ডায়াবেটিকদের জন্য সবচেয়ে খারাপ মিষ্টান্ন

যে কার্বোহাইড্রেইট দ্রুত শরীরে হজম হয়, সেসব খাবার ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2022, 06:23 AM
Updated : 14 Sept 2022, 06:23 AM

ডায়াবেটিস রোগে মিষ্টি নিষিদ্ধ নয়, তবে কিছু মিষ্টিজাতীয় খাবার অবশ্যই বাদ দিতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস’য়ের ‘ন্যাশনাল মিডিয়া স্পোকসপার্সন’ পুষ্টিবিদ রোক্সানা ইশানি বলেন, “কোন ধরনের ‘কার্বোহাইড্রেইট’ খাচ্ছেন সেই বিষয়ে একজন ডায়াবেটিস রোগীকে খুব সাবধান থাকতে হয়। ‘কার্বোহাইড্রেইট’য়ের বিভিন্ন উৎস রক্তের শর্করার মাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।”

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই পুষ্টিবিদের দেওয়া তথ্যানুসারে জানানো হয়, যেমন- পরিপূর্ণ শষ্য, ফল, সবজি ইত্যাদি হল ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’ যা ভাঙতে ও হজম করতে শরীরের সময় লাগে বেশি। ফলে তা শরীরকে একইতালে শক্তি যোগায় লম্বা সময়।

অপরদিকে পাউরুটি, পাস্তা, সিরিয়াল, ডেজার্ট, শরবত, আইসক্রিম এগুলো হল ‘সিম্পল কার্বোহাইড্রেইট’ যা দ্রুত হজম হয়ে যায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হুট করে বেড়ে যায়।

একই প্রতিবেদনে ‘জেনকি নিউট্রিশন’য়ের কর্ণধার এবং ‘নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়টেটিকস’য়ের আরেক মুখপাত্র জনাথন ভালদেজ বলেন, “ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ধারাবাহিকভাবে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ খেতে হবে। ‘সিম্পল কার্বোহাইড্রেইট’ বাদ দিয়ে ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’ বেছে নিতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে ‘ফাইবার’ বা আঁশ ও প্রোটিন।” 

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ান অ্যান্ড ওয়ান’য়ের পুষ্টিবিদ সিলভিয়া কার্লি বলেন, “চিনি ডায়াবেটিস রোগীর একেবারে শত্রু, ব্যাপারটা তা নয়। আসল ব্যাপার হল পরিমাণ, গুণগত মান, খাওয়ার সময় আর কোন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হল এই বিষয়গুলো।”

ডায়বেটিকদের ‘ইন্সুলিন’য়ের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে রক্ত থেকে শর্করা টেনে এনে তাকে কর্মশক্তিতে পরিণত করতে সমস্যা হয়।

ক্যান্ডি: পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাওয়া হোক না কেনো, যদি জনবসতি থাকে তবে ক্যান্ডিও আছে।

ইশানি বলেন, “ক্যান্ডি আসলে শুধুই চিনি। এতে চর্বি, আঁশ, প্রোটিন কিছুই তেমন থাকে না। তাই যে কেউ এটি খেলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে। ডায়াবেটিস থাকলে তো কথাই নেই। এমনকি ‘সুগার ফ্রি’ ক্যান্ডিতেও চিনি থাকে যা ডায়বেটিস রোগীর জন্য বিপজ্জনক। ক্যান্ডির কার্বোহাইড্রেইট’য়ের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণই হল এতে থাকা চিনি।”

আইসক্রিম: ভালদেজ বলেন, “প্রচুর চিনি আর চর্বি আছে এতে। অন্যদিকে প্রোটিন আর আঁশ আছে খুব সামান্য। চর্বি রক্তে শর্করার মাত্রা চট করে বাড়িয়ে দেওয়া থেকে কিছুটা প্রতিহত করে ঠিক কিন্তু ডায়বেটিস রোগীর জন্য তা প্রযোজ্য নয়।”

স্কোন্স (প্যাটিস ধরনের খাবার): ইশানি বলেন, “বেকারিতে তৈরি হওয়া এই ধরনের মজাদার খাবারের উপাদান হল চিনি আর ময়দা। দুটোই ‘সিম্পল কার্বোহাইড্রেইট’। এছাড়াও এতে থাকে মাখন, যা আবার ‘স্যাচুরেটেইড ফ্যাট’। ডায়াবেটিকদের জন্য এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ বিপজ্জনক। কারণ এই উপাদানগুলোই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ডেকে আনে।”

শরবত বা জুস: ভালদেজ বলেন, “অধিকাংশ জুসেই প্রচুর কার্বোহাইড্রেইট মেলে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা তাৎক্ষণিক বাড়িয়ে দেয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় যদি কমে যায় তবে সেক্ষেত্রে শরবত খাওয়া যেতে পারে।”

কেক: ইশানি বলেন, “চিনিতে ভরপুর তো থাকেই, সঙ্গে আছে ক্রিম, কাস্টার্ড, আইসিং আরও কত কি! পুরো খাবারটাই হল চিনি আর ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ের ভাণ্ডার। আর দুটোই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তাই কেক শুধুমাত্র উপলক্ষ্যে খাওয়া জন্যই তোলা থাকা উচিত।”

সিনামন রোল আর হানিবান: কার্লি বলেন, “চিনি, প্রক্রিয়াজাত ময়দা দিয়ে তৈরি হয় এই খাবারগুলো। ওপরে ‘টপিং’ হিসেবে থাকে ‘আইসিং’। সবই রক্তে শর্করার মাত্রাকে বিস্ফোরিত করবে।”

ডোনাট ও পেস্ট্রি: ভালদেজ বলেন, “প্রচুর চিনি আর চর্বি দিয়ে তৈরি হয় ডোনাট ও পেস্টি। ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য ডোনাটকে নিষিদ্ধই বলা চলে।”

আরও পড়ুন

Also Read: ডায়াবেটিস হওয়ার পূর্বাভাস

Also Read: ডায়াবেটিস এড়াতে উপকারী খাবার

Also Read: ডায়াবেটিস সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা