মরুপ্রাণীরা কীভাবে বাঁচে

তাই তো! মরুভূমির প্রাণীরা এতো গরমে দিনের পর দিন পানি না খেয়েও কীভাবে বেঁচে থাকে? এ রহস্য উদঘাটনে জীববিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেয়েছেন মজার সব তথ্য।

শেখ আনোয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2021, 04:47 PM
Updated : 3 July 2021, 04:47 PM

তারা জেনেছেন, মরুভূমিকে যতটা শুকনো মনে করা হয় মরুভূমি আসলে ততটা শুকনো নয়। সেখানেও খোঁজ করলে পানি পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ শুষ্ক মরুভূমিতেও রাতের বেলায় পাথরের স্তুপের নিচে শিশির জমে। গভীর বালির স্তর ভেদ করে বাতাস সেখানে রেখে আসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শিশিরকণা।

কারাকুম মরুভূমিতে বালির ওপর তরমুজ ফলে। সেজন্য সেচের প্রয়োজন হয় না। উপসাগর থেকে বাতাস রাতে ঠান্ডার সময় যে শিশিরকণা বয়ে নিয়ে আসে, বালি তা শুষে নেয়। এ থেকে তরমুজ গাছ রাতে তার কাঙ্ক্ষিত পানি পায়। মরুভূমির অনেক প্রাণী রাতের পানি প্রাপ্তির এ সুযোগ কাজে লাগায় তাদের নিজ দৈহিক প্রক্রিয়ায়। প্রাণীরা খোঁজ রাখে পাথরের ফাঁকে, গভীর গহ্বরে কোথায় শিশির জমা হয়ে লুকানো পানি ধারায় সৃষ্টি হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে বেতং নামের যে ছোট ক্যাঙারু ইঁদুর বাস করে, এরা অভিনব কায়দায় বালু মাটি থেকে রাতে জমা শিশিরকণা বের করে আনতে জানে। এরা মূলত উদ্ভিদের বীজ খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। এরা শুকনো বীজগুলো মুখে পুড়ে বালুর গভীর গর্তে তৈরি করা বাসার বালুর উপর রেখে দেয়। বীজ তার সহজাত নিয়মানুসারে বালু থেকে পানি শুষে নিয়ে পরিপুষ্ট হতে থাকে এবং বেতং পানিতে পুষ্ট বীজ খেয়ে শরীরের পানির চাহিদা মেটায়। এছাড়া গোসাপ মলচ-এর সারা গায়ে ও লেজে রয়েছে কাঁটা। এ কাঁটাগুলো শুধু আত্মরক্ষার অস্ত্র নয়, বরং দেহে পানি সরবরাহের আধার যা বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায় জানা গেছে। মরুভূমির এ গিরগিটি মতো প্রাণী মলচ-এর খসখসে চামড়ার এ কাঁটাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। এমন গোসাপের গায়ে এক ফোঁটা পানি পড়লেই ত্বক তা শুষে নেয়। এসব ছিদ্রে রয়েছে সূক্ষ্ম শিরা বা ত্বকে শোষিত পানি সব জমা হতে থাকে মুখের ভেতর ব্যতিক্রমী ছোট দুটো থলিতে।

মরুর আশ্চর্য প্রাণী মলচ প্রয়োজনে তার চোয়াল নেড়ে থলেতে জমানো পানি পাম্প করে মুখে এনে পানির চাহিদা পূরণে সক্ষম। পানিতে ডুব দিলেও তার চামড়ায় শোষিত হয়ে পানি সেই বিশেষ থলেতে গিয়েই জমবে। মলচ রাতে সরাসরি আর্দ্র বাতাস থেকে পানি শুষে নিতে পারে। রুক্ষ্ম, শুষ্ক ও তপ্ত মরুভূমিতে দিনের বেলা প্রাণীর দেখা না মিললেও রাতে, সকালে ও বিকেলে দেখা যায় নানা প্রাণী, পাখি ও কীটপতঙ্গের সমারোহ। মরুজীবি এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ছোট গিরগিটি, গ্যাজেল হরিণ, কচ্ছপ, এটুলে পোকা, কালো গুবরে পোকা, পাহাড়ি ছাগল ও দুম্বা।

মরুর প্রাণীরা এমনিতেই পানি কম খেয়েও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে এবং এদের পানির চাহিদাও অনেক কম। গাছের পাতা, গাছের শেকড়, কন্দ এবং ছাল খেয়ে তৃণভোজীরা পানির চাহিদা মেটায়। রাতে শিশির জমা পাথর, গুহা খুঁজে বের করে পাথর চেটে এদের পানির চাহিদা পূরণ হয়। আর প্রাণীভোজীরা তো তৃণভোজী প্রাণীর দেহ থেকেই পানির সরবরাহ পায়। এছাড়া মরুভূমির তিতির, ভরত, গোরবিল পাখি ও ইঁদুররা পানি না খেয়েও অনেককাল কীভাবে বেঁচে থাকে? কারণটি বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ এরা পায় শরীরের ভেতরের চর্বি ও শর্করার বিশেষ জারন প্রক্রিয়ায়।

এসব প্রাণী দেহের কোষগুলো শর্করা ও চর্বি জ্বালায় শক্তি জোগানোর জন্য। এদের দহন সম্পন্ন হলে পাওয়া যায় পানি আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড। শরীর থেকে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দিয়ে শরীরের ভেতর কোষ পানি সঞ্চয় করে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে। এভাবে প্রাণীরা এক গ্রাম শর্করা থেকে পায় দশমিক ছাপ্পান্ন গ্রাম পানি এবং এক গ্রাম চর্বি থেকে পায় এক দশমিক সাত গ্রাম পানি। সেজন্য মরুভূমির, সাপ, হরিণ, দুম্বা, উট, গোসাপ, গিরগিটিসহ অন্যান্য প্রাণী লেজে এবং উট তার পিঠের কুঁজে চর্বি জমিয়ে রাখে যাতে প্রয়োজনে চর্বি গলিয়ে শরীর তার পানির চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়। এভাবে মরুর জাহাজ নামে খ্যাত উট পানি ছাড়া একটানা পঁয়তাল্লিশ দিন বেঁচে থাকতে পারে। কারণ চর্বি শক্তি যোগানোর পাশাপাশি প্রাণীদেহের পানিরও উৎস।

শুধু শরীরের ভেতর রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পানি সৃষ্টি এবং বাতাস থেকে পানি শুষে নেওয়া ও বালু আর পাথরের মধ্যে থেকে পানি খুঁজে নিতে শিখেছিলো বলেই রুক্ষ্ম মরুভূমির মতো প্রতিকূল পরিবেশে মরুবাসী প্রাণীরা আজও টিকে রয়েছে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!