স্থানীয় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম জানায়, মঙ্গলবার লোকজন সড়কে নেমে আনন্দ মিছিল করেছে, কোথাও কোথাও মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থকরা বাজি পুড়িয়ে উল্লাস করেছে।
মানুষের এ প্রতিক্রিয়া ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসমর্থন বাড়ারই লক্ষণ, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হয়। পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিদল জইশ-ই-মোহাম্মদ ওই হামলার দায় স্বীকার করে।
প্রতিশোধ নিতে মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। হামলা তিনশতাধিক জঙ্গি এবং ২৫ জনের বেশি প্রশিক্ষক নিহত হয়েছে বলে দাবি ভারত সরকারের।
বিমান হামলার এ খবর প্রকাশের পরই পুলওয়ামায় নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যরা সন্তুষ্টি এবং মোদী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’।
হামলায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান কৌশল কুমার রাওয়াতের (৪৮) ছেলে অভিষেক রাওয়াত বলেন, “আগামীকাল আমার বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। তার আগে ভারতের বিমানবাহিনী এবং সরকার আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার দিয়েছে। তারা আমার বাবা ও তার সহকর্মীদের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে। তাদেরকে নমস্কার।”
নিহত কৌশলের ভাই কামাল রাওয়াত বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। তিনি নিজের কথা রেখেছেন।”
মোদী যে কেবল সমর্থন পাচ্ছেন তাই নয় বরং বিমান হামলায় জঙ্গি নিহতের খবর নিয়ে বিতর্ক থাকার পরও ভারতীয়রা সরকারের ভাষ্যই বিশ্বাস করছে।
আগামী মে মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। তার আগে দিয়ে জঙ্গিদের ওপর এ বিমানহামলা মোদীর নির্বাচনী পালে হাওয়া লাগার পট প্রস্তুত করেছে। কৃষকদের আয়ের নিম্নগতি এবং দেশজুড়ে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক মাসে মোদী সরকার ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছিল। এখন স্বাভাবিকভাবেই ভোটারদের মধ্যে মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়াবে। কারণ, দেশপ্রেম সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়।
জম্মু ও কাশ্মীরের এক গাড়ি চালক রয়টার্সকে বলেন,“মোদী জি শেষ পর্যন্ত এটা করে দেখিয়েছেন। এখানে মানুষের মনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ জমে আছে।”
ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) ক্ষমতা থেকে টেনে সরাতে ভারতের প্রভাবশালী যে বিরোধীদলগুলো জোট বেঁধেছে তারা বালাকোটে বোমাবর্ষণের পর সরাসরি মোদীর প্রশংসা না করলেও বিমানবাহিনীর প্রশংসা ঠিকই করেছে।
প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধী এক টুইটে বলেছেন, “আমি আইএএফ পাইলটদের স্যালুট করছি।”
ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষক সঞ্জয় কুমার বলেন, “আমার মনে হয় এ ঘটনা বিজেপির নির্বাচনী পালে জোর হাওয়া দেবে। জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। যে কারণে স্বাভাবিক ভাবেই লোকজন নির্বাচনী মুডে আছে। আর ঠিক এই সময়ে সরকার পাকিস্তানকে একটি শিক্ষা দিতে পেরেছে।”
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই পাশে গোলাগুলি চলছে।