বই দুটি লিখেছেন ও অলঙ্করণ করেছেন মুশফিক রনো।
Published : 11 May 2023, 04:38 PM
চারপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়েই আমাদের জীবন। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান আমাদের জীবনচক্র স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি চরম উদাসীনতা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে। অথচ সামান্য একটু সচেতনতা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বড়দের পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও পরিবেশের বিপর্যয়ের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সেই অনুভবের জায়গা থেকেই পাঞ্জেরী প্রকাশনী এনেছে তাদের ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ' সিরিজের শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক দুটি বই ‘চিমনি ও একটি পাখি' এবং 'বোতল বাসা'। বই দুটি লিখেছেন ও অলঙ্করণ করেছেন মুশফিক রনো।
বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রকৃতি নিজেই নিজেকে তার ইকো সিস্টেমের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার (সেলফ রেস্টোরেশন প্রসেস) করে এবং আবার আগের মতো সমৃদ্ধ করে। এই ধারনার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে 'চিমনি ও একটি পাখি'।
গল্পটির মূল ধারণা হচ্ছে, প্রকৃতি ও পরিবেশ নিজেই নিজেকে কীভাবে ধীরে ধীরে আবার বাস্তুচক্রের সবুজ বেষ্টনীর মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করছে।
গল্পের মূল চরিত্রে আছে ইটভাটার পরিত্যক্ত চিমনি আর তার বন্ধু একটি পাখি। শহরের শেষপ্রান্তে অব্যবহৃত পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা। সেখানে নিঃসঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ভাটার একটি চিমনি। যেহেতু ইটভাটা, তাই আশপাশে তেমন গাছপালা ছিল না। ভাটা থেকে বেশ দূরে নানারকম গাছের সারি আর জানা-অজানা বিভিন্ন পাখি।
অনেকদিন থেকে অব্যবহৃত থাকায় চিমনিটি খানিকটা জীর্ণ। ইটের গাঁথুনির চিমনির সবুজ গাছপালা খুব ভালো লাগতো আর নিজেকে গাছেদের মতো ভাবার চেষ্টা করতো। কিন্তু কংক্রিটের চিমনির তা যে হওয়ার নয়, তা সে ভালোই জানত। এমনই বিষণ্ন এক দিনে একটি পাখি উড়ে যাবার পথে, বিশ্রামের জন্য চিমনির মাথায় বসে এবং গল্প করার ফাঁকে জানতে পারে প্রকৃতির প্রতি চিমনির ভালবাসার কথা।
পাখিটি বিদায় নিয়ে চলে যায়। আশ্রয় নেয় একটি বটগাছে। সেখানে বটফল খাওয়ার সময় একটা বুদ্ধি মাথায় খেলে তার। সে বটফলের বিচিটা সাথে নিয়ে চিমনির চূড়ায় একটি ফাটলে বুজিয়ে দেয়। বেশ কিছুদিন পর রোদ-বৃষ্টির পর চিমনি দেখে, তার মাথায় একটি ছোট গাছের চারা গজিয়েছে। কিছুদিন পর সেই গাছ বেশ ঝাকড়া হয়ে ওঠে। দূর থেকে তাকে খানিকটা গাছের মতো লাগতে থাকে, পাশাপাশি বেশকিছু পাখি সেখানে আসা যাওয়া শুরু করে।
গাছের মতো অনুভূতি আর পাখিদের উপস্থিতি চিমনি খুব উপভোগ করতে থাকে। প্রকৃতির প্রতি ভালবাসার কারণেই প্রকৃতি থেকে এ উপহারটি সে পেয়েছে।
প্রকৃতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে আমাদের নানারকম ভূমিকা পালন করতে হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলে অন্য কারো মাধ্যমে পুনরুদ্ধার (থ্রো সাম রেস্টোরেশন) হয়ে ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এ ধারনাটি নিয়ে লেখা হয়েছে 'বোতল বাসা'। এ বইটির আরেকটি দিক হলো ফেলে দেওয়া বা পরিত্যক্ত দ্রব্যের পুনরায় সৃজনশীল ব্যবহার (রিসাইক্লিং প্রসেস)।
এ গল্পটি মূলত প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এ ধরনের বিভিন্ন প্রকার পরিত্যক্ত দ্রব্যকে পুনরায় ব্যবহার বা তার ভিন্ন কোনো ইতিবাচক দিক তুলে ধরাকে কেন্দ্র করে লেখা। গল্পে একটি সৃজনশীল চিন্তাধারার পরিবারকে দেখানো হয়েছে। ছোট্ট মেয়ে রিদা এ গল্পের মূল চরিত্র। সে থাকে তার মা ও বাবার সাথে। তারা প্রকৃতি খুব ভালবাসে। তাদের ছোট্ট বাসার উঠানের চারপাশে নানা রকম গাছগাছালিতে সয়লাব। আর আছে বিভিন্ন দেশি পাখির সমাহার।
রিদার একটি বিড়াল বন্ধু আছে। তার নাম সাবিল। আর আছে তাদের উৎপাত ও অস্থির করে রাখা ৩ সদস্যের দুষ্টু বেজির দল। তাদের দলনেতার নাম চিচি। রিদাদের বাসায় হঠাৎ সাদা একটা পাখি উড়ে আসে। পাখিটি ডানায় আঘাত পাওয়ায় উড়তে পারছিল না। রিদা সেই পাখিকে দেখতে পেয়ে তার মাকে জানায়। দ্রুত পাখিটিকে উদ্ধার করে আর তার যত্ন নিতে থাকে।
দু’একদিন পর পাখিটির একটি ঘরের প্রয়োজন হয়। সেসময় একদিন রিদা তার মায়ের হাতে একটি বোতল দেখে তার শিল্পী মনে একটা আইডিয়া আসে। সেই বোতলকে কীভাবে পাখির বাসা বানানো যায়, তার একটা ড্রয়িং করে সে বাবাকে দেখায়। আর পরে তারা একটি বোতল দিয়ে বাসা বানিয়ে ফেলে।
গল্পটি মূলত টিউটোরিয়াল ধাঁচের, যেখানে ছোটরা তাদের আশপাশের অবহেলিত ও পরিত্যক্ত দ্রব্য দিয়ে বিভিন্ন সৃজনশীল জিনিসপত্র বানাতে উৎসাহ পায়।
ছোটদের কথা চিন্তা করে বই দুটির ইলাস্ট্রেশনে নিয়ে আসা হয়েছে একটু ভিন্নতা। রং, ড্রয়িং ও কম্পোজিশনে যেমন আছে সমসাময়িক ধারার ব্যবহার, আবার কমিক বইয়ের প্যানেলের সাথে গল্পের বর্ণনা যুক্ত করে আনা হয়েছে নতুন বিন্যাস।
বই দুটি ৬ বছরের শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্যও প্রযোজ্য। এ সিরিজের বইগুলোতে পরীক্ষামূলকভাবে তথ্যপ্রযুক্তির কিছু নতুন ধারার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ইন্টারঅ্যাক্টিভ বুক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। তাই কিউআর কোড ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে স্মার্টফোনের কিউআর কোড স্ক্যানার বা গুগল লেন্স দিয়ে স্ক্যান করে সেই ইলাস্ট্রেশনের উপর ফোনটি ধরে রাখলে পাঠক বই দুটির গল্প এআর বা আর্গুমেন্টেড রিয়েলিটির মাধ্যমে দেখতে ও শুনতে পারবে।