হজমতন্ত্রের ওপর এনার্জি ড্রিংকস’য়ের বাজে প্রভাব

‘এনার্জি ড্রিংকস’ সাময়িকভাবে শক্তি বাড়ালেও ক্ষতির পরিমাণই বেশি।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2022, 02:00 PM
Updated : 19 June 2022, 02:00 PM

ক্লান্তি কাটাতে অনেকেই ‘এনার্জি ড্রিংক’ পান করে ভাবেন ‘বাঘ’ কিংবা ‘শার্ক’য়ের মতো শক্তি মিলবে নিমিষেই। তবে কাহিনি হয় ঠিক উল্টো।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’য়ের বরাত দিয়ে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, “একজন প্রাপ্তবয়ষ্কের জন্য প্রতিদিন ৪০০ মি.লি. গ্রাম পর্যন্ত ‘ক্যাফেইন’ গ্রহণ করা নিরাপদ। ‘এনার্জি ড্রিংক’গুলোতে ৫০ থেকে ৫০০ মি.লি. গ্রাম পর্যন্ত ‘ক্যাফেইন’ থাকে। ফলে এক কাপ কফি পান করার আর ‘এনার্জি ড্রিংক’ পান করা অনেক আলাদা। এক কাপ কফিতে থাকতে পারে ১০০ মি.লি. গ্রাম ‘ক্যাফেইন’।  

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাসেবা প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘আরও’য়ের ‘মেডিকাল কনটেন্ট অ্যান্ড এডুকেইশন’ পরিচালক ডা. মাইক বোল বলেন, “অন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ‘এনার্জি ড্রিংক’য়ের থাকা ‘ক্যাফেইন’। এই পানীয়গুলো কফির মতো নয়, এতে আরও অনেক উদ্দীপক রাসায়নিক উপাদান থাকে। যার মধ্যে ‘গুয়ারানা’ নামক উপাদানটি প্রায়শই দেখা যায়। এটি একটি উদ্ভিজ্জ উপাদান যাতে ‘ক্যাফেইন’য়ের মাত্রা কফির চাইতেও বেশি থাকে।”

বুক জ্বালাপোড়া

এনার্জি ড্রিংক পান করার যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো প্রায়শই দেখা যায় তার মধ্যে বুক জ্বালাপোড়া অন্যতম। প্রচন্ড ‘ক্যাফেইন’ আছে এমন ‘এনার্জি ড্রিংক’ পান করার কারণেই অন্ত্র থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ডা. বোল বলেন, “ক্যাফেইন’ পাকস্থলীতে অম্ল নিঃসরণের মাত্রা বাড়ায়। এতে বুক জ্বালাপোড়া তো হয়ই, পাশাপাশি পাকস্থলীর বিভিন্ন প্রদাহ ও আলসার হওয়া আশঙ্কাও বাড়তে থাকে। এদের উপসর্গের তীব্রতা কম আবার বেশিও হতে পারে।”

যেমন- মুখের অদ্ভুত স্বাদ অনুভব করা, দাঁত নষ্ট হওয়া, বমিভাব ও বমি, কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি।

আমেরিকান কলেজ অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এখন আর এই রোগের চিকিৎসা হিসেবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দেয় না। যার একটা বড় কারণ হল বুক জ্বালাপোড়ার সমাধান হিসেবে ‘ক্যাফেইন’য়ের ব্যবহার যে সাংঘর্ষিক সে বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা সিদ্ধ প্রমাণ নেই।

মলত্যাগের সমস্যা

ডা. বোল বলেন, “ক্যাফেইন’ গ্রহণের কারণে শরীরের ‘মোটিলিটি’ বাড়ে। পাকস্থলী কতটা দ্রুত গতিতে খাবার পেট থেকে খালি করতে পারে সেটাই হলো ‘মোটিলিটি’।”

ফলে ‘ক্যাফেইন’ গ্রহণের কিছুক্ষণের মধ্যেই শৌচাগারের বেগ আসে। হজমতন্ত্র দুর্বল হলে বা ‘আইবিএস’ থাকলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া, বাড়তে পারে সমস্যার তীব্রতা।

হজম ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতায় ঝামেলা

চিনি আর ‘ক্যাফেইন’য়ের মিশ্রণ হজমতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমায়।

ডা. বোল বলেন, “কিছু ‘এনার্জি ড্রিংক’য়ে থাকা অতিরিক্ত চিনি অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে। এই ব্যাক্টেরিয়া হজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ভারসাম্য নষ্ট হলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়, পাকস্থলীতে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়।”

আর ‘এনার্জি ড্রিংক’য়ে যে ধরনের চিনি ব্যবহার সেগুলো এই সমস্যা তৈরিতে বিশেষভাবে কার্যকর।

আবার যে কৃত্রিম ‘ফ্লেইভার’ ও মিষ্টি এগুলোতে ব্যবহার হয় তা অন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রা বাড়ার পথে হুমকি হয়ে দাঁড়ায় আর ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া বাড়তে সাহায্য করে।

পাকস্থলীতে গোলমাল ও ওজন বৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেডিকাল এক্সপার্ট বোর্ড’য়ের সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ সিডনি গ্রিন বলেন, “প্রচুর চিনি আর অসংখ্য রাসায়নিক উপাদান থাকে এসব ‘এনার্জি ড্রিংক’গুলোতে। এগুলো পাকস্থলীতে গোলমাল তো তৈরি করেই, নিয়মিত এই পানীয় পানের অভ্যাস ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে লাগামহীন মাত্রায়।”

আর মাত্রাতিরিক্ত চিনি সামাল দিতে হজমতন্ত্রের ওপর যে ধকল যাবে তার মাসুল গুনতে হবে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ‘আইবিএস’য়ে ভোগান্তি দিয়ে।

আরও পড়ুন