সুন্দরবনের কলাগাছিয়ায়

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের অধীন কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। বুড়িগোয়ালিনী বন কার্যালয়ের সামান্য দূরে বনবিভাগ গড়ে তুলেছে অনিন্দ্য সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রটি। 

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2015, 08:12 AM
Updated : 13 March 2015, 03:57 PM

সুন্দরবনের পরিবেশ সমুন্নত রেখে পর্যটকদের জঙ্গল দেখার নানান সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি বন্যপ্রাণী দেখারও ব্যবস্থা আছে এখানে।

সুন্দরবনের ভেতরে খোলপেটুয়া নদী আর কলাগাছিয়া খালের মোহনার বিপরীত পাশে এ পর্যটন কেন্দ্র। কলাগাছিয়াকে খাল বললে ভুল হবে। আকারে এখনও কোনো কোনো নদীর থেকেও বেশ বড়। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একটু সামনেই এর প্রবেশপথ।

শুরুতেই গোলাকার বিশ্রাম ছাউনি। হাতের বাঁয়ে রেখে ইট বাঁধানো সরু পথে চলতে চলতে ছোট কাঠের সেতুটি পেরিয়ে শুরু হয়েছে ঘন জঙ্গলের ভেতরে দীর্ঘ কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। দুপাশে গরান আর খলিশা গাছের প্রাধান্যই বেশি। কাঠের সেতুর নিচে জোয়ার-ভাটায় ভেজা মাটি গজিয়ে ওঠা লাখো শ্বাসমূল।

বনের মধ্যে আঁকাবাঁকা ট্রেইল ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলতে পারে নানান পাখি, বন মোরগ, বানর, চিত্রা হরিণ কিংবা অন্যকোন বন্যপ্রাণী। কলাগাছিয়ায় বাঘেরও আনাগোনা আছে। ঘন জঙ্গলের মাঝে এ ট্রেইলে হাঁটতে ভালো লাগবে।

সুন্দরবনের নকলাগাছিয়া ইকো ট্যূরিজম কেন্দ্রে দেশি বিদেশি পর্যটক।ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কাঠের সেতুটি যেখানে শেষ, তার একটু আগেই হাতের বাঁ দিকে রয়েছে একটি মিঠাপানির পুকুর। এখানে বন্যপ্রাণীরা বিশেষ করে বানর, হরিণ পানি পান করতে আসে। এরকম আরও একটি পুকুর আছে এ ভ্রমণ কেন্দ্রের একেবারে শুরুতে।

কাঠের সেতুর শেষে ইট বাঁধানো সরু পথ, চলে গিয়েছে দু’দিকে। সোজা পথ গেছে একেবারে প্রবেশ পথের দিকে। আর ডানের সরু পথ চলেছে বনের মধ্য দিয়ে বিশ্রাম ছাউনির দিকে। ঘুরে ঘুরে তাই অভিন্ন পথে দেখা যায় এ জায়গা। পথ হারানোরও ভয় নেই। প্রতিটি পথই শেষ হয়েছে শুরুর স্থানে।

কলাগাছিয়ার বন কর্মীদের সঙ্গে এখানকার কিছু কিছু বন্যপ্রাণীদের সখ্যতাও বেশ ভালো। খাবার নিয়ে ডাকলে বানর কিংবা হরিণ ছুটে আসে তার কাছেই। বাঘ কখনও এখানকার কাছাকাছি চলে এলে বিপদ সংকেতও জানায় বানরেরা।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে সাতক্ষীরা কিংবা শ্যমনগর। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে সরাসরি সাতক্ষীরা যায় এসপি গোল্ডেন লাইনের এসি বাস। এছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন, সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস, এসপি গোল্ডেন লাইন, সাতক্ষীরা কে লাইন, সাতক্ষীরা ট্রাভেলস প্রভৃতি পরিবহন সংস্থার নন এসি বাসও চলে ঢাকা সাতক্ষীরা পথে। ভাড়া ৩শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

সাতক্ষীরা কিংবা শ্যামনগর থেকে বাসে মুন্সীগঞ্জ এসে সেখান থেকে ভটভটি, রিকশায় যেতে হবে বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনে। সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে যেতে সময় লাগবে আধা ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা।

সুন্দরবনের কলাগাছিয়া জঙ্গলে চিত্রা হরিণ।ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কোথায় থাকবেন

কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রটি এক দিনেই বেড়ানো সম্ভব। তাছাড়া এখানে সাধারণ পর্যটকদের জন্য থাকারও কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দিনে দিনেই ঘুরে আসতে হবে। খুব সকালে সাতক্ষীরা থেকে গিয়ে আবার রাতে এসে সেখানেই থাকা যেতে পারে।

সাতক্ষীরা শহরের দুএকটি হোটেল হলো- শহরের শহরের পলাশপোল এলাকায় হোটেল সম্রাট (০৪৭১-৬৪৫৭১) এসি একক কক্ষ ৫শ’ টাকা, এসি দ্বৈত ৬শ’ টাকা, নন এসি একক ২শ’ টাকা, নন এসি দ্বৈত ৩শ’ টাকা।

হোটেল আরামবাগ (০১৭১২৭৮৭৪৮৭) নন এসি একক ১শ’ টাকা, নন এসি দ্বৈত ২শ’ টাকা।

শহরের বাইরে খড়িবিলা এলাকায় মোজাফফর গার্ডেন রিজর্ট (০১৭১৯৭৬৯০৯, ০১১৯১৮১২২৫৭) এসি দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার ৫শ’ টাকা, নন এসি দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার টাকা)।

প্রায়োজনীয় তথ্য

সুন্দরবনের কলাগাছিয়া জঙ্গলে বানর।ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রবেশ মূল্য দেশি পর্যটক ২০ টাকা, বিদেশী পর্যটক ২শ’ টাকা। সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট। কলাগাছিয়া কিংবা এর আশপাশের সুন্দরবনে নিয়মিত প্যাকেজ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে ফ্রেন্ডস ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস।

নিজস্ব ইঞ্জিন নৌকায় সুন্দরবনে ভ্রমণসহ থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে এই প্রতিষ্ঠান।