‘ক্যারলটন ফারমার্স ব্রাঞ্চ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল ডিস্ট্রিক্ট’ (আইএসডি) এর অধীনে এ স্কুল। আমাদের আইএসডি-এর অধীনে ৩৫টা স্কুল আছে। এর মধ্যে ২৪টা এলিমেন্টারি, ৬টা জুনিয়র হাই স্কুল আর ৫টা হাই স্কুল।
এখানে স্কুলের ক্লাস বা গ্রেডের হিসাব হচ্ছে- প্রাইমারি, কেজি থেকে ফাইভ গ্রেড, মিডল স্কুল, গ্রেড সিক্স থেকে এইট আর হাই স্কুল গ্রেড নাইন থেকে টুয়েল্ভ। ডালাসের সব আইএসডির ক্যাফেটেরিয়াগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) দ্বারা চালিত।
আমাদের স্কুলের নাম ‘চার্লস এম ব্ল্যাল্যাক মিডল স্কুল’। এখানে এগারশো স্টুডেন্ট আছে। আমরা প্রতিদিন প্রায় ছয়শ স্টুডেন্টকে ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ সার্ভ করি। সব বাচ্চাই স্কুলে খাবার খায়। কেউ যদি স্কুলের খাবার না খেয়ে বাসার খাবার খেতে চায়, তাহলে তা আগে থেকে স্কুলকে জানাতে হয়।
প্রতিটি স্টুডেন্টের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট আর আইডি নাম্বার থাকে। বাবা-মা নির্দিষ্ট কিছু টাকা বাচ্চার অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেয়, আবার কিছু বাবা-মায়ের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে অটোমেটিক ডিপোজিট হয়ে বাচ্চার অ্যাকাউন্টে ঢোকে। স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টে লো ব্যালেন্স দেখালে স্কুল থেকেই বাবা-মাকে জানানো হয়। কোন স্টুডেন্ট বিনামূল্যে খাবার খায় তা সম্পূর্ণ গোপন থাকে। ছাত্ররা ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে নিজ আইডি বলে বা নিজেই কম্পিউটারে পুশ করে। অন্য সময়ে ক্ষেত্র বিশেষে টাকা লাগলেও করোনাভাইরাস মহামারীর সময় থেকে আমাদের আইএসডি সব স্কুলগুলোতে সব স্টুডেন্টদের ফ্রি লাঞ্চ দেওয়া হচ্ছে।
আমরা ক্যাফেটেরিয়ার কর্মীরা কঠোরভাবে হাইজিন মেনে চলি। নেলপলিশ, মেকাপ, লিপিস্টিক, কড়া পারফিউম ব্যবহার নিষিদ্ধ। কারণ এসব থেকে যেন খাবারে ক্যামিকেল হ্যজার্ড না হয়। আইএসডি থেকে পাঁচদিনের জন্য দেওয়া পাঁচটি নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরতে হয়। হেয়ার নেট, এপ্রোন, হ্যান্ড গ্লাবস তো আছেই। কাজ শেষে প্রতিটি জিনিস ধুয়ে স্যনিটাইজ করা, সঠিক তাপমাত্রায় খাবার রাখা, গরম খাবার ওয়ার্মারে রাখা, ঠান্ডা খাবার ফ্রিজে রাখা, প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর তাপমাত্রা চেক করা হয়।
ব্রেকফাস্টে ছাত্ররা চারটা করে ফুড আইটেম নেয়। ব্রেড, মাংস বা মাংস দিয়ে বানানো খাবার, জুস, ফল আর দুধ। দুই রকমের দুধ থাকে, ফ্যাট ফ্রি ও চকলেট মিল্ক। দই আর গ্রেনোলাও থাকে। লাঞ্চে ছাত্রদের পাঁচটা করে ফুড আইটেম নিতে হয়। গ্রেইন (রাইস বা হোল হুইট দিয়া বানানো খাবার), মাংস, মাছের ফিস ফিংগার সপ্তাহে একদিন, ভেজিটেবল বা সালাড, ফল, দুধ বা দই।
সাইড হিসেবে পানি, আইসক্রিম, কুকি ও চিপস থাকে। এগুলো টাকা দিয়ে কিনে নেয় বাচ্চারা কেউ কেউ। একটা বাচ্চার কতটুকু পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে তা সঠিকমাত্রায় মেপে ঠিক ততটাই ওদের প্রতিদিন দেওয়া হয়। এজন্য খাবার বানানোর সময়, খাবার সার্ভ করার সময় বিভিন্ন মাপের মেজারমেন্ট কাপ, চামচ, বাটি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। খাবার ওয়ান টাইম প্লেটে দেওয়া হয়। একেক দিন একেক রকম খাবার দেওয়া হয়।
এবার খাবারের মেনু কী কী তা বলি। প্রথমে বলি গ্রেইন (রাইস, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার) নিয়ে। গ্রেইন হিসেবে থাকে- পিজ্জা, মিনি কালযোন পিজ্জা ডো ভেতরে চিজ, বাসিল, সস ইত্যাদি দিয়ে বানানো, অনেকটা আমাদের দেশের ছোট পুরি, সমুচার মতো। চিকেন স্যন্ডুইচ, হ্যামবার্গার, ম্যকারনি চিজ দিয়ে রান্না, সঙ্গে গার্লিক ব্রেড, ক্রিসপি ট্যাকোস সঙ্গে বিফ কিমা ভুনা, আর চিজ, কর্নডগ, বিফ বা চিকেন দিয়ে ফ্রাইড রাইস, ভেজিটেবল ফ্রাইড রাইস, মিট বল সস দিয়ে রান্না করে রাইসের সঙ্গে দেয়, স্পেগেটি, তামালে, এটা ভুট্টার পাতার দিয়ে প্যাঁচানো খুব মজার একটা ভেজিটেরিয়ান খাবার। আর থাকে টোস্টার স্যান্ডুউইচ সিনামন ব্রেড ইত্যাদি।
সালাদের মধ্যে থাকে- শসা, টমেটো, শসা-স্পিনাচ দিয়ে বানানো সালাদ, ফ্রেস ছোট গাজর, শ্যালারি ইত্যাদি। ফ্রেস কাঁচা ভেজিটেবলও দেয়। ফল- ফ্রেস সিজনাল ফ্রুটস থাকে, আবার প্যাকেট করা ফ্রুটস কাপও থাকে (ম্যাংগো কাপ, পি কাপ, পাইনআপেল, মিক্সিট ফ্রুটস কাপ, ওয়াটারমেলন কাপ ও আপেল কাপ ইত্যাদি।
লাঞ্চ শেষে বা সপ্তাহের শেষে যখন ট্রে-ভর্তি খাবার, ফল, সালাদ, সব্জি, কার্টুনভরা দুধগুলো ফেলে দেওয়া হয়, দীর্ঘশ্বাস ফেলি, আর আমার দেশে যারা গরিব, রুগ্ন, অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাদের কথা ভাবি। আদর্শ খাবার কতজন বাচ্চা পায়? পুষ্টিহীন, মেধাহীন হয়ে বড় হওয়া বাচ্চাগুলো বিশ্ব দরবারে প্রতিযোগিতা কীভাবে করবে!
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |