আশ্চর্য হবো না। তদের উঁচু পর্বতগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তারা অত্যন্ত দক্ষ পবর্তারোহী ও ভয়ঙ্কর কমান্ডো।”

এসএফএফ এর বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও ভারতের প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ভারতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তিব্বতিদের উপস্থিতিকে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ভৌগলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে চীন। শরণার্থীদের নেতৃত্বদানকারী তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামাকে ‘বিপজ্জনক বিচ্ছন্নতাবাদী’ হিসেবে দেখে বেইজিং।

দালাই লাম জানিয়েছেন, তিনি শুধু তার মাতৃভূমির সত্যিকার স্বায়ত্তশাসন চান।

বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছানইং বলেছেন, তিব্বতিরা ভারতের হয়ে যুদ্ধ করছে কি না, তা তার জানা নেই কিন্তু সাবধান থাকতে হবে।

তিনি বলেন, “ভারতসহ যে কোনো দেশেরই তিব্বতীয় স্বাধীনতাপন্থি বাহিনীগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার সমর্থন অথবা তাদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতা ও ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার দৃঢ় বিরোধী আমরা।”

চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেক সীমান্ত এলাকায় চীন ও ভারতীয় বাহিনী প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে এসেছিল বলে দেশ দুটির সরকার জানিয়েছে। জুনে একই এলাকায় দুই বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল। চীনে তাদের দিকে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

গত শনিবার লাদাখে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে একজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন, বিদেশি সংবাদমাধ্যমে এমন খবর এসেছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তবে এ নিয়ে নয়া দিল্লি বা ভারতের সেনাবাহিনী সরকারিভাবে কিছু জানায়নি বলে জানিয়েছে তারা।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে নিহত ওই সেনা তিব্বতি এবং তিনি ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সদস্য ছিলেন বলে জানানো হয়েছে। কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, নিয়াম তেনজিং নামের বিকাশ রেজিমেন্টের ওই সেনার মৃত্যু হয়েছে মাটিতে থাকা পুরনো মাইন ফেটে। 

তাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনায় ভারতের কোনো সেনার মৃত্যু হয়নি, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমনটি জানিয়েছে বলেও দাবি করেছে আনন্দবাজার।

ভারতীয় ও তিব্বতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত নিয়ামের কফিন ভারতের লাদাখ অঞ্চলের চগলামসার গ্রামের তিব্বতি শরণার্থী শিবিরে রাখা ছিল।

নিয়ামের দুই জন শোকহত আত্মীয় ও দুই জন প্রতিবেশী রযটার্সকে জানিয়েছেন, যে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা কফিনটি এখানে নিয়ে এসেছিলেন তিনি বলেছেন, ‘ভারতকে রক্ষা করতে গিয়ে’ নিয়ামের মৃত্যু হয়েছে।