ইনতিসার হাসিনের গল্প: ভূতুড়ে বিদ্যালয়

দূর গ্রামে এক নদীর পাড়ে ছিল এক ভূত বিদ্যালয়। সেখানে চলতো ভূতের ছানাদের পড়াশোনা।

ইনতিসার হাসিন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 06:50 AM
Updated : 21 Sept 2020, 06:51 AM

সেই ছাত্রদের মধ্যে একজন ভূতছানার নাম ছিল লুকাস। সে ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ছাত্র হিসেবে সে অনেক ভালো ছিল।

কিন্তু একদিন ক্ষণিকের অবুঝ দুষ্টুমির কারণে তাকে বিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তার তখন দুঃখের কোন অন্ত থাকে না। নদীর ওপাড়েই ছিল মানুষদের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়। একদিন তার খুব ইচ্ছে হয় সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করার।

তাই সে সেখানে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসে যাওয়া শুরু করে এবং বিভিন্ন ভূতুড়ে কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি করে। যেহেতু সে ছিল অদৃশ্য তাই তার কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে ভূতুড়ে বলেই মনে হতো। ইদানিং সে বিদ্যালয়ের খাতা, কলম, পেন্সিল এমনকি শিক্ষকদের সামগ্রীও হাওয়ায় ভাসাতো। সবকিছু হয়ে গেল অদ্ভুত।

সবার মধ্যে শুরু হল হইচই আর আলোচনা। একদিন এর ব্যাগ চুরি হত তো আরেকদিন আরেকজনের পেন্সিল। এ যেন রীতিমত পরিণত হল এক ভূতুড়ে বিদ্যালয়ে। এভাবে বিভিন্ন কাণ্ডের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। কিন্তু এসব কিছুর পিছনে মূল কারণ ছিল পড়াশোনার প্রতি তার অসীম আগ্রহ। সে ছিল আবার যথেষ্ট বন্ধুবৎসল ও আন্তরিক। ক্লাসে যে ছাত্র লিখতে দেরি করত বা শিক্ষকের পড়া বলতে পারত না, লুকাস তাদের সাহায্য করতো। কখনো কোন ছাত্রের তাই মনে হত কেউ যেন তার কানের কাছে পড়া বলে দিচ্ছে। এসব কাণ্ডকেই ছাত্র–শিক্ষকেরা ভূতুড়ে বলে মনে করত।

ক্লাসে একজন ছাত্র ছিল নাম তার ফাহিম। লুকাসের কাছে তাকে খুব ভালো মনে হত। সে মনে করত তার সব মনের কথা ফাহিমকে বলা যায়। তাই একদিন ফাহিমকে একা তার বাসার রুমে পেয়ে তাকে সে দেখা দেয়। সে বলে- ফাহিম, আমার মনে হয় তুমি খুব ভালো ছেলে, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

লুকাসকে দেখে ফাহিমের ভয় পাওয়ার কথা, কিন্তু ফাহিম তাকে দেখে একটুও ভয় পেল না।

তুমি আমাকে দেখে ভয় পেলে না‌ ফাহিম?

ভয় পাওয়ার কি আছে? তুমি আমার ক্ষতি করবে বুঝি?

না…মানে, তুমি কিভাবে জানো আমি তোমার ক্ষতি করব না? আর আমি তো হঠাৎ অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হয়ে গেলাম, তাহলে?

আমি আগেই বুঝেছিলাম, স্কুলে যে অদ্ভুত কাণ্ডগুলো হয়, তা কোন ভূতেরই কাজ হবে, আর তুমি যখন বলছ আমাকে তোমার কিছু কথা বলবে, তখন আমার মনে হয় না তুমি আমার ক্ষতি করবে। আর তোমাকে বেশ আন্তরিকও মনে হচ্ছে।

বাহ! তুমি দেখছি খুব আত্মবিশ্বাসী আর বুদ্ধিমান, তুমিই আমার মনের কথা বোঝার যোগ্য।

হয়েছে...এখন বলে ফেল তোমার কি বলার।

তারপর কেন সে তার নিজের বিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার হয় ও তার পড়ার প্রতি অসীম আগ্রহের কথা বলে।

ও, আহারে। তা......তোমার এ স্কুলে কাজ কী? আর সবাইকে বিরক্ত করবারই বা মানে কি?

আ…আমি আসলে তোমার সঙ্গে এ স্কুলে পড়তে চাই।

হুম্মম...তা পড়তে পার, কিন্তু এক শর্তে। কাউকে বিরক্ত করতে পারবে না। আমার পাশে থেকে পড়তে হবে, কোনো কিছু লাগলে আমাকে বলবে, যাতে তোমার কোন কাণ্ড কারো কাছে আর ভূতুড়ে মনে না হয়।

ইয়ে…ইয়ে…আনন্দ।

কিন্তু শর্তের কথা যে মনে রাখতে হয়, লুকাস!

অব্যশ্যই, তুমি আসলেই খুব ভাল, ধন্যবাদ।

তারপর থেকে লুকাস সে প্রাইমারি স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করা শুরু করলো, নতুন বন্ধু ফাহিমের সহযোগিতায় এক অদৃশ্য ছাত্র হয়ে। তারপর থেকে সেখানে আর কোন ভূতুড়ে কর্মকাণ্ড ঘটে না। আর এই বিদ্যালয় তার এতই ভালো লেগে যায় যে, সে তার নিজের ভূত বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে ভুলেই গেল।

লেখক পরিচিতি: ছাত্র, সপ্তম শ্রেণি, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!