শিশুটি প্রতিদিন বেরিয়ে পড়ত

যুক্তরাষ্ট্রের কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯ – ১৮৯২) ‘দেয়ার ওজ অ্যা চাইল্ড অয়েন্ট ফওথ এভ্রিডেই’ শিরোনামে এ কবিতাটি লিখেন ১৮৫৫ সালে, অন্তর্ভুক্ত হয় তার ‘অটাম রিভ্যুলেটস’ (১৮৮১) কাব্যগ্রন্থে। মনে করা হয় কবিতার শিশুটি তিনি নিজেই।

মারিয়া সালামমারিয়া সালাম
Published : 19 Sept 2022, 04:10 AM
Updated : 19 Sept 2022, 04:10 AM

শিশুটি প্রতিদিন বেরিয়ে পড়ত

আর প্রথমে যা দেখতে পেত তা মনে গেঁথে যেত

বিস্ময়, করুণা, ভালবাসা বা ভয় যা-ই আসুক

মূলত সে নিজে ওই বস্তুটি হয়ে ওঠতো,

সারাদিনে ঘুরেফিরে কেবল তার কথাই শিশুটির মনে পড়তো

এই অবস্থা চলত টানা বেশ কয়েক বছর ... কিংবা তার চেয়েও দীর্ঘ সময়।

সেই লাইলাক কুঁড়ি, ঘাস আর লাল-সাদা মর্নিং গ্লোরি, ক্লোভার আর ফোবি-পাখির গান,

মার্চে জন্মানো মেষশাবক, বীজতলার জন্য রাখা লাল সুরকি

এবং ঘোড়ার শাবক … গরুর বাছুর, গোলার পাশে উঠোনে শিশুদের কোলাহল

কিংবা পুকুরের পাশে কাদা … সবই তার অংশ হয়ে উঠত।

জলের নিচে স্থির হয়ে থাকা কৌতূহলী মাছ ... কৌতূহলী জল

... নুয়ে পড়া জলজ গাছপালা ... সবাই তার অংশ হয়ে যেত।

এপ্রিল-মে মাসের ক্ষেতের মুকুল . . . তার সঙ্গে রবিশস্যের অঙ্কুর, এবং হলুদাভ ভুট্টা, ঝোপের সরু শেকড়, ফুলেঢাকা আপেল গাছ আর তার ফল . . . কাঠলিচু আর রাস্তার ধারের আগাছা

… সবই তার অংশ হয়ে উঠত।

পানশালা থেকে বাড়ির পথে যাওয়া বুড়ো মাতাল, স্কুলে যাওয়ার পথে শিক্ষিকা ...

সামনে দিয়ে যাওয়া মিশুক ছেলেরা . .. এমনকি ঝগড়াটে ছেলেরাও

সেই পরিপাটি আর টুকটুকে গালের মেয়েরা … খালি পায়ে কৃষ্ণ ছেলে-মেয়ে,

শহর ও গ্রামের ভ্রমণপথের সব পরিবর্তন

সবই তার অংশ হয়ে উঠত।

তার নিজের বাবা-মা

তার বাবা, সে যার ঔরসজাত আর যে মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে . . .

যারা এই শিশুটিকে নিজের থেকে বেশি দিয়েছে, এখনও প্রতিনিয়ত দিয়েই যাচ্ছে . . .

তারা তার অংশ আর সে তাদের অংশ হয়ে গেছে।

শিশুটির মৃদুভাষী মা, যিনি নিঃশব্দে খাবার টেবিল, থালা-বাসন মুছতেন,

কাপড়-চোপড় ধুতেন . . . আর শরীরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে সারা বাড়িময় ঘুরতেন।

শিশুটির বাবা, যাকে মনে হতো সামর্থ্যবান, স্বয়ংসম্পূর্ণ, পুরুষালি, আবার হীনমন্য, রাগী আর অবিবেচক

তার সেই কাজের সময়, হাতুড়ি পেটানো, দ্রুত উচ্চস্বরে কথাবার্তা,

খদ্দেরের সঙ্গে দর কষাকষি আর তাদের প্রলোভন দেওয়া।

সেই বাড়ির ব্যবহারের জিনিসপত্র, ভাষা, সঙ্গ আর আসবাবপত্র ...

আকাঙ্খা এবং স্ফীত হৃদয়

সেই সহজাত স্নেহ . . . বাস্তব জ্ঞান . . . চিন্তাভাবনা,

রাত আর দিনের দ্বিধা . . . কৌতূহল, কী এবং কীভাবে, সামনে যা দেখা যাচ্ছে সেটিই সত্য নাকি সব হেঁয়ালি!

রাস্তায় ভিড় করা ব্যস্ত নারী-পুরুষ

আর সেসব যদি হেঁয়ালিই না হয় তবে সেগুলো কী, রাস্তা নিজেই?

ঘরের সামনের জায়গাটুকু . . . জানালার ধারে রাখা মালামাল, যানবাহন ... আর জটলা ... ক্লান্ত শিবির আর ফেরিতে করে দীর্ঘযাত্রা।

সূর্যাস্তের সময় দূর থেকে জেগে উঠা উজানের গ্রাম . . .

নদী, ছায়া, আলোক বৃত্ত এবং কুয়াশা ...

তিন মাইল দূর থেকে ছাদ আর দেওয়ালের উপর এসে পড়া আলো ...

স্কুনারের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুমন্ত ঢেউ ... আর ছোট্ট নৌকাটির প্রান্তরে আলতো আঘাত করে তার দ্রুত গড়িয়ে যাওয়া, রঙিন মেঘের স্তর ...

নিঃসঙ্গ, রক্তিম চালা . . . তার স্থির বিস্তার, দিগন্তের প্রান্ত, হাওয়ায় ভেসে থাকা কাক, তৃণভূমি আর লবণাক্ত মাটির গন্ধ … এসবসবই সেই শিশুটির অংশ হয়ে উঠেছিল

যে প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে পড়ত, এখন প্রতিদিনই বেরিয়ে যাবে, 

আর এই সবকিছু এখন তার অংশ হয়ে উঠবে।

কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!