অধর রাঙাতে ঠোঁটকাঠি

ঠোঁটে লিপস্টিকের ছোঁয়া না দিলে নারীর সাজে যে পূর্ণতা পায় না। কখনও ম্যাট, কখনও বা গ্লস! কখনও টিউবে, কখনও পেন্সিল আকারে।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2014, 10:33 AM
Updated : 26 June 2014, 03:39 AM

লিপস্টিক দেওয়ার আগে কোন রং বেশি জনপ্রিয় বা কোন ধরনের লিপস্টিক ফ্যাশনে আছে, এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়। তাছাড়া কোন ধরনের অনুষ্ঠানে যাওয়া হচ্ছে, সেটার উপরেও নির্ভর করে ঠোঁটে রংয়ের বাহার।

লিপস্টিক ব্যবহারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মৌসুম। কারণ মানুষের ত্বকে ঋতুর পরিবর্তন অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। তাছাড়া এই গ্রীষ্ম-বর্ষার মৌসুমে লিপস্টিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হয়।

গরমে গ্লস বা ক্রিম ধরনের লিপস্টিক এড়িয়া চলাই ভালো বলে জানিয়েছেন হেয়ারোবিক্স ব্রাইডাল বিউটি পার্লারের কর্ণধার তানজিমা শারমিন মিউনি।

তিনি বলেন, “অতিরিক্ত গরমে গ্লস বা ক্রিম ধরনের লিপস্টিক এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ এতে অনেকসময় অস্বস্তি লাগতে পারে। তাছাড়া গ্লসের তেলতেলে-ভাবের কারণে ত্বকেও তৈলাক্তভাব বেড়ে যেতে পারে।”

গ্রীষ্ম-বর্ষার মৌসুমে লিপস্টিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হয়। মডেল: অহনা / ছবি: ই স্টুডিও।

“এই গরমে গাঢ় রং এড়িয়ে বরং হালকা এবং ন্যাচরাল রংয়ের লিপস্টিক বেশি মানানসই। কারণ গরমে এবং রোদে গাঢ় রং দেখতে ভালো নাও লাগতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত গরমে বেশি গাঢ় রংয়ে নিজেরও অস্বস্তি লাগার সম্ভাবনা থাকে।” বললেন মিউনি।

লিপস্টিকের পুরোটাই কেমিক্যাল। তাই যাদের ত্বক অতিরিক্ত সংবেদশীল তাদের লিপস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ অনেকসময় কেমিক্যালের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ঠোঁটে এবং ঠোঁটের চারপাশে র‌্যাশ বা ফুষ্কুড়ি উঠার সম্ভবনা থেকে যায়।

শিবানী’জ অ্যারোমা বিউটি পার্লারের কর্ণধার শিবানী দে বলেন, “যাদের ত্বক অতিমাত্রায় সেনসেটিভ তাদের কখনোই লাল, মেরুন, গোলাপি বা গাঢ় রং ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এ ধরনের গাঢ় রংয়ের লিপস্টিকে কেমিক্যালের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ফলে তাদের ত্বকের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।”

তিনি আরও বলেন, “তাদের জন্য পেন্সিল-জাতীয় যে লিপস্টিকগুলো বাজারে পাওয়া যায় সেগুলোই ব্যবহার করা ভালো। তাছাড়া যদি গ্লসিভাব আনতে চায় তাহলে তারা লিপগ্লস ব্যবহার না করে বরং লিপবাম ব্যবহার করলেই ভালো করবেন।”

অনেকসময় সতর্ক থাকার পরও ঠোঁটের চামড়া ক্ষতি করতে পারে লিপস্টিকের কেমিক্যাল। আর এ থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়ার উপায়ও জানান শিবানী দে।

তিনি বলেন, “লিপস্টিক ব্যবহারের কিছুক্ষণ আগে নিমপাতার রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে তা ঠোঁটে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে তারপর লিপস্টিক লাগালে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে আসে।”

এই মৌসুমে হালকা এবং ন্যাচরাল রংয়ের লিপস্টিক বেশি মানানসই। মডেল: নায়লা / ছবি: ই স্টুডিও।

“তবে অনেক সময় দেখা যায় গরমে এবং মেইকআপের কারণে ঠোঁটে এবং আশপাশের অংশে র‌্যাশ উঠে যায়। সেক্ষেত্রে ত্বক খুব ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে, যেন মুখে মেইকআপ এবং ঠোঁটে একেবারেই লিপস্টিক না লেগে থাকে। এরপর নিমপাতা, পুদিনাপাতা এবং তুলসিপাতা সমপরিমাণে নিয়ে রস করে তা ফ্রিজে রেখে বরফ করে নিতে হবে। এই বরফের টুকরা ঠোঁটসহ পুরো মুখে ঘষে নিলে র‌্যাশ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।” পরামর্শ দিলেন শিবানী দে।

রূপবিশেষজ্ঞ মিউনি জানান, এই সময়ে লিপস্টিকের রংয়ের ক্ষেত্রে কোরাল, নিউট্রাল, ন্যুড, গোলাপির বিভিন্ন শেইড বেশি চলছে। তবে মেঘলা দিনে ম্যাজেন্টা, লাল, লালচে কমলা, মেরুন, বেগুনি ইত্যাদি রংয়ের লিপস্টিকও বেশ মানানসই।

দরদাম

বাজার ঘুরে দেখা গেল, রয়েছে নানান ব্র্যান্ডের লিপস্টিক। এরমধ্যে থেকে নিজের পছন্দমতো লিপস্টিকটি বেছে নিতে পারেন।

জর্ডানা, জ্যাকলিন, লা ফেম, ফ্লোরমার, মেবেলিন, লরিয়াল, ম্যাক, এমইউএ, এলফ, রিভাজ, ল্যাকমে অ্যাবসুলুট, এভার বিউটি, রেভলন এবং আরও অনেক ব্র্যান্ডের লিপস্টিক এখন পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো মার্কেট, সুপারশপ এবং কসমেটিক্সের দোকানে সহজলভ্য এসব ব্র্যান্ড।

“প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য জর্ডানা, জ্যাকলিন, লা ফেম, ফ্লোরমার, মেবেলিন, লরিয়াল ইত্যাদি ব্র্যান্ড ভালো।” বললেন শিবানী।

অনুষ্ঠানের ধরণ বুঝে লিপস্টিকের রং হতে পারে উজ্জ্বল। মডেল: অহনা / ছবি: ই স্টুডিও।

এসব লিপিস্টিকের দাম ১৪০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। পেন্সিল ধরনের লিপস্টিকের ক্ষেত্রে ম্যাটের মধ্যে স্বল্প দামের মধ্যে আছে রিভোজের লিপপেন্সিল। তাছাড়া ম্যাট লিপস্টিকের জন্য এক্সেল প্যারিসের লিপকালারও ব্যবহার করা যেতে পারে।

লরিয়াল, রেভলন, লা স্প্লাশ ইত্যাদি ব্র্যান্ডের চাবিস্টিকও ব্যবহার করা যেতে পারে। দাম আড়াইশ থেকে ৪শ’ টাকা।

তবে ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক, যেমন: ম্যাক, আরবান ডিকে, ল্যাকমে অ্যাবসলুট, লাইম ক্রাইম ইত্যাদি ব্র্যান্ডের লিপস্টিক কিনতে গেলে খরচ করতে হবে ৯শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা। তবে এ ধরনের লিপস্টিকগুলো সাধারণ মার্কেটে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও সেগুলো থাইল্যান্ড ভিক্তিক সামগ্রী।

ইউকে বেইজড প্রসাধনী কেনার জন্য ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইনশপগুলোতে খোঁজ করতে পারেন।