টিকা কাহিনি

করোনাভাইরাসের টিকা নিতে যাবো। রাত থেকেই একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। কারণ, সেই যে কবে টিকা নিয়েছিলাম ছোটবেলায়, তারপর তো অনেক দিন কেটে গেল!

এম রিয়াজুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2022, 09:06 AM
Updated : 14 March 2022, 09:06 AM

এখন তো বৈশ্বিক অতিমারি করোনাভাইরাস থেকে রেহাই পেতে বাংলাদেশেও ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে। যখন করোনাভাইরাস প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, কতই না আতঙ্ক বিরাজ করছিল সবার মাঝে। কিন্তু সেই আতঙ্কের এখন অবসান! অনেকে ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছে।

আমার পরিবারে শুধু আমিই বাকি ছিলাম ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য। আমাদের ফাইজারের টিকা দেবে। টিকা দেওয়ার আগের দিন টিকাকার্ড আমাদের স্কুল থেকে সরবরাহ করা হয়। পরদিন শেরপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়াম আমাদের টিকা নেওয়ার কেন্দ্র।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল দশটায় টিকা। সকালের নাস্তা করেই রওনা হলাম টিকাকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। সেদিন আমাদের স্কুলের সঙ্গে অন্য আরেকটা স্কুলেরও টিকা দেওয়ার কথা। আমি অবশ্য আগের দিনই বন্ধুদের বলে রেখেছিলাম যে আমরা একসঙ্গে টিকা নেবো।

স্টেডিয়ামে যাওয়ার আগে একবার স্কুলে গেলাম। গিয়ে দেখি কেউ নেই, সবাই নাকি স্টেডিয়ামে! কী আর করা, আমি একাই স্টেডিয়ামে যাই। স্টেডিয়ামে পৌঁছার পর মনে পড়ল, আরে! আমিতো টিকার কার্ডই নিয়ে আসিনি। তখন আমি কী করব নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। একে তো দেরি হয়ে গিয়েছে, আবার টিকা কার্ড রেখে চলে এসেছি। জলদি দৌড়ে বাসায় যাই। তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে কার্ড নিয়ে আবার দৌড়!

তারপর টিকাকেন্দ্রের ভেতর ঢুকে রীতিমত অবাক হলাম, এত ভিড়! এত লম্বা লাইন হয়েছে দেখে ভাবলাম, আজ আমি শেষ। এই লাইন কবে যে শেষ হবে কে জানে! সবাই লাইনে দাঁড়িয়েছে, রেড ক্রিসেন্ট বাহিনী লাইন সামলাচ্ছে। সঙ্গে আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবক ভাইয়েরা লাইন পরিচালনা করছিল।

আমাদের স্কুলের কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সেখানে ছিলেন। এত ছাত্রের মাঝে আমাকে সবার শেষের দিকে দাঁড়াতে হলো। লাইনে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা- তাহের, হাসিব, নিশার, জুনাইদ, সাফিন, সাদ, নাঈম, অর্ণবসহ অনেকেই ছিল। তারা সবাই ঘণ্টাখানেক আগেই এসেছে। শীতের সকালে আজ খুব রোদ পড়েছে, গরমে আমি ঘেমে যাচ্ছিলাম।

কিছুক্ষণ পর, হঠাৎ লাইনের সামনের দিক থেকে এক বন্ধু তাহের ডাক দিলো। আমাকে সে তার সামনে দাঁড়ানোর জায়গা করে দিলো। আমিতো প্রচুর খুশি! আমার অনেক সময় বেঁচে যাবে। সেখানে আরও অনেক বন্ধু ছিল। আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলাম, অনেক মজা হলো। কিন্তু লাইনতো এগোচ্ছেই না। কচ্ছপের গতিতে যেন লাইন চলছিল।

আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেলাম। সবাই নতুন বছরে নতুন কী কী শুরু করব এসব নিয়ে আলোচনা করলাম। সবাই সবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুদৃঢ় করছে।  কিছুক্ষণ পর আমাদের ডাক এলো, একসঙ্গে চারজন বন্ধু মিলে স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়ন অর্থাৎ ভ্যাকসিন রুমে প্রবেশ করলাম, সেখান থেকে টিকা কার্ড জমা দিয়ে মূল ভ্যাকসিন রুমে গেলাম। অনেকক্ষণ ক্লান্ত থাকার পর যেন মনে কিছুটা প্রশান্তি নেমে এলো।

তবুও মনে একটা ভীতি কাজ করছিল। ইনজেকশনের সুই ফোটালে যদি ব্যথা পাই! এদিকে আমার হাত-পা কাঁপছে। বন্ধুরা মজা করে বলল, তুমি আজ শেষ! আমাদের চারজন থেকে তিনজন আগে টিকা নিল। কিছুক্ষণ পর, আমার ডাক এলো। নার্স আমাকে চেয়ারে বসতে বললেন। তারপর নার্সকে বললাম, ‘ম্যাম, ব্যথা পাবো নাতো?’

কখন যে আমার বাম হাতে টিকা দিয়ে দিলো বুঝলামই না। তারপর বললেন, ‘তোমরা বাসায় চলে যাও, তোমাদের যার যার টিকার কার্ড স্কুলে পেয়ে যাবে’।  মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি পেলাম। তখন আমরা সবাই জোরে চিৎকার করে বললাম, ‘গট ভ্যাকসিনেটেড’।

বাসায় যাওয়ার আগে কিছু বন্ধু মিলে আমাদের জেলা গণগ্রন্থাগারে গেলাম। সেখানে করোনাভাইরাস সচেতনতা বিলবোর্ড, ভ্যাকসিন কার্যক্রম নিয়ে কিছু পোস্টার দেখলাম।  এটা ভেবে খুব ভালো লাগছিলো যে,  আমরাও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছি।  দিনটি আমাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ, চিরদিন স্মৃতিময় হয়ে থাকবে।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, নবম শ্রেণি, শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি, শেরপুর

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!