অবহেলিত বনজুঁই মেলে ধরেছে সৌন্দর্য

ঋতু বৈচিত্র্যের হাড়কাঁপানো শীতকে বিদায় জানিয়ে ধরায় আগমন ঘটেছে বসন্তের। গাছে গাছে ফুল, আমের মুকুল, পাখির কলরব, ঝরা পাতার মর্মর শব্দ, কচিপাতার উঁকি তা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে।

আজাহার ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2021, 04:02 AM
Updated : 20 March 2021, 04:09 AM

বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য মেলে ধরেছে বনজুঁই। বসন্ত এলেই পথে প্রান্তরে থোকায় থোকায় ফুটে এসব ফুল। কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পল্লীতেও পথে প্রান্তরে আপন সৌন্দর্য মেলে ধরেছে সবুজ বহুপত্রী এই ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, হল, বিভিন্ন ভবন, মফিজ লেকসহ বিভিন্ন জায়গায় ফুটেছে নজর কাড়া এ ফুল।

গ্রামাঞ্চলে মাঠে-ঘাটে, পথে প্রান্তরে প্রায়ই দেখা যায় নাম না জানা নানা প্রজাতির বনফুল। অনেক কবি প্রেমে পড়েছিলেন এসব বনফুলের, যার মধ্যে ফুলপ্রেমীদের মনে সাড়া জাগানিয়া একটি ফুল হলো বনজুঁই। নামটি শুনলে অনেকের কাছেই অপরিচিত মনে হবে। অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠা এ বনফুলটি ভাটফুল, ভাটিফুল, ঘেঁটুফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেই বেশি পরিচিত।

বনজুঁইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্লেরোডেন-ড্রাম-ইনারমি’। ইনফরচুনাটাম প্রজাতির ফুল এটি। প্রায় ৪০০ প্রজাতির বনজুঁই পাওয়া যায় যাদের আদিনিবাস এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়। এ ফুলের মনমাতানো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ। এর মিষ্টি গন্ধ মাতাল করে তোলে ফুলপ্রেমীদের মন। এছাড়া এর মনমুগ্ধকর সৌরভে প্রজাপতি, মৌমাছি, পিঁপড়াসহ নানা প্রজাতির কীট-পতঙ্গের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। এরা ফুলের সুগন্ধ, সৌরভে ব্যাকুল হওয়া ছাড়াও ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসে।

ছোট আকৃতির এ ফুলটির পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কাণ্ড নিখুঁত কারুকার্যে সাজানো। মাঝের পুংকেশর ফুলটির সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ার পর লালচে বৃতির মাঝখানে সবুজ ও বেগুনি বীজ দেখতে একেবারে নাকফুলের মতো। মনে হয় যেন কারুকাজ খচিত লালচে পাথরের মাঝে সবুজ অথবা গাঢ় বেগুনি চকচকে এক হীরার খণ্ড বসিয়ে রেখেছে।

বনজুঁই সৌন্দর্য বাড়ানো ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বিত। ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এ উদ্ভিদটির পাতা, শেকড় ও ফুল। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকা-মাকড়ের কামড়ে খুবই উপকারী এটি। এ উদ্ভিদের কচিপাতার রস টনিক হিসেবে কাজ করে। পাতায় পাওয়া ক্যামিকেল কৃমিনাশক, জ্বর উপশমকারি ও এক্সপেকটোরেন্ট হিসেবেও কাজ করে। মূল থেকে পাওয়া ক্যামিকেল এজমা, টিউমার ও চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১৭৫৩ সালে কার্ল লিনিয়াস তার ‘স্পেসিস প্লান্টেরাম’ বইয়ে এ উদ্ভিদের নাম উল্লেখ করেন ‘জেনাস’ নামে, যার অর্থ ‘ভাগ্য উদ্ভিদ’। এদের বৃতি সাদার পরিবর্তে প্রথমে সবুজ ও পরে পরিপক্ক অবস্থায় লালচে রং ধারণ করে। এ লালচে রঙের কারণেই এদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে ফুলের বৃতিতে যে পরিবর্তন দেখা যায় তার জন্য পলিনেটর আকৃষ্ট হয় ও পরাগায়ন ঘটায়, কারও কারও মতে এজন্যই কার্ল লিনিয়াস এরকম নামকরণ করেন।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!