বাবার জন্য ভালোবাসা

দুই অক্ষরের এই শব্দটার মাঝে যেন জড়িয়ে আছে আব্দার, আহ্লাদ আর ভালোবাসা।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2021, 06:37 AM
Updated : 20 June 2021, 06:37 AM

মায়ের বকুনি খেয়ে সারাদিন অপেক্ষা করে নালিশ করার সবচেয়ে আস্থাভাজন জায়গার নামই যেন ‘বাবা’।

সন্তানের কাছে বাবা হচ্ছেন প্রথম ‘সুপার হিরো’। বাবাকে অনুসরণ করেই শুরু হয় পথ চলা। তারপর এক পর্যায়ে বাবার আদর্শ আর স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলে সন্তান।

বাবা দিবসকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছবি ও স্ট্যাটাস দিয়ে,  নানা রকমের গিফট দিয়ে কেউবা বাসায় কেক কেটে ইত্যাদি নানাভাবে দিনটা পালন করে থাকেন।

প্রতিটা সন্তানের বড় হওয়ার পেছনে রয়েছে বাবার না বলা পরিশ্রম ও ধৈর্য্যের গল্প। কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকায় সন্তানের সঙ্গে সময় কম কাটানো হয়।

ফলে বাবা ও সন্তানের মাঝে ভাব আদান প্রদান কম হয়। অনেকেই মুখ ফুটে মনের কথা বলতে পারেন না।

অনেকে আবার এর ব্যতিক্রম হন। প্রকাশ যেমনটাই হোক না কেনো, বাপ-সন্তানের সম্পর্ক খুব সুন্দর ও গভীর। 

বাবা দিবসকে কেন্দ্র করে অনেকেই অনেক রকম পরিকল্পনা করেছেন। কয়েকজন তাদের পরিকল্পনা জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে।

আমাদের দেশে অনেক সন্তানই বাবার সঙ্গে খুব একটা মিশুকে নয় কিন্তু মনের মাঝে প্রবল ভালোবাসা ধারন করে তারাও।

জোবেদা খাতুন (৫৬) এমনই একজন। তিনি বলেন, “আমি পরিবারের বড় সন্তান। বাবাকে অনেক ভালোবাসতাম, তিনিও আমাকে খুব আদর করতেন। কিন্তু আব্বার সঙ্গে কথা হতো খুব কম। উনাকে সম্মান করার পাশাপাশি ভয়ও পেতাম। মুখ ফোটে কখনও বলা হয় নি ‘ভালোবাসি আব্বা।”

তিনি আরও বলেন “আমাদের ছেলেবেলায় ‘বাবা দিবস’ বলে তেমন কিছু পালন করা হতো না। এখন আমার মেয়েকে দেখি বাবা দিবস পালন করে, গিফট দেয় বাবাকে, ভালো লাগে বিষয়টা। ওর বাবাও অনেক খুশি হয়। এখনকার বাবা ও সন্তানের মাঝে মনের ভাব প্রকাশের দূরত্ব কম। ওদের দেখে মনে হয় আমাদের সময়টাও এমন হলে ভালো হত।” 

নবম শ্রেণির ছাত্র যোসেফ কস্তা (১৪) বাবা দিবস নিয়ে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, “পাপার সঙ্গে আমি একটু কম কথা বলি, কিন্তু অনেক ভালোবাসি। পাপাও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমার কখনও কিছু লাগলে পাপা সঙ্গে সঙ্গেই তার ব্যবস্থা করে ফেলেন। কয়েকদিন আগে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম। পাপা সারা রাত সেখানে থাকতো। আর সকালে অফিসে যেত। পাপাকে দেখে তখন আমারও খারাপ লাগতো।”

“এবার ‘বাবা দিবসে’ আমি পাপার জন্য অনলাইন থেকে গিফট এনেছি আর একটা কেক কাটার চিন্তা করেছি, আশা করি পাপা অনেক খুশি হবে।”

বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কটা বরাবরই মিষ্টি।

বনশ্রীর নওরিন সুহা (২২) প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। মহামারীর সময়ে ক্লাস বন্ধ থাকায় বাসার ইউটিউব দেখে ‘ক্রাফটিং’য়ের কাজ করে আর হাত খরচের জন্য দুইটা টিউশনি করে সময় কাটাচ্ছেন।

বাবা দিবসের পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার বাবা বন্ধুর মতো। তার সঙ্গে আমি মনের সব কথা খুলে বলতে পারি। ছোট থাকতে আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাবাকে উপহার দিতাম, আমি আর মা মিলেই সব প্ল্যান করতাম। কিন্তু এখন আমি একা প্ল্যান করে দুজনকে চমকে দেই।”

“এবার বাবার জন্য একটা রেইন কোট আর মানি ব্যাগ কিনবো। আর নিজে হাতে স্পেশাল কার্ড বানিয়ে দিবো। বাবা নিশ্চয়ই খুব খুশি হবেন।” বলেন নওরিন।

ছোট ভাই নাশওয়ান বাবার জন্য এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মাস্ক আর স্যানিটাইজার কেনার পরিকল্পনা করেছেন।

‘বাবা দিবসে’ উপহার নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাবার পছন্দ ও প্রয়োজন মাথায় কেনাকাটা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

জীবনযাপন-বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই সম্পর্কে নানা ধারণা পাওয়া যায়।

বাবা যদি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে থাকেন তাহলে তাঁর জন্য ‘ফিটনেস’ সম্পকিত নানান গ্যাজেট যেমন- মি ব্যান্ড, অ্যালার্ম ঘড়ি, ওজন মাপার মেশিন অথবা হাঁটার জুতা হতে পারে ভালো উপহার।

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে চাইলে- নকশা করা মগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, স্যান্ডেল, ঘড়ি, অথবা কলম হবে আদর্শ উপহার।

বাবা যদি অবসরে বই পড়তে ভালোবাসেন তাহলে তার পছন্দের লেখকের কোনো বই ও সুন্দর একটা নোট বুক বাছাই করা যেতে পারে। এছাড়াও বুক মার্কার, পেনহোল্ডার ইত্যাদির কথাও মাথায় রাখা যায়।

পেনড্রাইভ, ট্রাইপড, ব্লুটুথ মোবাইল কাভার, চাবির রিং ইত্যাদি গেজেট হিসেবে বাবাকে উপহার দেওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও, নিজের পছন্দ মতো যে কোনো উপহার যেমন- কাঁধ বালিশ, ছবির ফ্রেম, ল্যাম্প শেইড, লাইট সেট ইত্যাদি উপহার বাছাই করা যেতে পারে।

বর্তমানে মার্কেটের পাশাপাশি অনলাইনের নানান পেইজেও এইসকল সামগ্রী পাওয়া যায়। তাই কোভিড-১৯ য়ের সময়ে মার্কেটে না গিয়েও বাবার জন্য পছন্দের উপহার ঘরে বসেই নিয়ে আসা সম্ভব।

উপহার দেওয়া ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম কেবল। তাছাড়া সন্তান যে উপহারই দিক না কেনো তা বাবার কাছে আদরণীয়।

তাই দিবসকে আরও আনন্দঘন করে তুলতে ছোট একটা উপহার দেওয়া ও দিনটা স্মরণীয় করে রাখাই আসল।