আম্পানে লণ্ডভণ্ড পশ্চিমবঙ্গ

ভারতে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা। অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2020, 03:42 PM
Updated : 20 May 2020, 06:28 PM

তিনি বলেন, ঝড়টি পুরোটাই পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এতে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ধ্বংস হয়ে গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভূমিতে ঢুকে পড়তে শুরু করে। সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্পান। কলকাতায় ঘণ্টায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া।

এর জেরে লন্ডভণ্ড হয় কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেরও হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপালা ভেঙেছে। ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ঝড়ে তিন জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

হাওড়ার শালিমারে ঝড়ে উড়ে যাওয়া টিনের আঘাতে মারা গেছে ১৩ বছরের এক কিশোরী। মিনাখাঁয় মাথায় গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক নারীর। বসিরহাটে বাড়ির উঠোনে গাছ ভেঙে পড়ে মারা গেছে ২০ বছরের এক তরুণ।

ওদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, “মৃতের সংখ্যাটা এখুনি বলা যাচ্ছে না। ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি।” রাত ৮টার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, এখনও বিপদ কাটেনি বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

উপকূলীয় সুন্দরবন, দিঘাসহ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহু এলাকা, মন্দারমণি, শংকরপুর, তাজপুর, কুলপি, পাথরপ্রতিমা, নামাখানা, বাসন্তী কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড়, কাকদ্বীপ মিনাখাঁ, রাজারহাট, বনগাঁ, বাগদা, হাবড়া, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হাড়োয়া-সহ উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অংশ ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

পানির তোড়ে ভেসে গেছে সড়ক, সেতু, বাড়িঘর। ভেঙে গেছে বহু নদীর বাঁধ, নষ্ট হয়েছে চাষের জমি। আম্পানের প্রভাবে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। ঝড়ের দাপট বিকেলের পর থেকে বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। 

পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ের দাপট বাড়ে। দিঘায় সকাল থেকেই সমুদ্র ছিল উত্তাল। প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। সমুদ্রবাঁধও কিছু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। উপকূলীয় অনেক জায়গাতেই বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে এখনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। বেশির ভাগ জায়গাই বিপর্যস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে ৩/৪দিন লাগবে। দক্ষিণবঙ্গর প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কলকাতার মানুষ গত ৫০ বছরে এমন ভয়াবহ ঝড় দেখেনি। শহরের অন্তত ৩০টি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। শত শত গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে গোটা শহর।

তবে এত ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েও এখনই বিদায় হচ্ছে না আম্পান, বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস । কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে এ দুর্যোগ।

২১ তারিখ সকাল পর্যন্ত রাজ্যের অনেক জায়গায় ১১৫-১৩০ কিমি বেগে ঝড় বইবে। বাংলাদেশ ঘেঁষা নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনায় ঘূর্ণিঝড় তার অস্তিত্ব জানান দেবে।

পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলিতেও প্রবল বৃষ্টিপাত হবে। ঝড় বইবে ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে। উত্তরবঙ্গেও মালদা, উত্তর দিনাজপুরে সকাল থেকেই বৃষ্টি বাড়বে। এরপর ধীরে ধীরে কমবে ঝড়ের গতিবেগ।