যেসব নাস্তা পেটের বারোটা বাজায়

শুধু ভাজাপোড়া নয়, কৃত্রিম চিনি দেওয়া খাবারও অন্ত্রে বাজে প্রভাব ফেলে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2023, 08:18 AM
Updated : 25 April 2023, 08:18 AM

প্রতিদিন নাস্তা হিসেবে যা খাওয়া হয় সেগুলো থেকেও হতে পারে হজমে সমস্যা।

তিনবেলা খাবারের পাশাপাশি নানান ধরনের টুকটাক খাবার খাওয়া হয়। আর সেসবের মধ্যে অনেক খাবারই আছে যা কিনা পুরো হজমযন্ত্রেই বিরূপ প্রভাব ফেলে।

মিষ্টি

অল্বস্বল্প মিষ্টি খাওয়া যেতেই পারে। তবে অতিরিক্ত খেলে পুরো দেহেই বাজে প্রভাব ফেলে, এরমধ্যে হজমযন্ত্রও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া’র নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “উচ্চমাত্রায় চিনি দেওয়া খাবার দেহে বাজে প্রভাব ফেলে, সেটা আমাদের সবারই জানা। তবে পেটের স্বাস্থ্যও যে খারাপ করে সেটা অনেকেই জানেন না।”

“চিনিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খেলে অন্ত্রের ভালো ও খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার ভারসম্যে ক্ষতি হয়, গ্যাস ও ফোলাভাবের সৃষ্টি হতে পারে, পেট ব্যথা করতে পারে, পায়খানা পাতলা হতে পারে।”

তবে সব মিষ্টি যে খারাপ তা নয়। ‘ডার্ক চকলেট’ খেয়েও মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে পূরণ করা যায়।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস

যেকোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে টুকটাক নাস্তায় করতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের অর্ডার দেওয়াই হয়। তবে লবণযুক্ত ও ডুবো তেলে ভাজা যে কোনো খাবারের মতো এই খাবারও পেটের জন্য ক্ষতিকর।

একই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্টের পুষ্টিবিদ স্টেফ মিগ্যাল বলেন, “ডুবো তেলে ভাজা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে থাকে উচ্চ মাত্রায় স্যাচুরেইটেড ফ্যাট ও লবণ। এগুলো অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ কমায়। যার ফলে হয় পেটে প্রদাহ।”

এর পরিবর্তে নাস্তায় দই বা ফলের সালাদ খাওয়া উচিত।

চিপস

আলু এমনিতে পুষ্টিকর খাবার। তবে আলু দিয়ে তৈরি চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতোই তেলে ভাজা; যা অস্বাস্থ্যকর আর পেটের জন্যও খারাপ।

মিগ্যাল বলেন, “ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো পটেটো চিপস’ও দেহে ও পেটে বাজে প্রভাব ফেলে। আর উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার হজমের গতি কমায়, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”

চিনি-মুক্ত মিষ্টি

অর্থাৎ কৃত্রিম চিনিও খারাপ।

এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ জুলি বালসামো বলেন, “কৃত্রিম চিনি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে থাকা ব্যাক্টেরিয়ার মাঝে যোগাযোগে সমস্যা তৈরি করে, ফলে পেটে প্রদাহ হওয়ার পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে কৃত্রিম চিনি ইন্সুলিন নিঃসরণে বাধা দেয় আর ওজন বাড়াতে প্রভাব রাখে।”

তাই কৃত্রিম মিষ্টির পরিবর্তে মিষ্টি ফল খাওয়া ভালো।

প্রক্রিয়াজাত বিস্কুট

“যেসব খাবার অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করে বানানো সেগুলো অন্ত্রের মাইক্রোবায়মে বাজে প্রভাব ফেলে। কারণ এই ধরনের খাবারে থাকে অতিরিক্ত চিনি ও সংরক্ষক। কম থাকে আঁশ”, বলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভারতীয় পুষ্টিবিদ মৌসুমি মুখার্জি।

কৃত্রিম স্বাদ, গন্ধ দেওয়া চিজ বিস্কুটসহ বাজারে যত ধরনের বিস্কুট পাওয়া যায়, বেশিরভাগই তৈরি করা হয় প্রক্রিয়াজাত করা আটা ও ময়দা দিয়ে।

এই ধরনের খাবার পেটে ভালো ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর পরিবেশ তৈরি করে না। এমনকি চিনি থাকার জন্য বাজে ব্যাক্টেরিয়ার বংশবিস্তার বেশি হয়। এছাড়া আঁশের পরিমাণ এসব বিস্কুটে কম থাকে বলে হজমেও সমস্যা তৈরি করে।

সসেজ

যে কোনো ধরনের সজেজ- চিকেন বল, বেকন- মানে প্রক্রিয়াজাত করা মাংস খেতে যতই মজা লাগুক নাস্তায় এসব খাওয়া মানেই পেটের অবস্থা খারাপ করা।

এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’র পুষ্টিবিদ লিসা অ্যান্ড্রু, “এই ধরনের মাংসজাতীয় খাবার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম’য়ের পরিবর্তন ঘটিয়ে পেটে ব্যথা তৈরি করে।”

কেক

যেকোনো ধরনের কেক ও পেস্ট্রি অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হয়। যাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, চিনি, সংরক্ষক কৃত্রিম রং ও স্বাদ।

তাই লস অ্যাঞ্জেলেস’য়ের পুষ্টিবিদ মেলিসা হুপার বলেন, “চিনি প্রদাহ বাড়ায়। ফলে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের পরিবর্তন ঘটে, পেটের ভেতরের আস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর কমে ভালো ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ।”

কোমল পানীয়

নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ কিম্বার্লি ওয়াইম্যান বলেন, “কোমল পানীয় যে অস্বাস্থ্যকর আর ওজন বাড়ায় সেটা প্রায় সবাই জানেন। তবে পেটের অবস্থাও খারাপ করে।”

এই ধরনের পানীয়তে থাকা অতিরিক্ত চিনি হজমযন্ত্র থেকে অতিরিক্ত পানি কমিয়ে দেয়। ফলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া।

আবার কিছু কোমল পানীয়তে ক্যাফেইন থাকে। যা হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে।

ওয়াইম্যান আরও বলেন, “এমনকি ডায়েট সোডা বা কোমল পানীয় অন্ত্রে আরও বেশি ক্ষতি করে। কারণ কৃত্রিম মিষ্টি পেটের স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়ার ওপর বাজে প্রভাব ফেলে।”

আরও পড়ুন

Also Read: সুস্থ থাকতে ছয়টি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

Also Read: মস্তিষ্ক দ্রুত বুড়ো হচ্ছে যেসব খাবারে

Also Read: সকালের নাস্তা বাদ দেওয়ার ৫ কুফল