মৃত্যুর পর আইনস্টাইনের মাথায় পাওয়া যায়নি মগজ, ছিল না দুটো চোখও। ভাবা যায়! কোথায় ছিল মগজ! কোথায় ছিল চোখ জোড়া!
Published : 15 Jun 2023, 03:19 PM
পৃথিবী বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। যার জন্ম ১৪ মার্চ ১৮৭৯ সালে জার্মানিতে। মৃত্যু ১৮ এপ্রিল ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। তিনি ছিলেন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং ভরশক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জনক। পরবর্তীতে সেই সূত্র পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আর ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য তিনি পান নোবেল পুরস্কার।
কিন্তু মৃত্যুর পর আইনস্টাইনের মাথায় পাওয়া যায়নি মগজ, ছিল না দুটো চোখও। ভাবা যায়! কোথায় ছিল মগজ! কোথায় ছিল চোখ জোড়া! এর পেছনে কাদের হাত ছিল?
ফিরে যাওয়া যাক ১৯৫৫ সালে। ১৮ এপ্রিল দিনটা ছিল শুক্রবার। অসুস্থতা নিয়ে প্রিন্সটন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আইনস্টাইন। পরে সোমবার রাতে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান এই মহাবিজ্ঞানী। মৃত্যুর আগে তিনি জার্মান ভাষায় দুটো কথা বলছিলেন। কিন্তু কর্তব্যরত কোনো নার্স জার্মান ভাষা জানতেন না বলে এ বিজ্ঞানীর শেষ দুটি কথা হারিয়ে যায় চিরকালের মতো।
আইনস্টাইন চেয়েছিলেন তার মৃতদেহ দাহ করা হোক। তার ইচ্ছে অনুসারেই পোড়া ছাইগুলো অচেনা জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কারণ তিনি চাননি মারা যাওয়ার পর তার লাশের উপর স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হোক বা সেটা পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হোক। গোপনে ডেলাওয়্যার নদীতে তার দেহভস্ম ছড়িয়ে দেন বন্ধু ওটো নাথন।
তার মৃত্যুর ২৩ বছর পর ‘দ্য নিউ জার্সি মান্থলি’র সাংবাদিক স্টিফেন লেভি দাবি করেন, তিনি আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক দেখেছেন। অথচ প্রিন্সটন হাসপাতালে ১৯৫৫ সালে মারা গিয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী, আপেক্ষিকতাবাদের জনক আলবার্ট আইনস্টাইন। মৃত্যুর প্রায় আড়াই দশক পরও এমন একটা খবর সারা বিশ্বে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কারণ, তিনি আইনস্টাইন, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মেধাবী মানুষগুলোর একজন। পরে সাংবাদিক স্টিফেন লেভি প্রিন্সটন হাসপাতালের প্যাথোলজিস্ট থমাস হার্ভির দেওয়া তথ্য শুনে অবাক হয়ে যান।
তিনি লেভিকে বলেন, আইনস্টাইনের মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। কিন্তু কারো পরামর্শ বা অনুমতি ছাড়াই আমি একটি সিদ্ধান্ত নিই। আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে কৌতূহল ছিল আমার, আমি চাইনি পৃথিবীর এত খ্যাতিমান একজন মানুষের মস্তিষ্ক হাতছাড়া করতে। তাই আইনস্টাইনের মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক সময়ের মধ্যেই মাথা থেকে মস্তিষ্ক পরম যত্নে ও আদরে বের করে ফেলি! সেইসঙ্গে তার দুটি চোখও বের করে নিয়েছিলাম! যা একটি বয়ামে সংরক্ষণ করে আইনস্টাইনের চোখের চিকিৎসক হেনরি অ্যাব্রামসের কাছে পৌঁছে দিই।
এ কথার সত্যতা না পাওয়া গেলেও কথিত আছে, তার চোখ জোড়া এখনও নিউ ইয়র্কে কোন সেফটি লকের ভেতর সংরক্ষিত করে রাখা আছে। তারপর, প্রথমে আমি তার মস্তিষ্কের সবদিক থেকে বেশকিছু ছবি তুলি, মস্তিষ্কটিকে ভাগ করি ২৪০টি ব্লকে। পরে এ ব্লক থেকে এক হাজারেরও বেশি স্লাইড তৈরি করি। স্লাইডগুলো আলাদা আলাদাভাবে বাক্সবন্দি করে পাঠিয়ে দিই পৃথিবীর নানা দেশের গবেষকদের কাছে।
সাংবাদিক স্টিফেন লেভি সেইসব তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রচার করতে থাকেন। গবেষণার ফলাফল ছিল একটাই, আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা। শৈশব থেকেই আইনস্টাইন ছিলেন সৃষ্টিশীল। যে বয়সে আমরা পাঠ্যবইয়ের গণিতের ফলাফল মিলাতে হিমশিম খাই সেই বয়সে আইনস্টাইন কঠিন কঠিন ধাঁধার উত্তর দিতে পারতেন।
ছোটবেলায় দুটি জিনিস তার মনে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল, প্রথমত পাঁচ বছর বয়সে একটি কম্পাস হাতে পান এবং তার ব্যবহার দেখে তিনি বিস্মিত হন। তারপর ১২ বছর বয়সে তিনি জ্যামিতির একটি বই হাতে পান। বইটি পড়ে এত আনন্দ পেয়েছিলেন যে একে ‘পবিত্র ছোট্ট জ্যামিতির বই’ বলে উল্লেখ করেছেন।আসলে তার পড়া সেই বইটি ছিল বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ ইউক্লিডের ‘এলিমেন্ট্স’।
আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক কি এখনও পৃথিবীতে আছে? ফিলাডেলফিয়া শহরের মেটা মিউজিয়ামে ১৮৬৩ সাল থেকে সংরক্ষিত হয়েছে পঁচিশ হাজারেরও বেশি ব্যতিক্রমী মানবদেহ, বিরল স্পেসিম্যান, চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিসহ হরেক জিনিসপত্র। সেখানেই ২০টি স্লাইডে সংরক্ষিত আছে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্কও। নিজের চোখে দেখলে হয়ত যে কেউ বলে উঠবে, এ যে অবিশ্বাস্য! মানুষটা পৃথিবী নেই, কিন্তু শতাব্দীর অন্যতম সেরা মস্তিষ্ক এখনও বিরাজমান!
তথ্যসূত্র: রিপলিজ ডটকম
[লেখাটি কিডজ ঈদ সংখ্যা ২০২৩-এর ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত]