দুই প্রতিবেশীর কাণ্ড

বই: ফোক টেইলস ফ্রম তিব্বত, সংগ্রাহক ও ইংরেজি অনুবাদক: ক্যাপ্টেন ডব্লিউ. এফ. ওকোন্নোর, সি.আই.ই, প্রকাশকাল: ১৯০৬

তাবাসসুম আরজুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2022, 06:12 AM
Updated : 2 April 2022, 06:14 PM

অনেক আগের কথা। তিব্বতের এক গ্রামে বাস করতো দুই প্রতিবেশী। তাদের ঘর ছিল পাশাপাশি।

এক প্রতিবেশী অনেক ধনী আর আরেকজন একদমই গরিব। ধনী লোকের নাম টিরিং আর গরিব লোকের নাম চামবা। ধনী টিরিং খুব অহংকারী আর গরিব চামবা অনেক উদার।

একদিন চামবার ছোট্ট কুঁড়েঘরে একজোড়া চড়ুই বাসা বাঁধে। ঘরের দরজার উপরের ছোট একটা ফাঁকা জায়গায় চড়ুইদের বাঁধা বাসায় কয়েকদিন পরই ডিম হয়। কিছুদিন পর ডিম ফুটে মাত্র ছানারা বের হয়েছে। একদিন ছানাদের জন্য খাবার আনতে বাবা চড়ুই আর মা চড়ুই বাইরে যায়। এমন সময় হঠাৎ পাখির বাসা থেকে একটি ছানা নিচে গড়িয়ে যায়। মাটিতে পড়ে ছানার পা ভাঙ্গে। ব্যথায় ছোট্ট ছানা কাতরায়, কান্না করতে শুরু করে।

ঠিক এমন সময় চামবা এসে দেখে ছোট্ট ছানাটি কাঁদছে। চামবা ছানাটিকে তুলে ভালো করে খেয়াল করতে থাকে। অনেকক্ষণ দেখার পর বোঝা গেল ছানার পা ভেঙ্গেছে। চামবা নিজেই তার সেবা করতে লাগলো। ছোট লাঠি দিয়ে ছানার পা বেঁধে দিলো, খাবার দিলো। ছানাটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে আবার তাকে দরজার উপর পাখির বাসায় রেখে দিয়ে আসে চামবা।

ওই ছানাটি ছিলো এক পরী। কিন্তু সেই কথা তো চামবা জানতো না। না জেনেই সে উপকার করেছে। অনেকদিন পর সেই পরী ছানাটা বড় চড়ুই হয়ে যায়। একদিন সেই চড়ুইটা এসে হাজির চামবার ছোট কুঁড়েঘরের খাওয়ার টেবিলে। চামবা সেখানেই বসে কাজে ব্যস্ত ছিলো।

চড়ুইটা মানুষের কণ্ঠে চামবাকে বলে, “আমার উপকার করার জন্য তোমাকে এই শস্যদানাটা দিলাম। তোমার বাড়ির উঠানের বাগানে এই দানা লাগাবে আর খেয়াল রাখবে।”

এই বলে শস্যদানাটা খাবারের টেবিলের উপর রেখে চড়ুইটা উড়ে চলে যায়।

চামবা এই দৃশ্য দেখে বললো, “এটাও কি সম্ভব চড়ুই পাখি কথা বলে! এতো ছোট শস্যদানা সে আমাকে দিয়ে গেল। বাহ! যাই হোক, যা বলেছে সেইভাবেই দানাটা রোপণ করব।”

এই বলে সে শস্যদানা তার বাগানে রোপণ করলো। এরপর অনেকদিন হয়ে যায় এই ঘটনার। চামবার মনেও থাকে না সেই চড়ুই আর শস্যদানার কথা। এরপর একদিন চামবা দেখে তার বাড়ির উঠানের বাগানে ভুট্টা গাছ। গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হলো। ভুট্টাও ধরলো। কিন্তু এ কী! ভুট্টা দানার জায়গায় হিরা-মুক্তা-রত্ন। চামবা এই দেখেই নাচতে শুরু করলো। বাসার সব কাজ নিজ হাতে শেষ করে সে রওনা দিলো বাজারের দিকে, রত্নগুলো বিক্রি করার জন্য। এই রত্ন বিক্রি করে চামবা বিরাট বড়লোক হয়ে গেল।

এরপরই তার ধনী প্রতিবেশী টিরিং খেয়াল করলো চামবা আর গরিব নেই। সে কীভাবে এতো বড়লোক হলো? টিরিং ঠিক বুঝতে পারছে না বিষয়টা। টিরিং মনে মনে ঠিক করলো এই রহস্য সে বের করেই ছাড়বে কীভাবে চামবা বড়লোক হলো।

একদিন টিরিং বেশ কিছু খাবার নিয়ে চামবার বাড়িতে হাজির হয়। এতো মজাদার খাবার খেতে খেতে তারা গল্প শুরু করে দেয়। গল্পে গল্পে চামবা এতো মশগুল হয়ে যায় যে টিরিংকে সে বলেই দিলো কীভাবে ধনী হয়েছে।

পুরো কাহিনি শুনে পরের দিনই টিরিং খোঁজ করলো তার বাসার দরজার উপরে কোনো চড়ুই পাখি বাসা বেঁধেছে কিনা। হ্যাঁ, ঠিকই একজোড়া চড়ুই পাখি বাসা বেঁধেছে এবং তাদের ডিম ফুটে ছানাও বের হয়েছে। টিরিং উপরে উঠে বাসা থেকে একটি ছানা খপ করে ধরেই সঙ্গে সঙ্গে নিচে ফেলে দেয়। ছানাটির পা ভেঙ্গে যায়। টিরিং ছানাটির পায়ে একটি লাঠি জড়িয়ে দিয়ে আবার পাখির বাসায় রেখে আসে। আর মনে মনে ভাবতে থাকে, এই কাজের জন্য ছানাটি ধন্যবাদ দিতে আসবে, তাকে ভুট্টার দানা দেবে, সে আরও বড়লোক হবে। এই ভাবতে ভাবতে টিরিং দিন কাটাতে থাকে। মনের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু করে।

একদিন আসলেই টিরিংয়ের কাছে চড়ুই আসে। বলে, “এই শস্যদানা রোপণ করো। তোমার কর্মের ফল পাবে।”

টিরিং খুশিতে সেই শস্যদানা বাগানে রোপণ করলো। বেশ কিছুদিন পর সেই দানা থেকে ভুট্টা গাছ জন্মালো। কিন্তু ভূট্টা না হয়ে গাছের ভেতর থেকে এক লোক বের হয়ে এলো। টিরিংকে সে জানালো এই বাড়ি, গাড়ি যা কিছু সে করেছে, এর ঋণ ঠিকমতো শোধ করা হয়নি।

টিরিং লোককে যতই বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই হলো না। নিজ বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হলো। টিরিং বুঝতে পারলো, চড়ুই ছানার পা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যই তার এমন হয়েছে। টিরিং ধনী থেকে গরিব হয়ে গেল।

এদিকে চামবা ধনী হয়ে এলাকার মধ্যে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। স্কুলে সবাইকে বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে চামবা। টিরিং ঠিক করলো তার ছেলেকে চামবার স্কুলে ভর্তি করে দেবে। চামবাও খুব খুশি হলো। টিরিংয়ের ছেলে খুব ভালোভাবে লেখাপড়া করতে থাকে।

একদিন চামবা অন্য দেশে যাবে ব্যবসার জন্য। সে টিরিংকে দশটি হিরা দিয়ে বললো এগুলো সাবধানে রাখতে। ফিরে এসে সে নেবে। এই বলে চামবা চলে গেল। টিরিং হিরাগুলো দেখে লোভ সামলাতে পারলো না। ঠিক করলো এগুলো চামবাকে ফেরত দেবে না, আর ব্যাগের মধ্যে বালি ভরে রাখলো। চামবা দেশে এসে তার হিরাগুলো চাইলো। কিন্তু ব্যাগের ভেতরে কেন বালি ভরা জিজ্ঞেস করতেই টিরিং বললো, “বন্ধু, এগুলো বদলে গেছে। বন্ধু, এগুলো বদলে গেছে।”

এই শুনে চামবা আর কিছুই বললো না। মনে দুঃখ নিয়ে সে বাড়িতে চলে গেল।

এরপর একদিন টিরিং এসে চামবাকে অনুরোধ করলো তার ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে, কাজের জন্য সে অন্য দেশে যাবে। চামবা সাদরে টিরিংয়ের ছেলেকে গ্রহণ করলো। কিন্তু চামবা একটি বুদ্ধি বের করলো। কিছুদিনের জন্য সে একটি বানর ধরে আনে। এটাকে শিখাতে লাগলো ‘বাবা, আমি বদলে গেছি’ বলার জন্য।

তো, টিরিং বেশ কিছুদিন পর ফিরে এলো। চামবার কাছে তার ছেলেকে চাইলো। চামবা সেই বানরটি দিলো তার হাতে। আর বললো, “এই নাও তোমার ছেলে।”

কিন্তু টিরিং এই বানরকে কিছুতেই তার ছেলে ভাবতে পারলো না। বানরটা টিরিংকে দেখে বলা শুরু করলো, “বাবা, আমি বদলে গেছি, বাবা, আমি বদলে গেছি”।

টিরিং বুঝতে পারলো চামবার চালাকি। প্রচণ্ড রাগ হলেও সে চামবার হিরাগুলো ফেরত দেওয়ার চিন্তা করলো। হিরাগুলো টিরিং ফেরত দিয়ে দেয় আর ছেলেকে ফিরে পায়। এরপর থেকে টিরিং ঠিক করলো সে আর কখনও কারও ক্ষতি করবে না।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!