প্রবালদ্বীপের কাছে

প্রবালদ্বীপে ভ্রমণের মৌসুম শুরু হয়েছে আরও আগেই। এখন টেকনাফ থেকে নিয়মিত চলাচল শুরু করেছে সমুদ্রগামী জাহাজগুলো। এই সময়ে সেন্টমার্টিনের নীলাকাশ যেন সারাক্ষণই ডুবে থাকে সমুদ্রজলে। ভ্রমণ পিপাসুরা তাই বেরিয়ে পড়তে পারেন প্রবালদ্বীপের উদ্দেশে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2013, 03:30 AM
Updated : 28 Nov 2013, 03:35 AM

টেকনাফের দমদমিয়া থেকে সেন্টমার্টিনের জাহাজগুলো ছাড়ে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে। জায়গাটি টেকনাফ শহরের বেশ কিছুটা আগেই। এখান থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক নাফ নদী ধরে চলার পর বঙ্গোপসাগরের দেখা মেলে। নাফের একপাশে বাংলাদেশের টেকনাফ, অন্যপাশে মায়ানমার। নদীতে চলতে চলতে দেখা মেলে টেকনাফের আকাশছোঁয়া তৈঙ্গা পাহাড়, যার আরেক নাম নেটং পাহাড়। এ পাহাড়েই বাংলাদেশের গেইম রিজার্ভ, যা নানান বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম।

আরও দেখা মিলবে নাফ নদীর মাঝে আর তীরে জেগে ওঠা প্যারাবন। চোখে পড়বে জেলেদের মাছ ধরা। চলতে চলতে এক সময় শাহপরীর দ্বীপ পাশে রেখে জাহাজ এসে পড়বে সমুদ্রে। নদীর ঘোলাপানি থেকে সমুদ্রের নীল জলে ফেনা তুলে চলতে থাকবে জাহাজ। কোথা থেকে যেন ঝাঁকে ঝাঁকে সিগাল এসে জাহাজের পিছু নেবে।

সাগরজলে ভেসেওঠা বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন আর বেশি দূরে নয়। বৈচিত্র্যে ঠাঁসা চিরসবুজ এ দ্বীপের স্থানীয় নাম নারিকেল জিঞ্জিরা।

টেকনাফ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এই দ্বীপের অবস্থান। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এ দ্বীপের আকর্ষণ সৈকত জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সারিসারি নারিকেল গাছ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি আর এখানকার অধিবাসীদের বিচিত্র জীবনযাপন। প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস এই দ্বীপে।

ছোট্ট এই দ্বীপের একেকটি জায়গার বৈচিত্র্য একেক রকম। উত্তর থেকে দক্ষিণে, পুব থেকে পশ্চিমে একেবারে ভিন্নতর বৈচিত্র্যে ভরা।

উত্তরের সৈকতে জোয়ারভাটায় সংগ্রামী জেলেদের মাছ ধরা, পুবের সৈকতে সারিসারি নারিকেল বীথি। পশ্চিমে আর দক্ষিণে প্রবালমেলার সঙ্গে নীলসমুদ্রের হাতছানি।

এখানে সূর্য ওঠে মায়ানমারের পাহাড়ের আড়াল থেকে। সূর্যোদয় দেখার জন্য তাই দ্বীপের প্রবেশপথ অর্থাৎ জেটির পাশে যেতে হবে। সূর্যোদয়ের আধা ঘণ্টা আগে থেকেই এখানে আকাশ রং মাখতে শুরু করে।

দিনশেষে সূর্য ডুবে সমুদ্রে। ভালোভাবে সূর্যাস্ত দেখতে হলে যেতে পবে পশ্চিম সৈকতে। সমুদ্রস্নানের জন্য সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে ভালো জায়গা দক্ষিণ সৈকত। এখানকার সমুদ্রের পানি বেশি নীল আর স্বচ্ছ।

সেন্টমার্টিনের একেবারে শেষ প্রান্তে ছেঁড়াদ্বীপ। একসময় এ জায়গা মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন প্রায় মিলে গেছে। তবে জোয়ারের সময় সংযোগস্থল ডুবে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুটি দ্বীপ।

ছেঁড়াদ্বীপে তাই যেতে হয় ভাটার সময়। ছোট একটি কেয়াবন আছে এই দ্বীপে। বাকি এলাকা প্রবালের দখলে। সবই প্রায় মৃত প্রবাল। মানুষের বসবাস নেই বললেই চলে।

সেন্টমার্টিন থেকে ছেঁড়াদ্বীপ যাওয়ার জন্য ট্রলার কিংবা স্পিডবোট আছে। ছেঁড়াদ্বীপে ঢেউ বেশি থাকায় অনেক সময়ই নামা কষ্টসাধ্য। তবে দ্বীপের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে এই দ্বীপে হেঁটে যাওয়াই ভালো।

দ্বীপের পূর্ব সৈকত ধরে সকালবেলা হাঁটা শুরু করলে পুরো দ্বীপ ধীরপায়ে ঘুরে আসা যাবে সন্ধ্যার মধ্যেই। হেঁটে গেলে সঙ্গে অবশ্যই শুকনো খাবার নিয়ে নিন। পথে কিংবা ছেঁড়াদ্বীপে তেমন কোনো খাবার কিনতে পারবেন না।

সতর্কতা

সেন্টমার্টিনের কোনো সৈকতে জোয়ারভাটার নির্দেশনা থাকে না। স্থানীয়দের কাছে জোয়ারভাটার সময় জেনে নিন। ভাটার সময় কখনও সমুদ্রস্নানে নামবেন না। তাছাড়া সেন্টমার্টিনের সমুদ্রতলে প্রবাল থাকায় সমুদ্রে গোসলের সময় পা কেটে যেতে পারে। তাই রাবারের কোনো স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।

সমুদ্রে কিংবা সৈকতে কোনো রকম প্লাস্টিক বোতল, প্যাকেট কিংবা কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলবেন না। সেন্টমার্টিনে বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরের মাধ্যমে সাধারণত রাত এগারোটা পর্যন্ত আলো পাওয়া যায়। 

যেভাবে যাবেন

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতে হবে টেকনাফ হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যায় সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি ও ননএসি বাস। ভাড়া ননএসি ৮৫০ থেকে ১৩৫০ টাকা। এছাড়াও শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক পরিবহনের ননএসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা।

টেকনাফের দমদমিয়া থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে প্রতিদিন সকালে কেয়ারি সিন্দবাদ, এলসিটি কুতুবদিয়া, ঈগল, এলসিটি কাজল ইত্যাদি জাহাজ চলাচল করে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন-টেকনাফ আসা-যাওয়ার ভাড়া ৪৫০ থেকে ১,১০০ টাকা।

থাকবেন যেখানে

সেন্টমার্টিনে বেশকিছু হোটেল আছে। সব হোটেলই নন এসি। কয়েকটি হোটেল হল- ব্লু মেরিন রিসোর্ট, হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ, ব্লু সি ইস্টার্ন, ইকো রিসোর্ট সমুদ্র বিলাস, অবকাশ পর্যটনের সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট, নীল দিগন্ত রিসোর্ট ইত্যাদি।