চার রকমের রেস্তোরাঁ

পাতুরি, লক্ষ্মৌ, বাংলার মিষ্টি এবং আর্ট ক্যাফে- রাজধানীর এই চার রেস্তোরাঁয় মিলবে চার রকম স্বাদের খাবার।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2018, 10:24 AM
Updated : 20 Dec 2018, 10:30 AM

বেঙ্গল গ্রুপের আওতাভুক্ত বেঙ্গল এক্সপ্রেসের এই চার রেস্তোরাঁ নিয়ে আজকের আয়োজন। আর রেস্তোরাঁগুলো ঘুরে দেখা এবং তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে সঙ্গে ছিলেন বেঙ্গল এক্সপ্রেসের যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক ‍উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপক সাদিক উদ্দীন।

পাতুরি

 

ফ্রাইড রাইস এবং ফ্রাইড চিকেনে রেস্তোরাঁগুলো যখন সয়লাব, তখনই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুখরোচক খাবারের খায়েশ মেটাতে ২০১৭ সালের জুলাইতে মাঠে নামে পাতুরি।

বনানীর ব্লক এইচ’য়ের ১০বি রাস্তার তিন নম্বর বাড়িতে এই রেস্তোরাঁ। বাইরের চেহারা ঢাকার পুরানোদিনের বাড়িগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। চারপাশে গাছপালা, আর মাঝে লাল ইটের রাস্তা। কাচে ঘেরা বাড়ি, শহুরে আর গ্রাম্য পরিবেশের এক অনন্য মিশ্রণ।

অন্দরসজ্জা ছিমছাম, বেতের চেয়ার, তাতে হালকা গদি, সাধারণ কাঠের টেবিল, ধাঁচটা ‘ফাইন ডাইন’য়ের মতো।

দুতলা রেস্তোরাঁর প্রায় সব দেয়ালেই শোভা পাচ্ছে রং-তুলিতে আঁকা শিল্পকর্ম। উঠানে পাতা হয়েছে কয়েকটি চেয়ার-টেবিল, প্রয়োজনে তার সংখ্যা বাড়ানো যায়। আবার অতিথিদের সঙ্গে শিশু কিশোরদের খেলার জায়গা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

 

প্রতিদিন দুপুর ১২টায় রেস্তোরাঁর খাবার পরিবেশন শুরু হয়। দুপুর তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিরতি। এসময় শুধু আগেভাগে ‘রিজার্ভেশন’ নেওয়া অতিথিদের খাবার পরিবেশন করা হয়।

সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আবার রাত ১১টা পর্যন্ত চলে অতিথি আপ্যায়ন। বসার ব্যবস্থা আছে ৫০ থেকে ৬০ জনের, আছে ওয়াইফাই সুবিধাও।

খাবারের তালিকায় আছে গরু, খাসি, মুরগি ও হাঁসের মাংস। তবে প্রকৃত আকর্ষণীয় বিষয় হল- মাছের বিভিন্ন পদের পসরা। বিশেষ করে পাতুরি, যা হলো কলাপাতায় মুড়িয়ে রান্না করা মাছ।

ভেটকি, চিংড়ি, কই ও ইলিশ মাছের পাতুরি পাওয়া যায়ে এখানে। আর এগুলোই সবচাইতে জনপ্রিয়।

এছাড়াও আছে আইড়, পাবদা, চিতল, রুপচাঁদা মাছের বিভিন্ন আকর্ষণীয় অভিনব পদ। শুটকিও আছে।

রেস্তোরাঁ যখন অভিজাত, দামটাও কিছুটা অভিজাতই বটে। দুপুর ও রাতের খাবারের সময় ভিড় থাকে বেশি। দেশি হোক বা বিদেশি, অতিথিরা পরিবার নিয়েই বেশি আসেন এই রেস্তোরাঁয়।

লক্ষ্মৌ ঢাকা

 

এটাও ‘ফাইন ডাইন’ ধাঁচেরই, তবে খাবারের ধরনে আছে ভিন্নতা। তারা ভোজন রসিকদের জন্য নিয়ে এসেছে মোঘল ঘরানার খাবার। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে যাত্রা শুরু করে এই রেস্তোরাঁ। মোঘল আর আওয়াধি ঘরানার খাবারগুলো প্রায় একই মনে হলেও লক্ষ্মৌ রেস্তোরাঁ তাদের অতিথিদের সামনে এদের মধ্যে তফাৎ তুলে ধরতে বদ্ধ পরিকর।

রেস্তোরাঁর খাবারের তালিকায় কাবাব-জাতীয় খাবারের আধিক্য লক্ষণীয়। রয়েছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের বিভিন্ন ধরনের কাবাব এবং তন্দুরি পদ।

 

এছাড়াও আছে মাছের বিভিন্ন পদ, কাঁকড়া ও চিংড়ি।

হান্ডি বিরিয়ানি, কোফতা বিরিয়ানি, কিমা বিরিয়ানি, পর্দা বিরিয়ানি, নুশিজান বিরিয়ানি ইত্যাদিরও স্বাদ নেওয়া যাবে এই রেস্তোরাঁয়।

নিরামিষভোজীদের জন্যও এই রেস্তোরাঁর খাবারের তালিকা বেশ আকর্ষণীয়।

কাবাব ছাড়াও মিলবে বিভিন্ন ধরনের রুটি, পরোটা, নান। ডেজার্ট আছে গাজরের হালুয়া, শাহী টুকরা, কুলফি, মিষ্টি দই ইত্যাদি।

অন্দরসজ্জা এখানে অনেকটাই পাতুরির মতোই। তবে তুলনামূলক আরেকটু পরিপাটি ও অভিজাত। তৈজসপত্রে মোঘল ধাঁচ চোখে পড়বে। আর চারপাশে শিল্পকর্মের পরশ তো আছেই। বসার ব্যবস্থা আছে ৫০ থেকে ৬০ জনের, রেস্তোরাঁর সময়সীমা পাতুরির মতোই।

আর্ট ক্যাফে ও বাংলার মিষ্টি

 

দুই রেস্তোরাঁ ভরা ভারী খাবারের পর এবার মিষ্টিমুখ করার পালা। আর মিষ্টিকে শিল্প আর জ্ঞানকোষের মাত্রার নিয়ে গেছে আর্ট ক্যাফে ও বাংলার মিষ্টি।

দুই রেস্তোরাঁ একই সঙ্গে থাকে। বনানী আর গুলশানে দুটি শাখা আছে এদের। বনানীর ১৯এ রাস্তার ৩৪ নম্বর বাড়ি আর ৬০ গুলশান অ্যাভেনিউ। দুটো শাখাই খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। তবে বনানী শাখা শুক্রবার ও শনিবারে রাত দুইটা পর্যন্ত অতিথিদের জন্য দরজা খোলা রাখে। 

 

এই দুইয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন অঞ্চলের জনপ্রিয় মিষ্টিকে এক ছাদের নিচে জড়ো করার প্রয়াস চালিয়েছে বেঙ্গল এক্সপ্রেস। আর সব মিষ্টির দোকানের মতো কাচের আলমারিতে থালা কিংবা বোল ভরা মিষ্টি নেই এখানে। বরং আছে মিষ্টির গ্যালারি।

ছোট্ট কাচের বাক্সের ভেতর একপদের মিষ্টি, আর বাক্সের বাইরে সেই মিষ্টির পরিচিতি।

বাংলার মিষ্টিতে মিলবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত রসকদম, পাতাপ্যাড়া, প্রাণহরা, সাদা তিলকদম, কালো তিলকদম, অবাক সন্দেশ ইত্যাদি।

 

রাজশাহীর পোস্তকদম, কাটারিভোগ, ডিমভোগ। নাটোরের ইলিশ পেটি ও কাঁচাগোল্লা। ফরিদপুরের পাতা সন্দেশ, সন্দেশ বরফি। রাজবাড়ির চমচম ও বরফি সন্দেশ।

টাঙ্গাইলের বড় চমচম। নওগাঁর কাটারিভোগ, খেজুর সন্দেশ ও লাড্ডু। বগুড়ার দই ও ক্ষীরশা। পাবনার ইলিশ পেটি, বট ফল এবং বাদামি বরফি।

যশোরের পেস্তা সাদা সন্দেশ, মাছপ্যাড়া। জামতলার রসগোল্লা। সাতক্ষীরার ক্ষীর সন্দেশ, গুড়ের সন্দেশ ও সাদা সন্দেশ।

নেত্রকোনার বালুশাহি, বালিশ মিষ্টি। ময়মনসিংহের চিনি, গুড় ও খেজুরের গুড়ের মণ্ডা। বরিশালের গুতিয়া সন্দেশ, সরের সন্দেশ, চিনি সন্দেশ ছানা।

 

এছাড়া আছে লালমোহন, কাঁচাগোল্লা, কাঁচাছানা, ছানার জিলাপি, ভোগ সাগর, সাদা চমচম, মিহিদানা লাড্ডু, ক্ষীর টোস্ট, মালাই সর, সরের মালাই, মালাই চপ, শাহীভোগসহ আরও অনেক পদের মিষ্টি।

আর আর্ট ক্যাফের মেন্যুতে মিলবে গড়পড়তা ক্যাফেতে থাকা প্রায় সব পদের খাবার।