কফিমেকার: একটি রহস্যের বাক্স

রহস্য একটি রহস্যময় শব্দ, তিন অক্ষরের সন্ধি। রহস্য শব্দকে ঘিরে মানুষের কত উত্তেজনা আর কৌতূহল। এমনই একটি রহস্যময় রহস্যের বাক্স ‘কফিমেকার’ বইটি।

খায়রুল আলম রাজুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2021, 03:43 AM
Updated : 8 April 2021, 03:43 AM

বইটি লিখেছেন অরুণ কুমার বিশ্বাস। হ্যাঁ, আমি গোয়েন্দা লেখক অরুণদার কথাই বলছি। ডিটেকটিভ ‘অলোকেশ রয়’ উনারই সৃষ্টি করা চরিত্র। কফিমেকার বইটিতে কাস্টমস অফিসার মানে ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবং ক্ষুরধার বুদ্ধিতে জব্দ করেন কোটি কোটি টাকার হিরোইন, ইয়াবা, গাঁজা, আফিমসহ কোটি টাকার সোনা ও মুদ্রা চালান।

ডিসি অলোকেশ রয়ের টিমে রয়েছে একজন সুপারিনটেনডেন্ট ও পঁচিশজন ইনস্পেকটর। এদের কারও কোনো নাম নেই, নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে সাংকেতিক কোড ‘মাইক ওআন্ টু টোয়েটি ফাইভ' ব্যবহার করা হয়। অলোকেশের কোড নেম চার্লি আর সুপার ডেলটা নামে পরিচিত। ডেলটা তার প্রধান সেনাপতি, মাইক ফোরটিন প্রোটোকল অফিসার, মাইক ফিফটিন সার্বিক দেখভাল করে থাকে। এদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে ওয়াকি-টকি, চ্যানেল ফোরে মেসেজ আদান-প্রদান করে। মটোরলা সেট, মডেল জিডি থ্রি থ্রি এইট প্লস।

একটানা বারো ঘণ্টা ডিউটি করে হাঁপিয়ে যান অলোকেশ। তবু দায়িত্বে এতটুকু অবহেলা বরদাস্ত করেন না। ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট মানেই বড় সেনসিটিভ জায়গা, বলা যায় দিস ইজ দ্য গেটওয়ে অব বাংলাদেশ। হরেক রঙের হরেক রকম মানুষ। যাত্রীসেবা প্রদানের পাশাপাশি অ্যান্টিস্মাগলিং কার্যক্রম চালাতে হয়। কুমিরছানা থেকে শুরু করে ময়নাপাখি, বিরল কচ্ছপের বাচ্চা, কাঁকড়া, সাপ অবধি পাচার হয়ে যায় বিদেশে। সবুজ শাকসবজির ভেতর লুকিয়ে নিয়ে যায় টাকার বান্ডিল, আবার কখনো হ্যান্ড-ট্রলির ধাতব ট্রলারের ফাঁপা অংশে ঢুকিয়ে নেয় ডলার, রিয়াল, দিনার, ইউরো ও ব্রিটিশ পাউন্ড স্টারলিং।

ছোট জিনিস কিংবা সাধারণ সূত্র ধরে ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করেছেন অনেক স্মাগলার এবং মাফিয়া ডন সদস্য। সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনা ঘটে যুক্তরাজ্যে। ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে যান। ঘটনাচক্রে পরিচয় ঘটে তুর্কী মেয়ে আইজেলের সঙ্গে।

সেখানে আইজেল করে বসে বিশাল রহস্যময় ঘটনা। কী ছিল সেই ঘটনা?  ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় কী সেই ঘটনার সুরাহা করতে পেরেছেন? না, বন্ধুরা এতেই শেষ নয়! ঘটনা আরও আছে। ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় এর সঙ্গে একবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে পরিচয় হয় মাইকেল চ্যাং নামে এক গিটারবাদক ও শিল্পীর। লোকটিও ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় এর সঙ্গে একই বিমানে বাংলাদেশে আসছিল, ভ্রমণে।

আসলে মাইকেল চ্যাং গিটারবাদক বা শিল্পী ছিল না। তবে কে ছিল লোকটা! বাংলাদেশে আসার পর কী হয়েছিল এয়ারপোর্ট? লোকটার উদ্দেশ্যই বা কী ছিল? চৌকস গোয়েন্দা অলোকেশ রয় কি তাকে পাকড়াও করতে পেরেছেন!

বইটির আরও একটি রহস্যময় অংশ হলো- “কদিন ধরে বড্ড ভাবছেন অলোকেশ। একটি কণ্ঠ তাকে খুব জ্বালাচ্ছে। নারীকণ্ঠ, মোহময় উচ্চারণ। রিনরিনে গলায় ইনিয়ে বিনিয়ে কী যেন বলতে চায়। কিন্তু কখনো নিজের পরিচয় প্রকাশ করে না। এমন এক সম্মোহন যাকে দূরে ঠেলে দেয়া যায় না। ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে ডিসি অলোকেশ ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে। মাসছয়েক তিনি ঘনিষ্ঠভাবে শিখেছেন কী করে তথ্যসন্ত্রাসের মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় খবরটুকু বেছে নিতে হয়। নারীকণ্ঠ প্রায়ই অফিসের ল্যান্ডফোনে কথা বলে। কলার আইডি টেলিফোন, কিন্তু নম্বর ডিটেক্ট করা যাচ্ছে না। প্যানেলে দেখাচ্ছে প্রাইভেট কল। চাইলে অবশ্য তিনি খুব সহজেই বিটিসিএল অফিসে যোগাযোগ করে নারীকণ্ঠের রহস্য উন্মোচন করতে পারেন। কিন্তু এই আপাত সহজ কাজটুকু তিনি যে কেন করেন না, সেও এক রহস্য বটে!”

এমনই টানটান উত্তেজনা আর রহস্যে জমজমাট ‘কফিমেকার’ বইটি। না পড়ে বলাটা বেশ মুশকিল। বিশেষ করে গোয়েন্দা লেখক অরুণদার গল্প লেখার স্টাইল, নিজস্ব কিছু শব্দ, উপমা এবং বাক্যগঠন প্রক্রিয়া প্রশংসার যোগ্য।  গোয়েন্দাপ্রেমী পাঠকমহলে বইটি অনেক আলোচিত এবং প্রশংসিত বলে আশা করি। আর তোমরাও ‘কফিমেকার’ বাক্স খুলে জেনে নাও সেইসব রহস্যের সমাধান। বইটি প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ, মূল্য ২০০ টাকা।

রিভিউ লেখক: শিক্ষার্থী, জনাব আলী সরকারি কলেজ, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!