ছুরি, বটি, পাটির খোঁজ

মাংস কাটার জন্য যেমন প্রয়োজন ছুরি তেমনি দরকার ভাগাভাগির জন্য পাটি।

মামুনুর রশীদ শিশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2022, 11:57 AM
Updated : 3 July 2022, 11:58 AM

আর ঈদুল আজহা আসলেই এসবের দরকার পড়ে প্রায় সবারই। এগুলোর সবকিছু এক জায়গার ও সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে রাজধানীর কারওরান বাজারে।

যত ধরনের ছুরি

কারওরান বাজারের যে অংশটায় ধারালো সব অস্ত্র বিক্রি হয় সেই অংশটায় ঢুকলে বুকটা একটু কেঁপে উঠতেই পারে। সারি সারি দোকানের টেবিলে রোদে চক চক করে বিশালাকার বটি। পাশেই শোয়ানো থাকে ছোট বড় বিভিন্ন আকারের ছুরি।

একপাশে দোকানের ছাউনি থেকে ঝুলে আছে আরও বিশাল ছুরি। একেকটা ছুরির দৈর্ঘ্য একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের পুরো বাহুর সমান। আরও আছে কুঠার, কোপদা আরও কত কি!

এই দোকানগুলোতে গিয়ে দাঁড়ানো, জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করার সময় খুব সাবধান থাকতে হবে। কারণ প্রতিটি ছুরিই এখানে ধার দেওয়া।

পাইকারি, খুচরা দুভাবেই বিক্রি হয় ধাতব ও ধারালো এই অনুষঙ্গগুলো। তেমনই একটি দোকান চালাচ্ছেন আকবর আলী।

বললেন, “ছুরি, বটি, কোপদা যাই নেন, দাম কেজি হিসেবে। লোহার মানভেদে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা কেজি হয়। ওজন দিয়ে দাম ফেলার পর শুরু হয় দর কষাকষি। ছোট ছুরিতে দামাদামি নেই। ৫০ টাকা থেকে দাম শুরু। বাঁশের হাতল ওয়ালাগুলোর দাম কম। হাতল কাঠের নিলে দাম ১০ টাকা বেশি। তবে একসঙ্গে অনেকগুলো নিলে অর্থাৎ পাইকারী নিলে কেজিতে দাম ফেলা হয়।”

পুরো বাহুর সমান যে ছুরিগুলো ঝোলানো সেগুলো পশু জবাই করার জন্য।

আকবর বলেন, “সবচাইতে ভালো মানেরগুলো তৈরি হয় রেতের লোহা থেকে। দাম কেজি প্রতি। এগুলোর দাম পড়বে পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা। ঢালাই লোহারও হয়, তবে সেগুলো ধার মোটা হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।”

“ছাল বা চামড়া ছাড়ানোর জন্য আছে আকারে ছোট, হালকা ও তীক্ষ্ণ আগার ছুরি। নাম কামেলা ছুরি আর ছিলা ছুরি। এগুলোর দাম ৫০ থেকে ৩শ’ টাকা। মাংস কাটার ছুরিগুলোর দাম ৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত।”

আকবর আলী আরও জানান, “কোপদার কেজি ৫শ’ টাকা ৭শ’ টাকা। মাঝারি আকারের একটি কোপদার ওজন গড়ে দুই কেজি হয়ে যায়। আর বটি ২৫০ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা কেজি।”

কোপদা আর বটিই সবচাইতে বেশি বিক্রি হয়। ছুরি থেকে চর্বি ছাড়ানোর জন্য লোহার কাঠিগুলোর দাম ৭০ টাকা। আর ছুরি ধার দেওয়ার পাথরের দাম ৫০ টাকা থেকে ১শ’ টাকা।

দোকানে গিয়ে বলতে হবে লোহা ঘষার পাথর চাই।

পাটি, পলিথিন ও তেরপল

কাটা মাংস রাখার জন্য প্রয়োজন হয় পাটি, পলিথিন, তেরপল। এখন হুটহাট বৃষ্টি নামছে। আর রোদ তো সবসময়ই থাকে। তাই মাথার ওপরও ঢাকা থাকা দরকার। এগুলো কিনতে হবে গজ দরে।

কাশেম হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারি সাইফুল বললেন, “পাটির সাইজ দুইটা। একটার প্রস্থ কম, আরেকটার বেশি। দাম গজ প্রতি পড়বে ৬৫ থেকে ১শ’ টাকা। পলিথিনের দাম গজ প্রতি ২৫ থেকে ৭০ টাকা। আর তেরপলের দাম গজ প্রতি ৯০ থেকে ২শ’ টাকা।”

মাংস মাপা ও রান্নার অনুষঙ্গ

সাইফুল বলেন, “মাংস মাপার দাড়িপাল্লার দাম ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। অ্যালুমিনিয়ামের পাল্লার দাম কম। লোহার পাল্লার দাম বেশি।”

“এখন মানুষ ডিজিটাল ওয়েট মেশিন কিনে বেশি। রয়েল, ওসাকা, এক্সপার্ট, মেগা ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড”, বললেন তিনি।

গ্যারান্টি আছে এমন পণ্য নিতে হলে যেতে হবে আরএফএল, মদিনা, স্মার্ট ইত্যাদিতে, দুই বছরের গ্যারান্টি।

২৫ কেজি ওজন নিতে পারে এমন একটি রয়েল ব্র্যান্ডের ‘ওয়েট মেশিন’য়ের দাম ১৫০০ টাকা। ৩০ কেজি ক্ষমতার আরএফএল’য়ের দাম ২১০০ টাকা। ৫০০ কেজি পর্যন্ত ওজন নিতে পারে এমন ডিজিটাল ওয়েট মেশিনও আছে, দাম ১০ হাজার পর্যন্ত যেতে পারে।

এই ঈদের সময়ে বাসাবাড়িতে বেশি কেনা হয় ছোট আকারের ওয়েট মেশিনগুলো। এগুলোর কোনোটায় আবার বাটি বসানো থাকে। ছোট এই যন্ত্রগুলোর ধারণ ক্ষমতা হয় পাঁচ কেজি থেকে ২৫ কেজি। দাম হয় ৩শ’ থেকে দুই হাজার টাকা।

বড় হাঁড়ি ও ডেগচি বিক্রি হয় ওজন হিসেবে। হাঁড়ির দাম কেজি প্রতি ৩৫০ থেকে ৬শ’ টাকা। ডেগচি ৩৬০ থেকে ৬৫০ টাকা।

প্রেশার কুকার মিলবে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায়। তবে ব্র্যান্ড হিসেবে এই দাম ভিন্ন হতে পারে। মসলা বাটার শিলপাটা আকার ভেদে ৩শ’ থেকে ১২০০ টাকা।

আর পুরানো পাটায় ধার কাটতে লাগবে ১৫০ টাকা।