প্রায় তিন যুগ আগের ওই দাঙ্গার সময় পাঁচ জনকে হত্যা ও একটি গুরুদুয়ারা পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ থেকে নিম্ন আদালতে খালাস পেয়েছিলেন ৭৩ বছর বয়সী সজ্জন কুমার।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে দিল্লির বিচারপতি এস মুরালিধর ও বিচারপতি ভিনোদ গোয়েলের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, শত্রুতার উসকানি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে তৎপরতার’ দায়ে সজ্জন কুমারকে দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় দিয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর।
১৯৮৪ সালের নভেম্বরের ওই দাঙ্গায় ভারতজুড়ে তিন হাজারের বেশি শিখ নিহত হন। উত্তেজিত জনতা শিখদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের নির্বিচারে হত্যা করে।
ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজের শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হলে ছড়িয়ে পড়ে ওই দাঙ্গা।
সোমবার দিল্লি হাই কোর্টের এই রায়কে ওই দাঙ্গার ঘটনায় এ পর্যন্ত আসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় হিসেবে বর্ণনা করেছে বিবিসি।
দাঙ্গার সময় কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমার ছিলেন একজন পার্লামেন্ট সদস্য। শিখদের হত্যার জন্য তিনি জনতাকে উসকে দিয়েছিলেন বলে উঠে এসেছে এ মামলার রায়ে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দোষী হওয়ার পরও ‘রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়’ নিম্ন আদালত থেকে বিচার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন সজ্জন।
দিল্লি ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর সেই দাঙ্গার মধ্যে উন্মত্ত জনতা নিরপ্রিত কাউরের বাবাকে তার সামনেই পুড়িয়ে হত্যা করে। ৩৪ বছর পর বিচার পাওয়ায় ক্রন্দনরত নিরপ্রিত আদালতকে ধন্যবাদ জানান।
সজ্জনের আজীবন কারাবাসের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “মৃত্যুদণ্ড হলে এক মূহুর্তেই সে মারা যেত, কিন্তু এখন সে যন্ত্রণাভোগ করবে।”
এ মামলার বিচারে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছিলেন, তারা দিল্লির সুলতানপুর এলাকায় সজ্জন কুমারকে দেখেছেন উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে উত্তেজিত করে তুলতে।
এক নারী প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে বলেছিলেন, একদল জনতার সামনে সজ্জন কুমারকে ভাষণ দিতে দেখেছেন তিনি। এই কংগ্রেস নেতা সেখানে বলেছিলেন “শিখরা আমার মাকে হত্যা করেছে।” ‘মা’ বলতে তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে বুঝিয়েছিলেন।
কিন্তু তারপরও নিম্ন আদালতের রায়ে সজ্জন কুমার খালাস পেলে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই হাই কোর্টে আসে।
অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে শিখ বিদ্রোহীরা আশ্রয় নেওয়ায় ১৯৮৪ সালের প্রথম দিকে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠান প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
শিখদের ‘সবচেয়ে পবিত্র’ উপাসনালয়ে ওই অভিযানের কারণে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তার শিখ দেহরক্ষীরা।
হাই কোর্টের ২০৩ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, “১৯৪৭ সালের গ্রীষ্মে ভারত ভাগের সময় শিখ, মুসলিম ও হিন্দুসহ বহু লোক হত্যার শিকার হয়েছিলেন। ৩৭ বছর পর ভারত একই ধরনের আরেকটি শোকাবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে, ওই বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর চার দিনে, পুরো দিল্লিতে ২ হাজার ৭৩৩ জন শিখকে নির্দয়ভাবে খুন করা হয়। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়। দেশের বাকি অংশে আরও কয়েক হাজার শিখকে হত্যা করা হয়।”