যোগী সরকারকে ভর্ৎসনা, সাংবাদিককে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়া গ্রেপ্তারের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের তীব্র ভর্ৎসনা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কিভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হল সে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে প্রশান্তকে মুক্তিরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2019, 12:52 PM
Updated : 11 June 2019, 01:30 PM

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে জেলে বন্দি প্রশান্ত। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন। সে ভিডিওয় এক নারী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার দাবি করেন এবং জীবনের বাকি সময়টা তিনি যোগীর সঙ্গেই কাটানোর ইচ্ছার কথা বলেন।

ভিডিওটি পোস্ট করে কানোজিয়া ক্যাপশনে আপত্তিকর টুইটও লিখেছিলেন। এতে হিন্দি ভাষায় যোগী কে সম্বোধন করে ‘প্রেম লুকিয়ে রাখতে চাইলেও লুকানো যায় না’ বলে মন্তব্য করেন প্রশান্ত।

এ টুইট পোস্টের পরই মুখ্যমন্ত্রীর ‘মানহানি’ করার অভিযোগে পুলিশ শনিবার প্রশান্তকে লখনউ এ তার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। প্রশান্তের এ গ্রেফতারি ‘অবৈধ’ এবং ‘অগণতান্ত্রিক’ অভিযোগ তুলে জরুরি ভিত্তিতে তার মুক্তির আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী জাগিশা অরোরা।

সেই মামলার শুনানিতেই আদালত মঙ্গলবার বলেছে, “সাংবাদিকের টুইটকে আমরা সমর্থন করছি না, তবে কীভাবে তাকে জেলে ভরা হল? একজন নাগরিকের স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। তার কাজ ঠিক না বেঠিক তা নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু গ্রেপ্তার? কোন ধারায় তাকে গ্রেপ্তার করা হল? তিনি কি খুনের আসামি ?”

সরকার পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি ছিল, কানোজিয়াকে ছাড়া হলে তার টুইট মেনে নেওয়া হবে। জবাবে আদালত বলেছে, “তা নয়। বরং তিনি মুক্তি পেলে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃতি পাবে। এটি কোনো খুনের ঘটনা নয়। তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয়েছিল। ২২ জুন পর্যন্ত রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে কখনোই স্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। একজন এভাবে বিনা বিচারে ১১দিন হাজতে কাটাতে পারে না।”

টুইটে যা পোস্ট করা হয়েছে তা কাম্য নয় বলে আদালত জানিয়েছে। তবে বলেছে, কাউকে গ্রেপ্তারের কারণ এটা হতে পারে না। আর সেকারণেই উত্তরপ্রদেশ সরকারকে অবিলম্বে সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়াকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

বিবিসি জানায়, কানোজিয়াকে মানহানি সংক্রান্ত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় এবং ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে এক আইনজীবী অর্জুন শেওরান বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, “৫০০ ধারায় গ্রেপ্তারের কোনো বিধান নেই। প্রথমে অভিযোগ প্রমাণ হতে হবে। তারপর অভিযুক্তকে ডাকা হবে। আর সাজা না শোনানো পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হতে পারে না। এখানে স্পষ্টতই আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার হয়েছে।”

আর ৬৬ ধারার ব্যাপারে তিনি বলেন, হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই এ আইনের প্রয়োগ হয়। এক্ষেত্রে আদিত্যনাথ যদি মনে করে থাকেন টুইটের মন্তব্য মানহানিকর ছিল তাহলে তাকে মামলা দায়ের করতে হবে। তখন অভিযুক্তকে ডাকা হবে এবং তারপর বিচারে তাকে সাজা শোনানো হতে পারে।

প্রশান্ত গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল সামলোচনার ঝড় উঠেছিল। প্রশান্তর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আরো দুজন সাংবাদিক এবং অন্য আরো তিনজন সহ মোট ছয়জনের মুক্তির দাবিতে সোমবার দিল্লিতে বিক্ষোভ হয়েছে।

বাকিদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ ওঠে। আর সে অভিযোগেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এত অল্প সময়ে এতজন গ্রেপ্তারের ঘটনায় মানুষের বাক স্বাধীনতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়া নিয়ে জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল।

এখন সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিক মুক্তির নির্দেশের পর অনেকটাই স্বস্তি ফিরবে। আদালতের রায়ের পর কানোজিয়ার স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি এখন খুবই খুশী। ভারতীয় সংবিধানে তিনি আস্থাশীল এবং তার স্বামীও কোনো আক্রমণাত্মক কিছু করেননি।