কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চলছে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2017, 10:35 AM
Updated : 21 Jan 2017, 02:00 PM

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে প্রতি বছরের মতো এ মেলা শুরু হয়েছে ১৪ জানুয়ারি। চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

১৯৭৬ সাল থেকে চলে আসা এ লোকজ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত। বড়দের মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।

লোকজ উৎসব ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বর। প্রধান ফটক থেকে ফাউন্ডেশন চত্ত্বরে ঢুকলে শুরুতেই হাতের বাঁ পাশে বড় সর্দার বাড়ি। এ বাড়ি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। তবে উদ্বোধন হয়নি বলে আপাতত বাড়ির ভেতরে দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি নেই।

সোনারগাঁওয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরের প্রবেশ মুখে লোকজ উৎসবের তোরণ।

বড় সর্দার বাড়ির সামনেই আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ‘সংগ্রাম’ ভাস্কর্য। এর পূর্ব পাশে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের সামনে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য।

কারুশিল্প মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়ার আগে ঢু মারতে পারেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে। এগারোটি গ্যালারিতে এ জাদুঘরে প্রায় ৪ হাজার ৩শ’রও বেশি নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

প্রথম গ্যালারিতে আছে কাঠ খোদাই ও কারুশিল্প। দ্বিতীয় গ্যালারিতে বাংলার গ্রামীণ জীবযাত্রার চিত্র। তৃতিয় গ্যালারি সাজানো হয়েছে পটচিত্র ও মুখোশ দিয়ে। চতুর্থ গ্যালারি দেশের বিভিন্ন এলাকার নৌকা, পঞ্চম গ্যালারিতে রয়েছে বাংলাদেশের আদিবাসী, ষষ্ঠ গ্যালারিতে আছে লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও বাংলার পোড়ামাটির শিল্প। সপ্তম ও অষ্টম গ্যালারিতে আছে যথাক্রমে লোহার তৈরি নিদর্শন ও তামা, কাঁসা, পিতলের তৈজশপত্র। নবম, দশম ও এগারতম গ্যালারিতে আছে লোকজ অলঙ্কার, বাঁশ, বেত ও শীতল পাটি।

কারুশিল্প মেলায় রাজশাহীর এক মৃৎশিল্পীর স্টলে শিকেয় ঝুলছে হাড়ি।

সোনারগাঁওয়ের কারুশিল্প মেলায় রাজশাহীর এক মৃৎশিল্পের স্টল।

জাদুঘর দেখে চলে আসুন মেলা চত্বরে। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে বসা এ মেলায় দেশের নানান প্রান্ত থেকে শিল্পীরা হাজির হয়েছেন তাদের ঐতিহ্যবাহী সব শিল্পকর্ম নিয়ে। এবারের মেলায় ৪৬টি হস্তশিল্পমহ মোট ১৯৩টি স্টলে রয়েছে।

লোক কারুশিল্প মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যাবে সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী কাঠের পুতুল আর দারুশিল্প। সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি তৈরির তাঁতও আছে একটি স্টলে। জামদানি শাড়ী বিক্রির কয়েকটি স্টলও আছে মেলায়।

এছাড়াও নরসিংদীর পাটের শিকা, বিক্রমপুরের শীতল পাটি, রংপুররের শতরঞ্জি, ঠাকুরগাঁওয়ের সোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, নকশিপাখা, সোনারগাঁওয়ের পটচিত্র, টেপা পুতুল, যশোরের নকশিকাঁথাও আছে মেলায়। এসব শিল্পীরা তাদের সামগ্রী বিক্রির পাশাপাশি স্টলে বসেই তৈরির কৌশলও দেখাচ্ছেন দর্শনার্থীদের।

 

কারুশিল্প মেলায় দর্শনার্থীরা আরও দেখতে পাবেন ধামরাইয়ের তামা, পিতল আর কাঁসা শিল্প। কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা আর টাঙ্গাইলের বাঁশের শিল্পকর্ম ইত্যাদি। মেলার একপাশে আছে বেশ কিছু মুড়ি মুড়কি, মিঠাই, মুড়ালি, পিঠে-পুলির স্টল। এছাড়া পুতুল নাচ, নাগর দোলা ইত্যাদিও আছে মেলা প্রাঙ্গণে।

কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকজ উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে দেশের হারিয়ে যাওয়া নানান গ্রামীণ খেলা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ওপেনটি বায়েস্কোপ, কাবাডি, বৌচি, দাড়িয়াবান্ধা, মোরগ লড়াই ইত্যাদির আয়োজনও বেশ মজার।

কারুশিল্প মেলায় জলিল মণ্ডলের বায়োস্কোপ; টিকেট মাত্র দশ টাকা।

এছাড়া মেলার অন্যতম আকর্ষণ পালাগান, বিয়ের গান, বাউল গান, জারি, সারি, মুর্শিদী, মারফতি, লালন, হাসনের গানসহ লোকসঙ্গীতের বিশাল আয়োজন।

প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত অবধি মেলার মঞ্চে চলে এসব গানের আসর।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার গুলিস্তানের মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের সামনে থেকে বোরাক পরিবহনের এসি ও নন এসি বাসে সরাসরি যেতে পারেন মোগরাপাড়া বাস স্টেশনে। ভাড়া এসি ৫০ টাকা, নন এসি ৩০ টাকা। সেখান থেকে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের রিকশা ভাড়া ২০ টাকা।