শোকসভায় অমিত হাবিব স্মরণ

সংবাদকে তিনি কীভাবে দেখতেন, সহকর্মীদের মধ্যে কীভাবে ছড়িয়ে দিতেন যুক্তির আলো, সেসব কথা উঠে এল অমিত হাবিব স্মরণে আয়োজিত এক শোকসভায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2022, 07:23 PM
Updated : 3 Sept 2022, 07:23 PM

কবি হতে চাওয়া অমিত হাবিব হয়ে উঠেছিলেন বার্তাকক্ষের প্রাণ; সাংবাদিকতায় তিনি পথ দেখিয়েছেন অনেককে।

সংবাদকে তিনি কীভাবে দেখতেন, সহকর্মীদের মধ্যে কীভাবে ছড়িয়ে দিতেন যুক্তির আলো, সেসব কথা উঠে এল অমিত হাবিব স্মরণে আয়োজিত এক শোকসভায়।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে সেই শোকসভায় তার সহকর্মীরা যেমন ছিলেন, তেমনি এসেছিলেন সরকারের মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা।

‘অসীমে অমিত’ শিরোনামে এই স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল দৈনিক দেশ রূপান্তর। সাড়ে তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে রূপান্তর ছিল তার শেষ কর্মস্থল।

কর্মস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়লে লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়েছিল দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবকে। গত ২৯ জুলাই ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৮ বছর বয়সী এ সাংবাদিকের জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে স্মরণসভা শুরু হয় সৌরভ সরকারের বাঁশির সুরে। অমিত হাবিব স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

তার জীবন ও কর্মের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। স্মৃতিচারণ করে স্বাগত বক্তব্য দেন দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বলেন, "এমন অনেক কথা যা রাষ্ট্র-সমাজ ভাবে না, সেসব বিষয় তুলে আনাই একজন সাংবাদিকের কাজ। আর অমিত হাবিব সেটা খুব ভালোভাবে করতেন। অমিত বয়সে আমার ছোট ছিলেন, কিন্তু আমার আগেই চলে গেলেন।"

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অমিত হাবিবের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের পরিচালক ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

অভিনেতা, নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, "অমিত হাবিব বয়সে আমার ছোট ছিলেন। কিন্তু তার যে কর্মময়তা, এই সময়ে তার যতটুকু কাজ আমরা দেখেছি, তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।"

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব- উল আলম হানিফ বলেন, "সমাজতন্ত্রের ভাবধারায় অমিত হাবিবের আদর্শ ও চেতনা ছিল। সমাজ এবং দেশ পরিবর্তনের একটা আকাঙ্ক্ষা তার ছিল। মানুষের সম-অবস্থানের মানসিকতা নিয়েই তার পথচলা ছিল।"

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও টিভি টুডের এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, "সাংবাদিকদের নিয়ে নানা আলোচনা আছে। সাংবাদিকতা নিয়েও সমালোচনা আছে। কিন্তু অমিত হাবিব ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন। তার প্রয়াণ দেশের ভালো সাংবাদিকতার বড় ক্ষতি।"

অনুষ্ঠানে অমিত হাবিবের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছোট ভাই ফয়জুল হাবিব রাঙা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, "তার মৃত্যুতে আমরা পরিবারের একজন অভিভাবক হারালাম।"

কলামিস্ট এম এ মোমেন বলেন, "অমিত হাবিব কারো দালালি করতেন না। তিনি মানুষের কথা চিন্তা করতেন।"

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ ম গোলাম কিবরিয়া বলেন, "পত্রিকা জগতে অমিত হাবিবের যে অবদান, তাতে তার কর্মই তাকে যুগের পর যুগ বাঁচিয়ে রাখবে।"

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, "অমিত হাবিবের কাছে যারা সাংবাদিকতার তালিম নিয়েছেন, তার প্রতি তাদের দায় রয়েছে।"

দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুল বলেন, "অমিত হাবিব আমাদের মনে এখনো আছেন এবং ভবিষ্যতেও তাকে ধারণ করব।"

দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, "মানুষকে প্রভাবিত করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল অমিতদার। সেটি সংবাদ দিয়ে হোক কিংবা আড্ডার ছলে যুক্তি দিয়ে।

“নিজেকে সবসময় লুকিয়ে আড়ালে রাখতে পছন্দ করলেও অন্যের মাঝে আলো ছড়াতেন তিনি। সংবাদে বৈচিত্র্যে আধুনিকতাকে ধারণ করতেন তিনি অন্যরকমভাবে।"

অন্যদের মধ্যে সাংবাদিক গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ, সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল মান্নান, রূপায়ন গ্রুপের উপদেষ্টা আব্দুল গাফ্ফার খানসহ দেশ রূপান্তরে অমিত হাবিবের সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।