ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু সে সুযোগ ছিল না নিরাপত্তার কারণে।
Published : 14 Aug 2023, 03:15 PM
শেষ ফুটবল বিশ্বকাপে যখন ট্রফি ঢাকায় এলো তখন ছবি তুলতে পারিনি। এটা আমার জন্য একটা দুঃখের বিষয়। কিন্তু এবার পুরুষদের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফি দেখা ও ছবি তুলতে ভুলিনি, বাবার সঙ্গে ট্রফিটি দেখতে গিয়েছিলাম বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে।
অভিজ্ঞতাটা ছিল অসাধারণ। ট্রফির সাথে ছবি তোলার গল্পটাই আজ বলবো। এবারের ট্রফি বাংলাদেশে তিনদিনের প্রদর্শনীর জন্য আনা হয়েছিল। আইসিসির ঐতিহ্য অনুযায়ী বিশ্বকাপ ট্রফি যে দেশে নেওয়া হয় সেই দেশের কোনো একটি বিশেষ স্থানে বা বিশেষ স্থাপনার সামনে রেখে ফটোসেশন করা হয়। আগেরবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ট্রফির ফটোসেশন করা হয়েছিল। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফি প্রথমদিন আমাদের পদ্মাসেতুর নিচে রাখা হয়েছিল। দ্বিতীয়দিন ট্রফি নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটারদের দেখাতে এবং ছবি তুলতে।
তারপর তৃতীয়দিন নিয়ে যাওয়া হয় বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে। এখানে ট্রফিটি সাধারণ জনগণের দেখার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল প্রায় ৯ ঘণ্টা। সকালের দিকে খুব একটা ভিড় দেখা না গেলেও বিকেলের দিকে ছিল উপচেপড়া ভিড়। আর সেইদিনই আমি সুযোগ পেলাম ট্রফি কাছ থেকে দেখার। আমি আর বাবা গেলাম মোটরসাইকেলে করে। যাওয়ার সময় রাস্তায় প্রচুর যানজট ছিল। কিছু মানুষ নিয়ম ভঙ্গ করে আগে যেতে চাচ্ছিল, এতে করে যানজট আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে।
এভাবে যেতে যেতে রাস্তায় জোহরের আজান দিয়ে দিল, তখন আমরা নামাজের জন্য গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। এই মসজিদের পাশেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি রয়েছে। তারপর আবার আমরা রওনা দিলাম। যানজট ঠেলে অবশেষে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে পৌঁছলাম। আমাদের মোটরসাইকেল বসুন্ধরার আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়ায় রাখা হলো। মোটরসাইকেলটি এখানে রাখা নিরাপদ মনে হলো।
আমরা লিফটে করে একতলা পৌঁছলাম যেখানে ট্রফি রাখা হয়েছে। ভেতরে ঢুকে দেখলাম অনেক মানুষের ভিড়, তারা সবাই আইসিসির ট্রফি দেখার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর আমাদের সুযোগ আসলো ট্রফি দেখার। তারপর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বাবা ট্রফির সাথে আমার কিছু ছবি তুললেন।
এত কাছ থেকে ট্রফি দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছিল, ট্রফি দেখার পর অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো। ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু সে সুযোগ ছিল না। কারণ ট্রফিটা অনেক নিরাপত্তার সাথে রাখা হয়েছিল।
আমি আর বাবা ঘুরে ঘুরে দ্বিতীয়তলা এবং তৃতীয়তলা থেকে দেখলাম। বেশকিছু ছবি তুললাম। তিনতলা থেকে লক্ষ্য করলাম অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও ট্রফি দেখতে এসেছে। আমার একটু পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোক তার মোবাইল দিয়ে দূর থেকে ট্রফির সাথে সেলফি তোলার চেষ্টা করছে। ট্রফি দেখার জন্য ভিড় বাড়তে লাগলো।
তারপর বাড়ি ফেরার পালা। বসুন্ধরা থেকে বের হয়ে মনটা খুশি লাগছিল, কারণ এতদিনের ইচ্ছাটা আমার পূরণ হলো। বাবাকে বললাম, ‘বাবা আমার ক্ষুধা লেগেছে’। খুশিতে এতক্ষণ ক্ষুধার কথা মনেই ছিল না। তখন বাবা সোবহানবাগের সুস্বাদু তেহারি খাওয়ালেন। দুজনে মিলে পেটপুরে সেই তেহারি খেলাম। আসলেই খুব মজার ছিল।
খাওয়া শেষে এবার বাড়ি ফিরে যাবার পালা। বাবা মোটরসাইকেল স্টার্ট দিলেন, দুজনেই যার যার হেলমেট পরে যাত্রা শুরু করলাম বাড়ির পথে। বাবা বললেন, 'আকাশে কালো মেঘ জমেছে, ঝুম বৃষ্টি হবে হয়তো। আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হবে।' আমার মনে তখন ট্রফি দেখার অনুভূতি লেগে আছে।