চোখের নিচে কালচেভাব মানেই ক্লান্ত নয়।
Published : 25 Oct 2023, 03:55 PM
রূপচর্চা নিয়ে নানান মত রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে সঠিক তথ্য। তেমনি ভুল বিষয়ও আছে।
প্রচলিত ধারণা: রেটিনল ত্বকে অস্বস্তি তৈরি করলে ব্যবহার বন্ধ করা উচিত
বয়সের ছাপ রোধ করতে এই উপাদান ব্যবহার হয়, যা এক ধরনের রেটিনয়েড। ভিটামিন এ থেকে প্রস্তুতকৃত রেটিনল ওষুধ শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। ব্রণ সিরোসিস ও কিছু ত্বকের ক্যান্সারে চিকিৎসায় এটা ব্যবহার হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মেলিল্যান্ড নিবাসী ত্বক বিশেষজ্ঞ আইফি রডনি বলেন, “রেটিনল ব্যবহারে অনেক সময় ত্বকে শুষ্কতা, লালচেভাব ও ত্বকের আঁশ ওঠার সমস্যা দেখা দেয়।”
এজন্য অনেকেই রেটিনল ব্যবহার বাদ দেন।
যা করা উচিত: এর জন্য ব্যবহার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।
ডা. রডনি হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ঘন ঘন ব্যবহার না করে প্রতি এক বা তিন রাত পর পর ব্যবহার করে ত্বকে সহ্য করাতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে ব্যবহারের মাত্রা।”
আর পরিমাণে বেশি নয়, মটর দানার সমান নিয়ে সারা মুখে মাখতে হবে। আর কোন ধরনের রেটিনল ব্যবহার করতে হবে বা আদৌ ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিতে পারবেন।
প্রচলিত ধারণা: আই ক্রিম ফ্রিজে রাখা উচিত
চোখের ফোলাভাব কমাতে ঠাণ্ডাভাপ দেওয়া উপকারী হলেও চোখের ক্রিমের ক্ষেত্রে এই কথা খাটে না।
এই বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ডিএমকে স্কিনকেয়ার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা উদ্ভিদ-বিদ্যা সংক্রান্ত রসায়নবিদ ডিনে মন্টেগিউ-কিং বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি। আর যখনই ঠাণ্ডা ক্রিম ত্বকে মাখা হয় তখনই সেটা দেহের উষ্ণতায় গরম হয়ে যায়।
যা করা উচিত: মনে রাখতে হবে চোখের জন্য তৈরি যে কোনো প্রসাধনী ও ক্রিম বেশি দিন যাতে না টেকে, সেভাবে তৈরি করা হয়। তাছাড়া তাপমাত্রায় ওঠানামায় প্রসাধনীর রং ও অবস্থার পরিবর্তন হয়।
তাই মন্টেগিউ-কিং’য়ের পরামর্শ হল- চোখ ফোলা সমস্যায় ঠাণ্ডাভাপ দিন। আর ত্বকে এই ধরনের ক্রিম দেওয়ার আগে নিজের দেহকে ঠাণ্ডা করে নিন। সেটা হতে পারে গোসল করে কিংবা এসির ভেতরে থেকে।
প্রচলিত ধারণা: দামী প্রসাধনীর উপকার বেশি
ধারণা করা হয় প্রসাধনী দাম যত বেশি উপকারও তত বেশি। তবে কথাটা ঠিক না।
“আসলে প্রসাধনীর কার্যকারিতা পুরোটাই নির্ভর করে প্রস্তুত প্রণালির ওপর”- এভাবেই মত দেন নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ত্বক-বিশেষজ্ঞ কাভিতা মারিওয়ালা।
বলা হয়- নির্দিষ্ট উপাদান যেমন ভিটামিন সি’র প্রসাধনীতে কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষ প্রণালী ব্যবহার করা হয়। যে কারণে দাম হয় বেশি।
তবে ডা. মারিওয়ালার মতে, দাম দিয়ে কেনা মানেই ভালো জিনিস কিনছেন তা নয়, অনেক সময় হয় প্যাকেট আর ব্র্যান্ডের কারণে শুধু শুধু অতিরিক্ত খরচ করছেন।
যা করা উচিত: নজর দিতে হবে প্রসাধনীর বোতল বা প্যাকেটে লেখা উপকরণের তালিকার দিকে।
ডা. রডনি বলেন, “এক্ষেত্রে কোন উপাদান কী জন্য উপকারী সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা এখন তেমন কোনো বিষয় নয়। ইন্টারনেট দুনিয়াতে সব তথ্য পাওয়া যায়।”
পরিচিতি ছাড়াও অপরিচিত উপাদান সম্পর্কে জেনে ত্বকের যত্নে নিজের জন্য উপকারী প্রসাধনী বাছাই করা এতে সহজ হয়। আর সেটা দামী নাও হতে পারে।
প্রচলিত ধারণা: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন নেই
মিয়ামির ‘রিভারচেইজ ডার্মাটোলজি’র চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ স্টেসি কিমেন্তো বলেন, “তৈলাক্ত মানে সাধারণভাবেই পুরু ত্বক, কম বলিরেখা পড়ে আর সুরক্ষিত থাকে বেশি। তবে এই ধরনের ত্বকও শুষ্ক হতে পারে পানিশূন্যতা থেকে।”
যা করা উচিত: ত্বক আর্দ্র রাখতে তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে বরং ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কমবে।
ডা. রডনি বলেন, “তেল নিঃসরণে ভারসাম্য আনে ময়েশ্চারাইজার।”
প্রচলিত ধারণা: উচ্চ এপিএফ মানে ভালো সানস্ক্রিন
যে সানস্ক্রিনে এসপিএফ বা ‘সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর’য়ের মাত্রা যত বেশি সেটা তত মাত্রায় রোদের অতি বেগুন রশ্মি থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
ডা. কিং ব্যাখ্যা করেন, “এসপিএফ ১০০ ও এসপিএফ ৫০-য়ের সুরক্ষার পার্থক্য খুবই কম। মোটেই দ্বিগুন সুরক্ষা দেয় না। এসপিএফ ১০০ থেকে ৯৯ শতাংশ আর এসপিএফ ৫০ থেকে ৯৮ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যায়। আর এসপিএফ ৩০ দেয় ৯৭ শতাংশ সুরক্ষা।”
যা করা উচিত: পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্মুক্ত থাকা ত্বকে অর্থাৎ মুখ হাতে মাখতে হবে। আর কয়েক ঘণ্টা পর পর পুনরায় ব্যবহার করা উপকারী হবে।
প্রচলিত ধারণা: সানস্ক্রিন শুধু গরমকালে মাখতে হয়
শুধু গরমকালে রোদের তাপ বেশি থাকে বলে সানস্ক্রিন মাখতে হবে তা নয়। বরং শীতের রোদেও ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থাকে- জানান ডা. মারিওয়ালা।
যা করা উচিত: সারা বছর জুড়েই রোদে গেলেই সানস্ক্রিন মাখতে হবে।
প্রচলিত ধারণা: চোখে কালচে আভা মানে ক্লান্তি
অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে চোখের নিচে কালি পড়তে পারে। তবে সব সময় নয়।
বংশগতি, বয়স বাড়া, শুষ্কতার, অতিরিক্ত ‘পিগমেন্টেইশন’ ও বলিরেখার কারণেও চোখের চারপাশে কালচেভাব দেখা দেয়।
যা করা উচিত: সাধারণত ‘আই ক্রিম’ ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। তবে কী কারণে হচ্ছে সে বিষয়টাও জানতে হবে।
ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে এই বিষয় নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।
প্রচলিত ধারণা: লোমকূপ খোলে আর বন্ধ হয়
“দরজা বন্ধ খোলার মতো লোমকূপ খোলা-বন্ধ হয় না” – বলেন ডা. কিমেন্তো।
তবে লোমকূপের প্রসারণ ঘটতে পারে বয়স ও তাপমাত্রার মিলিত কারণে। যে কারণে ময়লা ও তেল মিশ্রিত হয়ে ত্বকে জমে যায়।
যা করা উচিত: নিয়মিত এক্সফলিয়েট করলে লোমকূপ থাকবে পরিষ্কার। ফলে দেখতেও অস্বাভাবিক লাগবে না। আর খেয়াল রাখতে হবে
· এমন মেইকআপ ব্যবহার করা উচিত যা লোমকূপ আবদ্ধ করে দেয় না।
· ত্বকের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
· ব্রণ নিরামায় ও ত্বকের ঝুলে পড়া রোধে ব্যবস্থা নেওয়া।
প্রচলিত ধারণা: বংশগতির ওপর ত্বকের বয়স ধরে রাখা নির্ভর করে
“বংশগতির কারণে নানান কিছু প্রভাব পড়ে। তবে ত্বকের বয়স বাড়াটা জটিল প্রক্রিয়া”- বলেন ডা. কিং
যেমন- কারও মুখের চামড়ায় বেশি তাড়াতাড়ি বয়স্কভাব পড়তে পারে অতি মাত্রায় ঘন ঘন চোখ কুচকে থাকানোর জন্য।
যা করা উচিত: বাহ্যিক পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে ত্বকের ক্ষতি কম হয়।
· বাইরে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ও এমন কাপড় পরা যাতে ত্বকে রোদের তাপ কম পড়ে।
· খাদ্যাভ্যাসে ফল ও সবজি রাখা। চিনি ও প্রক্রিয়াজাত কার্ব গ্রহণ কমানো।
· ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করা।
· মানসিক চাপ কমনো। এক্ষেত্রে ব্যায়াম উপকারী হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মুখ ধোয়া নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা