অক্টোপাসের বন্ধু

সাগরে এক অক্টোপাস বাস করত। সে খুব শান্ত এবং লাজুক প্রকৃতির।

রবিউল কমলরবিউল কমল
Published : 22 Dec 2021, 11:22 AM
Updated : 22 Dec 2021, 11:22 AM

কিন্তু অক্টোপাসের কোনো বন্ধু ছিল না। কারণ সে সবার সঙ্গে মিশতে ভয় পেত।

একদিন অক্টোপাস একটি পিচ্ছিল ঝিনুক ধরার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে শিকারির ফাঁদে পড়ে যায়। সে জালে আটকা পড়লো। সেগুলোর সুতা এতোটাই শক্ত ছিল যে সে নড়তে পারছিল না। সব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও কোনো কাজ হচ্ছিল না।

এসময় তার আশপাশ দিয়ে অনেক মাছ ছুটে যাচ্ছিল। সে সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছিল। কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করলো না। তখন তার কাছ দিয়ে একটি ছোটমাছ ছুটে যাচ্ছিল। মাছটি ছোট হলেও খুব দয়ালু ছিল। অক্টোপাসের কষ্ট দেখে ছোট মাছটি এগিয়ে এলো এবং পুরো জালটি দাঁত দিয়ে কেটে ফেলল। তখন অক্টোপাস মুক্তি পেল।

কিন্তু, অক্টোপাস এতোটাই লাজুক ছিল যে মাছের সঙ্গে কথা বলার সাহস পেলো না। তাই বন্ধুত্ব করার সুযোগও হাতছাড়া করে ফেলল। সে মাছটিকে শুধু আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের বাসায় চলে এলো।

এরপর অক্টোপাস সারারাত এটা নিয়ে চিন্তা করলো। তার খুব আফসোস হচ্ছিল যে দয়ালু মাছের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুযোগ নষ্ট করে ফেলেছে।

তারপর বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেলো। একদিন অক্টোপাস কিছু পাথরের ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। তখন সে খেয়াল করল চারপাশের সবাই তাড়াহুড়ো করে খুব দ্রুত সাঁতার কেটে পালাচ্ছে। সে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তারপর একটু দূরে থাকাতেই দেখলো একটি বিশাল মাছ তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। অক্টোপাস দ্রুত লুকিয়ে গেল।

তারপর পাথরের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখল, বিশাল মাছটি যাকে তাড়া করছে সেই ছোট মাছটি তাকে সেদিন উদ্ধার করেছিল। ওই মুহূর্তে মাছটির সাহায্য দরকার ছিল। কিন্তু, বড় মাছটি এতোটাই বিপজ্জনক ছিল যে কেউ তার কাছে যাওয়ার সাহস দেখায়নি।

অক্টোপাসের মনে পড়ল, ছোট মাছ কীভাবে তাকে সাহায্য করেছিল। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো যেভাবে হোক মাছটিকে সাহায্য করতে হবে। এজন্য করার দরকার সে তাই করবে।

কোনো দ্বিধা না করেই অক্টোপাস পাথরের আড়াল থেকে খুব দ্রুত বেরিয়ে এলো। সে নিজেকে দৈত্যাকার মাছের পথ আগলে রাখলো। মাছটিকে ধরার আগেই সে তার শরীর থেকে রঙ ছুড়ল। তারপর মাছটিকে ধরে আবার পাথরের মধ্যে লুকিয়ে গেল।

সবকিছু এত দ্রুত ঘটেছিল যে বড় মাছ কিছুই করতে পারেনি। দৈত্যকার মাছটি এবার পাথরের কাছে গেল এবং অক্টোপাস এবং ছোট মাছটিকে খুঁজছিল। সে তাদের দুজনকেই খেতে চেয়েছিল।

কিন্তু, দৈত্যকার মাছটির শরীরে ভয়ানক চুলকানি শুরু হলো। প্রথমে তার পিঠে তারপর তার পাখনা এবং পরে সারা শরীরে চুলকানি ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, অক্টোপাসের গাঢ় রঙ তার শরীরে ভয়ানক অ্যালার্জি তৈরি করে।

তাই বড় মাছ বিরক্ত হয়ে সাঁতার কেটে চলে গেল। সে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে থাকা সব মাছ এসে অক্টোপাসকে অভিনন্দন জানাল। তারপর ছোট মাছটি তাদের সবাইকে বলেছিল, সে কীভাবে কয়েকদিন আগে অক্টোপাসকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু, সে কখনো ভাবতেই পারেনি কেউ এতটা কৃতজ্ঞ হয়ে এমন বিপজ্জনক কিছু করবে।

এসব শুনে সবাই অক্টোপাসকে ঘিরে ধরলো। তারপর অক্টোপাসের বন্ধু হতে চাইলো। তখন থেকে লাজুক অক্টোপাসের অনেক বন্ধু হয়ে গেল। তাকে আর একা ঘুরতে হতো না। আর কেউ বিপদে পড়লে সবাই একসঙ্গে সাহায্য করত।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!