“মা ও তার সন্তানের মধ্যেকার ভালোবাসা কখনও কোনো মানদণ্ডে পরিমাপ করা সম্ভব না। এর মান অসীম। ভালোবাসার সেই অসীমতা মায়ের কন্যা হয়ত ততদিন বুঝে উঠতে পারেন না যতদিন তিনি নিজে মা হন।”
বলছিলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োলজি অ্যান্ড কেমিস্ট্রির প্রভাষক এলভিরা আহমেদ।
এলভিরার মা হামিদা বেগম পেশায় একজন চিকিৎসক। সম্প্রতি এলভিরা নিজেও মা হয়েছেন। তার মেয়ে জারিন মায়ামীন রহমান। বয়স ৮ মাস।
এলভিরা আরও বলেন, “মেয়ের যখন জন্ম হয় তখন আমি আমেরিকাতে। আমার মা পুরোটা সময় আমার কাছে ছিলেন না। এমনিতে মায়ের সঙ্গে হাজার হাজার বিষয়ে সারাদিন খুঁটিনাটি লেগে থাকে। তবে কষ্টের সেই দিনগুলিতে মনটা সারাদিন মা মা করত, মনে হত মা যদি কাছে থাকত! আবার একা থাকার শক্তিও মায়ের কাছেই পেতাম।”
“আমার মা একজন ‘সিঙ্গেল মাদার’। আমাকে বড় করার পুরো দায়িত্বটাই তিনি একা একা করেছেন।” কথার ফাঁকে যোগ করলেন এলভিরা।
“এখন আমি মা হয়েছি। মায়ের জুতাটায় পা গলিয়ে দেখলাম কাঁটাটা আসলে কোথায় ফোঁটে। এখন আর মায়ের সঙ্গে লাগে না। নিজে অনেক ক্লান্ত থাকলেও মন থেকেই মাকে সাহায্য করি।”
“আমার যেমন মা ছাড়া কেউ নেই, মায়েরও তো আমি ছাড়া কেউ নেই।” এভাবেই কথা শেষ করলেন এলভিরা।
নাট্যজগতে পরিচিত মুখ ত্রপা মজুমদার। তার মা বাংলা নাট্যজগতের প্রবাদতূল্য অভিনেত্রী ফেরদৌসি মজুমদার। আর ত্রপার কন্যা আত্রেয়ী।
কন্যা ত্রপা এবং মা ত্রপার মধ্যে তুলনা করতে বলা হলে তিনি বলেন, “বন্ধু বলুন কি শিক্ষক বলুন, আমার মা-ই আমার সব কিছু। কলেজ পর্যন্ত পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কাজ আমার মা করতেন। কখনও যদি পরীক্ষায় খারাপ করতাম, আমাকে বকুনি দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। মা নিজেই কেঁদে বুক ভাসাতেন। মায়ের কান্না দেখে আমিও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারতাম না।”
ত্রপা আরও বলেন, “আমার মায়ের কোনো সোশ্যাল লাইফ ছিল না। তিনি শিক্ষকতার মতো একটা পেশা বেছেই নিয়েছিলেন যেন আমাকে বেশি করে সময় দিতে পারেন। শিক্ষকতার কাজ, নাটকের কাজের পর যেটুকু সময় পেতেন সবটুকুই আমাকে উজাড় করে দিয়েছেন। যেটা আমি আমার মেয়ে আত্রেয়ীকে হয়ত দিতে পারছি না।”
“আমার অ্যাড এজেন্সির কাজ আমাকে অনেকটা সময়ই মেয়ে থেকে দূরে রাখে। আমি ওকে মিস করি।” যোগ করেন ত্রপা।
ত্রপা নাকি আত্রেয়ী, কার শৈশব ভালো ছিল প্রসঙ্গে ত্রপা মজুমদার বলেন, “আমাদের সময় মা ছাড়াও মাতৃস্থানীয় এমন অনেকে ছিলেন। সঙ্গে ছিল আরও অনেক শিশু। ফলে শৈশব সব দিক থেকেই আমারটা অনেক বেশি ভালো ছিল। আত্রেয়ীর সেই অর্থে কাজিন নেই স্কুলের বন্ধু বাদে সঙ্গী বলতে গেলে বড় মানুষেরাই।”
“আমাদের মতো শৈশব উৎযাপনের সুযোগ কোথায়? ওর সঙ্গী তাই নানু, নানাভাই। নিজের মতো করে ও তাদের সঙ্গে জুড়ে যায়।” বললেন এই অভিনেত্রী।
মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের কোনো পার্থক্য কি চোখে পড়ে?
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সময়টায় মায়েরা অনেক চেষ্টা করতেন সন্তানকে ভালো রাখার। যেটা আমরাও করি। তবে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমাদের জন্য এই কাজটা খুব সহজ। আমরা জানতে পারি কীভাবে একটা বাচ্চাকে সঠিক যত্ন নিতে হয়, মানসিক বিকাশের জন্য কী কী করতে হয়। তাই আমার মায়ের কষ্টটা আমার চেয়ে বেশি ছিল।”
সমাজে এরকম উদাহরণ আরও আছে। আসলে সমাজে পরিচিত বা সাধারণ যে ধরনের মানুষই হোক না কেনো মায়ে প্রতি ভালোবাসা সবকালেই একই থাকে। তবে পরিপক্ক বয়সে মা হওয়ার পর নিজের মায়ের অনুভূতিগুলো আরও স্বচ্ছ হয়ে ধরা দেয়।
ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক