শাহ্জাহান সিরাজের গল্প: মা ইলিশ

পরীক্ষা শেষ হতেই কদিনের জন্য রাইয়ান মামা-বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। সে দেখে রোজ তার মামা বাজার থেকে মাছ কিনে আনেন।

শাহ্জাহান সিরাজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2020, 02:30 PM
Updated : 28 Oct 2020, 02:30 PM

একদিন সে মামাকে বললো, ‘মামা, আমিও মাছ কিনতে বাজারে যেতে চাই।’ মামা বললেন, ‘ঠিক আছে, রাইয়ান। তোমাকে আগামীকাল সকালে মাছ-বাজারে নিয়ে যাবো।’

পরদিন সকালে রাইয়ান মামার সঙ্গে বাজারে যায়। সে তো ভীষণ খুশি হয়। রাইয়ানের মাছ-বাজারে যাওয়ার একটাই কারণ- মামার কাছ থেকে মাছ সম্পর্কে জানবে। সে বইয়ে অনেক অনেক মাছের পরিচিতি পড়েছে। কিন্তু কখনও এতো মাছ দেখেনি। এইতো সেদিন রাইয়ানের কৃষিশিক্ষা স্যার বললেন, ‘বইয়ের পড়ার সঙ্গে বাস্তবে সবকিছু দেখা বেশ জরুরি।’

স্যারের কথাটা রাইয়ান বেশ মনে রেখেছে। মামার সঙ্গে বাজারে গিয়ে জানার কৌতুহল আরও বেড়ে গেলো। মামাও জানতেন রাইয়ান জানতে ভীষণ আগ্রহী। তিনি মাছ দেখিয়ে বললেন, ‘বলো তো রাইয়ান, এগুলো কী জাতীয় মাছ?’

রাইয়ান মাছ দেখে চটপট চিনে ফেললো। বললো, ‘মামা, এগুলো কার্প জাতীয় মাছ। ওইটা রুই, ওইটা কাতল, এই যে এটা মৃগেল আর যেটা নড়ছে, ওটা সিলভার কার্প। মামা, আমি কি ঠিক বলেছি?’

‘তুমি একদম ঠিক বলেছো। চলো, আরও মাছ দেখি।’

রাইয়ান মামার সঙ্গে মাছ-বাজারে ঘুরতে থাকে। আর বিভিন্ন ধরনের মাছ দেখতে থাকে। এক দোকানির ডালিতে মাছ দেখিয়ে সে মামাকে বললো, ‘মামা, ওগুলো কী মাছ?’

‘ওগুলো ক্যাটফিশ।’

‘কী অদ্ভুত নাম। এমন নাম কেন?’

‘বিড়ালের মতো গোঁফ আছে বলেই এমন নাম। যেমন- ট্যাংরা, শিং, পাবদা, পাঙ্গাশ, মাগুর ইত্যাদি এই জাতীয় মাছ। এগুলো দেশি মাছ। তবে এখন খাল-বিল, নদীতে তেমন পাওয়া যায় না। যেগুলো দেখছো, বেশির ভাগই পুকুরে চাষ করা হয়।’

‘কেন? প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাওয়া যায় না, মামা?’

‘তেমন না। এর জন্য দায়ী আমরা। আমরাই নিজ হাতে জলাশয় নষ্ট করছি। কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট, বর্জ্য ফেলা ইত্যাদি কারণে মাছের প্রজনন নেই। অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে।

এতো মাছ দেখলেও এখনও মাছ কেনা হয়নি। চড়া দাম। তাই মামা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এরই মধ্যে রাইয়ানের চোখে পড়ে ইলিশ মাছ। মামাকে দেখিয়ে বলে, ‘এটা রূপালি শস্য। বাংলাদেশে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। এটা কিন্তু সামুদ্রিক মাছ, জানো? ডিম ছাড়তে নদী বা মোহনায় আসে।’

‘বাহ্! তুমি তো ইলিশ সম্পর্কে বেশ ভালো জানো!’

‘আরও জানি, মামা। এবছর ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মা-ইলিশ ধরা বন্ধ। আমরা যদি এই সময়ে মা-ইলিশ রক্ষা করতে পারি, তবে সারা বছর ইলিশ খেতে পারবো।

রাইয়ানের এমন কথা শুনে মাছ বিক্রেতা হেসে দিয়ে বললেন, ‘স্যার, বাবুটা একদম হাছা কথা কইছে। এই ইলিশ মাছ লন।’

‘হুম, আমার ভাগ্নে অনেক ট্যালেন্টেড। তাহলে ওর জন্য ইলিশ মাছই নিবো। ওই বড়ো ইলিশটা দিন।’

‘জি স্যার, দিতাছি।’

মামার সবচেয়ে বড়ো ইলিশ মাছটা কেনা দেখে রাইয়ান তো ভীষণ খুশি। তারপর ইলিশ মাছ নিয়ে তারা বাড়িতে ফেরে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!