ভারতে ধর্ষণের শিকার কিশোরী ‘সন্দেহজনক দুর্ঘটনায়’ আহত

ভারতের উত্তর প্রদেশে প্রভাবশালী এক বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা একজন কিশোরী সন্দেহজনক এক দুর্ঘটনায় তার আইনজীবীসহ গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2019, 07:23 AM
Updated : 29 July 2019, 08:39 AM

রোববার রায়বেরেলির ওই দুর্ঘটনায় কিশোরীর চাচি ও তার পরিবারের অপর এক নারী সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। 

ওই কিশোরী ও তার আইনজীবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিশোরী বিপদমুক্ত হয়েছেন বলে উত্তর প্রদেশের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন।

২০১৭ সালে রাজ্যটির বিজেপি বিধায়ক কুলদ্বীপ সেঙ্গার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধষর্ণ করেছিলেন বলে অভিযোগ। ওই অভিযোগে কুলদ্বীপ এক বছর ধরে জেলে আছেন। 

এ দুর্ঘটনায় কুলদ্বীপের হাত আছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই কিশোরীর মা।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “বিধায়ক এটা ঘটিয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। সে জেলে থাকলেও তার কাছে ফোন আছে। জেলে বসে সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।

“সেঙ্গার জেলে থাকলেও তার লোকজনতো আর জেলে নেই। সে ও তার লোকজন আমাদের হুমকি দিচ্ছিল। আমরা বিচার চাই।”

রাজ্যের রাজধানী লক্ষ্ণৌ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে উন্নাওয়ে এই পরিবারটির বাড়ি। তারা সেখানেই বসবাস করেন।

রোববার বিকালে রায়বেরেলির জেলা কারাগারে বন্দি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চাচার সঙ্গে দেখা করার জন্য একটি প্রাইভেট কারযোগে সেখানে গিয়েছিলেন ওই কিশোরী ও তার সঙ্গীরা। পৃথক আরেকটি ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন তার চাচা।

দুর্ঘটনায় পড়া ট্রাকটির নাম্বার প্লেট কালো কালি দিয়ে ঢাকা। ছবি: এনডিটিভি

ফেরার পথে প্রবল বৃষ্টি মধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে তাদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কিশোরীদের বহনকারী সাদা রঙের একটি গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে যায়।    

পরে দেখা যায় দুর্ঘটনায় পড়া ট্রাকটির নাম্বার প্লেট কালো কালি দিয়ে ঢেকে রাখা আছে। আর নির্যাতিত ওই কিশোরীর সঙ্গে যে নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকার কথা ছিল, তারাও তার সঙ্গে ছিলেন না।

রাজ্যের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এটিকে একটি দুর্ঘটনা বলেই ধরে নেওয়া হয়েছে, তবে ওই পরিবারটি যদি চায় তাহলে সিবিআইকে (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) দিয়ে তদন্ত করতে সহায়তা করবেন তারা।

ট্রাকের নাম্বার প্লেট কালি দিয়ে ঢাকা কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পুলিশ প্রধান জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। তাদের কল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

“প্রত্যেকটা দিক খতিয়ে দেখা হবে, কিন্তু প্রাথমিকভাবে, এটিকে দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে,” বলেছেন পুলিশ প্রধান।

এর পাশাপাশি ওই কিশোরীর সঙ্গে যে নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকার কথা, তারা কেন ছিল না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

২০১৭ সালে এক আত্মীয়ের সঙ্গে কুলদ্বীপের উন্নাওয়ের বাড়িতে তার কাছে চাকরির তদ্বির করতে যাওয়ার পর বিধায়ক তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওই কিশোরীরা।

ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে আত্মহুতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওই কিশোরী ও তার মা। ওই সময় এ ঘটনা ভারতজুড়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল।

কিশোরীর মামলা এগিয়ে নিতে সহায়তা করছিলেন তার বাবা। কিন্তু একটি অস্ত্র মামলায় তাকে আটক করে দুই দিন হেফাজতে রাখে পুলিশ। ওই সময় তাকে বেদম প্রহার করা হয়।

কুলদ্বীপ সেঙ্গারের ভাই তাকে প্রহারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। 

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে ওই কিশোরী যে দিন আত্মহত্যার চেষ্টা করে তার পরদিন তার বাবা শরীরে আঘাতজনিত কারণে হাসপাতালে মারা যায়।

এরপর উত্তর প্রদেশের বাঙ্গেরমাউ থেকে চারবারের নির্বাচিত বিধায়ক কুলদ্বীপ সেঙ্গার ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপরাধের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনেছে সিবিআই। সিবিআই আদালতকে জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ৪ জুন রাত প্রায় ৮টার দিকে বিজেপির এ বিধায়ক ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেছিলেন।