একুশ
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
ছিটকে পড়ে শিমুল-জবা
ছিটকে পড়ে খেলা
ছিটকে পড়ে ভাটিয়ালি
নদীর ছেলেবেলা--
ছিটকে পড়ে মদনমোহন
ছিটকে পড়ে খুলি
ছিটকে পড়ে নামতা-ভূগোল
ছুড়ল যখন গুলি...
ভিজল বাতাস ডুবল আকাশ
বাংলা ভাষার গ্রাম--
আমার ভাইয়ের রক্ত দিয়ে
একুশ লিখিলাম।
আগুনজ্বলা ফাগুনে
আবিদ আনোয়ার
ফাগুন এলেই আগুন জ্বালে
লাল পলাশের বন--
ফাগুন এলেই আগুন জ্বালে
দুঃখী মায়ের মন।
সেই যে কবে ‘আসছি’ বলে
দুষ্টু খোকা তার
বেরিয়ে গেল নিশান হাতে
ফিরল না সে আর।
ফাগুন এলে সেই মা ডাকে--
“কই গেলি বাপধন?”
“এই তো আমি!”-- বলে ওঠে
হাজার পলাশ বন!
শহীদ মিনার বলে মা গো,
দেখ মেলে তোর আঁখি,
এই তো আমি তোর ছেলে মা,
চিনতে পারিস নাকি?
ফুল কুড়াতে গিয়েছিলাম
অন্য কোথাও না--
দৈত্য-দানোর চোখ এড়িয়ে
ফুল এনেছি মা!
প্রিয় বর্ণমালা
স.ম. শামসুল আলম
কাঠ পোড়ানো কয়লা দিয়ে
মাটির ডেরায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
আকাশ থেকে শিশির নিয়ে
ঘাসের ডগায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।
তুলট মেঘের রং ছড়িয়ে
চাঁদের বুকে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
উদোম শিশুর হাসি দিয়ে
মায়ের মুখে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।
সর্ষে ফুলের হলুদ দিয়ে
ক্ষেতের আলে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
ঢেউ তোলানো জল ছিটিয়ে
গাঙের জলে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।
পাতার বাঁশির সুর বাজিয়ে
পাখির পাখায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
মাটির ঘ্রাণের ছোঁয়া দিয়ে
মনের খাতায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।
সেই থেকে এই বর্ণমালা আমার বুকের ধন
বিশ্বজয়ী বিস্ময়ে তাই নাচে বাউল মন।