থাইল্যান্ডের রাজকীয় আতিথেয়তা

সম্পদশালী বিদেশিদের ভ্রমণকে বিলাসবহুল করতে সম্প্রতি থাইল্যান্ড সরকার দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2018, 07:41 AM
Updated : 17 May 2018, 07:41 AM

শুধু ঘুরতেই নয়, ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ‘বিজনেস মিটিং’য়ের জন্য বেছে নেন থাইল্যান্ড। যারা প্রায়ই সেখানে ঘুরতে এবং ব্যবসায়িক আলাপআলোচনা করার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেন, তাদের জন্য থাইল্যান্ড সরকার দারুণ একটি অফার উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে।

সম্পদশালী বিদেশিদের ভ্রমণকে বিলাসবহুল করতে সম্প্রতি থাইল্যান্ড সরকার দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়ার লক্ষ্যে থাইল্যান্ড এলিট প্রোগ্রাম নামে একটি অফার চালু করেছে। মাত্র ১৫ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করলেই উপভোগ করা যাবে এই অফার। এই সুযোগটা ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণের ধরন ও অভিজ্ঞতাই পাল্টে দিবে। এই অফার গ্রহণ করলে মোটা অঙ্কের টাকা ট্যাক্স দেওয়ার ঝামেলা থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।

থাইল্যান্ড রেসিডেন্স প্রোগ্রামটিতে থাকছে অনন্য ভিআইপি কনসিয়ার্জ সার্ভিসসহ বিলসাবহুল ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, যা থাইল্যান্ডকে আপনার কাছে আপন করে তুলবে। আপনি পাবেন নিজ দেশের বাড়ির বাইরে আরেকটা বাড়ি, যেখানে মন চাইলেই আপনি ছুটে যেতে পারবেন ব্যবসায়িক মিটিং কিংবা অ্যাডভেঞ্চারের জন্য।

রাজকীয় ভিআইপি কনসিয়ার্জ সার্ভিস আপনাকে মুগ্ধ করবেই

থাইল্যান্ড একটি মোহনীয় জায়গা। যেখানে সাধারণত সবাই যায় আনন্দময় ছুটি কাটানো কিংবা ব্যবসায়িক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক দর্শনীয় স্থান হওয়ায় এবং কয়েক সপ্তাহের বেশি সময়ের জন্য ভিসা পাওয়ার শর্তাবলীর কারণে এটিকে ওয়ান-স্টপ ভ্রমণ সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সহজ ও নবায়নযোগ্য ভিসা সুবিধা

থাইল্যান্ড এলিট প্রোগ্রাম দিচ্ছে পাঁচ বছরের জন্য বহুমুখী এন্ট্রি ভিসা, যা আপনার পছন্দের প্যাকেজ অনুযায়ী নবায়ন করা যাবে। এই অফারে থাকছে একজন ব্যক্তিগত ভ্রমণ কনসিয়ার্জ, ভিআইপি অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্ভিস, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করার সুবিধা, থাইল্যান্ড স্পা প্যাকেজ, এমনকি আপনি যা যা প্রত্যাশা করেন তার সবই পাবেন।

মূল্যমানে অফারের বৈচিত্র্য

এই অফারটি তিনটি মূল্যামানে উপভোগ করা যাবে, যা সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের জন্য ১৫ হাজার মার্কিন ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ বছরের জন্য ৬০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত। এটি আপনাকে থাইল্যান্ডের নাগরিকদের মতোই থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিনের জন্য অবস্থান করার একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। 

ব্রেক্সিট-এর আওতায় থাকায় দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সুন্দর সমাধান হতে পারে থাইল্যান্ডকে দ্বিতীয় নিবাস হিসেবে বেছে নেওয়া এবং উচ্চহারে কর লভ্যাংশ এর অসাধারণ প্রাণশক্তি উপভোগ করা। থাইল্যান্ডে শুধুমাত্র দেশীয় উৎস থেকে আয়ের ওপর কর দিতে হয়, আর বৈদেশিক উৎসের আয় করের আওতামুক্ত।

অবসর কাটানোর জন্য সর্বোত্তম পছন্দ হতে পারে থাইল্যান্ড

অবসর নেওয়া মানে জীবনকে যেন নতুন করে ফিরে পাওয়া। এই জীবনটা হওয়া উচিত আপনার ২০ বছরের একেবারে দুরন্ত আর নিয়মের বাইরের জীবন-যাপন, মধ্য বয়সের ভাবপ্রবণতার ছোঁয়া এবং সারাজীবন নিজের মধ্যে যত্ন করে লালন করা ভ্রমণ পিপাসার মিশ্রণ। থাইল্যান্ডের মতো অপূর্ব সুন্দর জায়গার বাসিন্দা হওয়া একটি অন্যরকম রোমাঞ্চকর বিষয় হতে পারে। এটি কেবল ঘুরতে গিয়ে হোটেল খোঁজা এবং দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো ভ্রমণ নয়। এধরনের একটি প্রোগ্রাম আপনাকে এখানে বাড়ি বানিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য বসতি স্থাপনের এক অনন্য সুযোগ দিচ্ছে।

থাইল্যন্ডের আছে সাশ্রয়ী জীবন-যাপন সুবিধা, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জীবনযাত্রার উন্নতমান। দেশটি গত কয়েক দশকে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধন করেছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিম্ন আয় থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

মনোমুগ্ধকর রূপ

থাইল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পর্যটকদের সবেচেয়ে বেশি মুগ্ধ করা পাতায়া সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের সাদা নরম বালু, সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র এবং তাতে চরে বেড়ানো রং-বেরংয়ের ছোট ছোট নৌকা আর পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড় অন্যরকম অনুভূতির জোগান দেয়। থাইল্যান্ডের সমুদ্রশহর পাতায়ার প্রবাল দ্বীপের প্রতিটি পরতে পরতে সাজানো রয়েছে এমন সৌন্দর্য। পাতায়া সৈকত খুব বেশি বড় না হলেও খুব সুন্দর করে সাজানো। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের আর্কষিত করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছে থাই সরকার। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৪৭ কিলোমিটার। সমগ্র সৈকতের সবকিছুই অত্যন্ত গোছানো। সৈকতের ধারে রেস্তোরাঁ-বার এবং রেস্টুরেন্টগুলো চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে। এছাড়া বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে এক প্ল্যাটফর্মে। এখান থেকে প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে দিনের পাতায়ার তুলনায় রাতের পাতায়া অনেক বেশি মায়াবী ও আকর্ষণীয়। 

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক, ‘সিটি অব অ্যাঞ্জেলস’ নামে পরিচিত। খুশির রাজ্যে দেবতাদের শহর- খুশি না হয়ে উপায় আছে? আসল থাই জাতিকে খুঁজে পেতে হলে যেতে হবে ব্যাংকক। চাও ফারায়া নদীর পশ্চিম তীরে থাইল্যান্ড উপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত ব্যাংককের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ চাও ফারায়া নদীর পশ্চিমতীরে না ফ্রা লারন রোডের উপর প্রায় এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন রাজপ্রাসাদ। এই রাজপ্রাসাদ থাই জাতির পুরনো দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। এছাড়া প্রাসাদ চত্বরে অবস্থিত পান্নার বুদ্ধ মন্দির প্রকাশ করে থাইদের পুরনো ঐতিহ্য। মন্দিরের বাইরের ও ভেতরের দেয়ালে নানা ভাস্কর্য, ফ্রেসকো ও সূক্ষ্ম কারুকাজ রয়েছে। বুদ্ধের মূর্তিটি একটিমাত্র জেড পাথর কেটে তৈরি। প্রাসাদ চত্বরে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির এবং কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাটের একটি মিনিয়েচার মডেল আছে। ব্যাংকক মন্দির, বুদ্ধের মূর্তি, রাজপ্রাসাদ, মিউজিয়াম, পার্ক সবকিছু মিলিয়ে ব্যাংকক ট্যুরিস্টদের জন্য একটি আদর্শ শহর।

থাইল্যান্ডের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হল ফুকেট। ফুকেটের সাগর পাড়ের নীল জল, বন ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপসমূহ, সাদা বালুময় সমুদ্র সৈকত, আইল্যান্ড ও নীল সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ তার বেলাভূমি সৌন্দর্যের এক অনন্য বিস্ময়। ব্যাংকক থেকে ফুকেটের দূরত্ব প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার। এটি থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ। সৈকতের জন্যও ফুকেট বিখ্যাত। তবে সৈকতের পাশাপাশি ফুকেটের আরেকটি সৌন্দর্য হলো আন্দামান সাগরের ভেতর চুনাপাথরের পাহাড়। তবে এর জন্য সৈকত থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে ‘ফাং-বে’তে। বৈচিত্র্যময় এসব চুনাপাথরের পাহাড়ে অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে, যার কারণে এখানকার একটি দ্বীপের নাম রাখা হয়েছে ‘জেমস বন্ড আইল্যান্ড’। ফুকেট গেলে সেই স্থানটিও ঘুরে আসা যায়।

থাই সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আন্তরিক আথিতেয়তার স্বাদ

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের তথ্য সবসময় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন তাদের প্রায় সবাই নিজের দেশের পাশাপাশি বাইরের দেশগুলোর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে চান। এশিয়া মহাদেশের পর্যটকদের জন্য শুধু নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধের সময় ছাড়া কখনও কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। থাইল্যান্ড মূলত সাগর তীরবর্তী একটি দেশ। তবে দেশটির মধ্যভাগে সমভূমি, পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক ঘিরে রেখেছে পাহাড় ও মালভূমি। পশ্চিমের পর্বতশ্রেণী দক্ষিণ দিকে মালয় উপদ্বীপে প্রসারিত হয়েছে। থাইল্যান্ডজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।

থাইল্যান্ড এলিট প্রোগ্রাম অফারটি উপভোগ করার মাধ্যমে আপনিও হতে পারেন চমৎকার এই শহরটির একজন বাসিন্দা। শুধুমাত্র ট্যুরিস্ট নয়, বরং ওখানকার একজন হয়েই থাইল্যান্ডে বসবাস করতে পারেন। স্বর্গরাজ্যের রাজকীয় আতিথেয়তায় মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও।