ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে শঙ্কা এখন ‘বাস্তব দুঃস্বপ্ন’: সম্পাদক পরিষদ

সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট ও লেখকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের একটি সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2020, 06:15 AM
Updated : 8 May 2020, 06:15 AM

সংগঠনের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে- সেই শঙ্কায় সম্পাদক পরিষদ শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল। সেই শঙ্কা এখন গণমাধ্যমের জন্য বাস্তব দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।”

সম্পাদক পরিষদ বলেছে, “দুর্বল ও অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট ও লেখকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করার ঘটনাগুলো আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছি। অভিযোগের আদৌ কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না- তা গ্রেপ্তারের আগে আমলে নেওয়ার কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না।

“'ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া', 'গুজব ছড়ানো', অথবা 'সরকারের সমালোচনা' করার মত অভিযোগই এখন সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোর জন্য যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়া মানেই প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা গ্রেপ্তারে গড়াচ্ছে।”

সম্প্রতি ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করার ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “এসব মামলার বেশিরভাগের পেছনে রয়েছে আইনপ্রণেতা, জেলা প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনদের সাধারণ সমালোচনা।”

সম্পাদক পরিষদ বলছে, “সাধারণভাবে আইনপ্রণেতারা সবসময় মুক্ত গণমাধ্যম, মুক্ত চিন্তা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাম্প্রতিক একের পর এক মামলার পেছনে রয়েছেন তাদেরই কেউ কেউ।

“বিদ্যমান আইনে মানহানির মামলার বদলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার এই আগ্রহ এটাই ইংগিত করে যে, সুবিচারপ্রাপ্তি নয়, সাংবাদিকদের ভয় দেখানো ও হয়রানি করাই এর উদ্দেশ্য।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর প্রকাশ করা এবং প্রশাসনের ব্যর্থতাগুলো ধরিয়ে দেওয়া গণমাধ্যমের সহজাত কর্তব্য ও দায়িত্ব। আর বর্তমান মহামারী এবং এর অভিঘাত মোকাবিলায় সরকার যখন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, তখন এই দায়িত্ব পালন আরও জরুরি।”

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মামলা ও তাদের গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলোকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ‘স্পষ্ট হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে সম্পাদক পরিষদ।

“আমরা অবিলম্বে সকল সাংবাদিকের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমরা গণমাধ্যম এবং সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারের নিন্দা জানাই এবং ওই আইন বিলোপের দাবি জানাই।”

সম্পাদক পরিষদ বলছে, “মহামারী এবং এর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুরো জাতিকে এখন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এমন ভূমিকা এবং সাংবাদিকদের অহরহ গ্রেপ্তার করার এসব ঘটনা সেই ঐক্যের চেষ্টাকে কেবল ক্ষতিগ্রস্তই করবে।