বিশ্ব বাবা দিবস

‘বাবা দিবস’ আমাদের দেশে নতুন হলেও অপরিচিত নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই দিবসটি পালিত হচ্ছে এ দেশে। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে দিবসটি পালন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর বাবা দিবস ১৬ জুন।

মরিয়ম মনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2013, 08:48 PM
Updated : 15 June 2013, 08:48 PM

শুরু যেভাবে

সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক তরুণীর মাথা থেকে প্রথম বাবা দিবসের ধারণাটা আসে। তিনি ছিলেন পরিবারের ছয় ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র মেয়ে। মার্কিন গৃহযুদ্ধে তার বাবা অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময় তার মা সবাইকে নিয়ে ওয়াশিংটনের স্পোক্যানে চলে আসেন। 

ডোডের যথন বয়স ষোলো তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। তাই বাবার সঙ্গে তার সম্পর্কের স্রোত নানা বাঁকে মিশে এক মোহনায় মিলিত হয়।

‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সনোরার মাথায় আসে ১৯১০ সালে। ‘মা দিবস’ নিয়ে সেই বছর গির্জায় ভালো ভালো কথা শুনছিলেন তিনি। তখন মনে হয়েছিল শুধু মা নয়, বাবা নিয়েও এরকম একটি দিন থাকলে ভালো হয়। এই চিন্তা থেকেই সনোরা গির্জার যাজককে ৬ জুন তার বাবার জন্মদিনটি ‘বাবা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের জন্য প্রস্তাব দেন। যদিও যাজক প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালনের ঘোষণা দেন।

প্রথম দিকে তেমন কোন সাড়া মেলেনি দিবসটি ঘিরে। ১৯২০ সালে বাবা দিবসের প্রচারণা বন্ধ করে সনোরা শিকাগোর আর্ট ইনিস্টিটিউটে পড়তে চলে যান। তখন বিষয়টি অনেক জায়গাতেই ফিকে হয়ে যেতে থাকে। ১৯৩০ সালে সনোরা স্পোক্যানে ফিরে এসে আবারও বাবা দিবস নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন।

এই সময় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে কাজ করতে থাকেন। বিশেষ করে বাবাদের প্রতিনিধিত্ব করে এরকম দ্রব্য- যেমন টাই, তামাক খাওয়ার পাইপ- যেসব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তাদের সঙ্গেই বাবা দিবস নিয়ে কাজ করতেন বেশি।

১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্ক অ্যাসোসিয়েটেড মেন’স ওয়্যার রিটেইলারস-এর তৈরি করা ফাদার’স ডে কাউন্সিলের সাহায্যে বাণিজ্যিকভাবে দিবসটি নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যান সনোরা। তখন মার্কিনিরা এর বিরোধিতা করেন। তারা বলতে থাকেন ‘মা দিবস’-এর বাণিজ্যিক সাফল্য দেখেই নতুন আর একটি ব্যবসা তৈরি করার জন্য ‘বাবা দিবস’ এর সুচনা করা হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় সমালোচনা করে খবর প্রকাশিত হয়। তবে ফাদার’স ডে কাউন্সিল এতে পিছপা হয়নি। সে কারণে তারা সাফল্যও পান। ১৯৮০ সালে এই কাউন্সিল একটি লেখায় জানান- ছেলেদের পণ্য যারা তৈরি করেন তাদের জন্য ‘বাবা দিবস’ এখন দ্বিতীয় ক্রিসমাস হিসেবে পরিচিত।

এভাবে দিন এগুতে থাকে। ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়। ১৯১৩ সালে আমেরিকার সংসদে বাবা দিবসটি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লেন্ডন বি. জনসন প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত দেন। ছয় বছর পর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সসনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইন করে দিনটি সরকারী ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১৯৭২ সালে।

মা দিবসের অনুকরণে হলেও এখন এদেশেও ‘বাবা দিবস’ বেশ ভালোভাবেই উদযাপন করা হয়। দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো দিবসটিকে ঘিরে নতুন পোশাক বাজারে নিয়ে আসে। সন্তান বাবাকে নানা রকম উপহার দিয়ে দিনটি পালন করে।

বাবার জন্য উপহার

বাবা মানেই যেন কর্মব্যস্ত একজন মানুষ। বাইরে থেকে ফিরে যিনি সন্তানকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে ভুলে যেতে পারেন সারা দিনের ক্লান্তি।

বড় হয়ে কর্মব্যস্ত হয়ে আমরা অনেকেই বাবার এই আদরটি ভুলে যাই। অন্তত এই একটা দিনে সব ব্যস্ততা ছুটি দিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়তে পারি বাবাকে নিয়ে। উপহার দিতে পারি তার প্রিয় অথবা প্রয়োজনের জিনিসটা। এতে বাবা অনেক খুশি হবেন।

অনেকেই ভাবছেন কী দেবেন বাবাকে? আপনার বাবার কাজের ধরনের উপর দিতে পারেন উপহার। এখন বর্ষার সময়। যাদের বাবা বেশিরভাগ সময় বাইরে সময় কাটান তাদের জন্য ভালো উপহার হতে পারে ছাতা বা রেইন কোট। নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে ছাতা আর রেইনকোট পাওয়া যায়।

এছাড়া পাটের তৈরি ব্যাগ, পেনহোল্ডার, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, নরম ধরনের স্যান্ডেল, হালকা পারফিউম বা হতে পারে ফ্রেমে বাঁধাই করা পুরো পরিবারের ছবি। এসবই পাওয়া যাবে বিভিন্ন বুটিক হাউজ বা যে কোনো মার্কেটে।

কিনে দিতে পারেন তার প্রয়োজনীয় ডায়াবেটিস অথবা রক্তচাপ মাপার যন্ত্র। যা বড় অষুধের দোকান বা শাহবাগের ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।

বাবার প্রিয় খাবারটি রান্না করে খাওয়াতে পারেন নিজের হাতে। চিকিৎসকও দেখিয়ে আনতে পারেন। ভ্রমণের জন্য তার হাতে দিতে পারেন বাস, ট্রেন বা বিমানের টিকিট।

মনে রাখবেন, আপনার দেয়া উপহারটি বাবাকে মনে করিয়ে দিবে যে, আপনি বাবাকে ভুলে যাননি। তাই উপহারটিতে থাকতে পারে বাবাকে নিয়ে লেখা কোনো উক্তি। অনেক সময় ভয়ে বা লজ্জায় হয়তো বাবাকে বলা হয়নি, ‘ভালোবাসি তোমাকে বাবা’। প্রবাসজীবনে তাই আজ বড্ড মনে পড়ছে বাবাকে।

ফোন করে অথবা ভিডিও কনফারেন্সে জানিয়ে দিন বাবাকে আপনার না-বলা কথাটি। টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন তার খরচের জন্য।

কিনে দিতে পারেন তার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র অথবা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই। যার প্রতি পৃষ্ঠাজুড়ে বাবা খুঁজে পাবেন তার আদরের সন্তানকে|

ছবি : অপূর্ব খন্দকার

মডেল : শামীম ও অহনা