প্রাচীনবাড়ির রহস্য

রাহুলের মায়ের বকবকানি অসহ্য পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। সেই কখন থেকে যে বাক্যব্যয় শুরু করেছেন তা সাশ্রয়ের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

রানাকুমার সিংহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2020, 07:22 AM
Updated : 17 Jan 2020, 07:24 AM

রাহুল তার মায়ের উপদেশমালা বাম কান দিয়ে শুনে ডান কান দিয়ে বের করে দেয়। মায়ের বকবকানির সাথে চলে তার কমিকস পড়ার প্রতিযোগিতা। রাহুল রসিকতা করে প্রায়ই বলে, আমার কমিকস পড়ার সাথে মায়ের বকবকানিটা হলো আবহ সঙ্গীত।

রোজকার মতো আজো বকে চলেছেন রাহুলের মা। সেই একই সংলাপ, একই উপদেশ- হতচ্ছাড়া, সারাটা দিন শুধু কমিকস্ পড়েই কাটাস। ওসবে কিচ্ছু নেই। আছে? তারচে বরং ছড়া পড় ছড়া। ওই অর্থহীন কমিকস্গুলোর চেয়ে আমাদের দেশীয় ভূতের গল্পও অনেক ভালো, অনেক শিক্ষণীয়। পড়, এখন থেকে দেশীয় ভূতের গল্প পড়া শুরু কর... ইত্যাদি, ইত্যাদি।

ছোট্টবেলা থেকে মায়ের এমন গলা শুনতে শুনতে রাহুলের কানের পর্দা বকবকানি শ্রবণ প্রুফড হয়ে গ্যাছে। কিছুক্ষণ আগে মা কর্তৃক জ্বালিয়ে দেয়া কমিকসের ছাই দেখে রাহুলের মনটা কেঁদে ওঠে। মায়ের বকবকানি তখনও চলছিল। দুঃখ ভোলার জন্য ব্যাট আর বল হাতে বাসা থেকে বেরোয় রাহুল। রাহুলের সদা হাসিমাখা মুখটাতে জগতের অন্ধকার অন্ধকার দেখে তার বন্ধুরা ফিসফিসিয়ে কথা বলতে থাকে। রাহুল সেসব কথা শুনেও না শুনার ভান করে। অন্যদিন হলে ওদের অবশ্যই এ কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পেতে হতো রাহুলের হাতে।

মা বাজার থেকে এক গাদা বই কিনে এনেছেন। ছড়া, গল্প, উপন্যাস। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মায়ের ভয়ে ওসব হজম করতে হচ্ছে রাহুলের। এজন্য ইদানিং মায়ের বকা কম শুনতে হচ্ছে তাকে। রাহুল কমিকস যে একেবারে পড়ছে না তা নয়, স্কুলে যাওয়ার পথে কমিকসের বই কিনে নেয় সে। তারপর টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের পেছনের জারুল তলায় বসে মজা করে পড়ে। সঙ্গে জুটে বন্ধুদের দল। রাহুল ওদেরকে বলে- যেমনি আইন, তেমনি তা থেকে বেরুবার লাইন, অধম রাহুল, জানে বন্ধু খুব ফাইন।

রাহুলের ছন্দমিশ্রিত কথা শুনে বন্ধুরা হায়! হায়! করে উঠে। ওরা বলে- দোস্ত, তুইতো অগোচরে ছড়া বলছিস। তুই কি জানিস?  তোর কথাগুলো ছড়ার মতো হয়েছে।

রাহুল ওদের কথায় পাত্তা দেয় না। সে মায়ের এনে দেয়া বইগুলো পড়ে যে আনন্দ পাচ্ছে না তা নয়। বহু লেখাই ইতোমধ্যে তার প্রিয় হয়ে ওঠেছে। কিন্তু একথা মাকে জানালেই বিপদ। আরো এনে দেবে। তখন এসব পড়বে কে? উইপোকা কেটেকুটে বইগুলোকে মলম বানিয়ে ফেলবে। আর ওসব মলম নিয়ে শুরু হবে মায়ের ধারাবাহিক বকবকানি- এ বিশ্বাস রাহুলের।

অলঙ্করণ :সোহাগ পারভেজ

বুদ্ধি করে রাহুল মায়ের সামনে তার দেয়া বইগুলো মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে পড়ে। মাও খুশি হন। মা খুশি থাকলে চকোলেট পাওয়া যায় মায়ের কাছ থেকে। অবশ্যই সেই চকোলেট ঝাল ও চাটনির।

রাহুল মায়ের কারেক্টারের সাথে তাদের ক্লাস টিচার বাংলার শিক্ষক রসিক বাবুর কারেক্টারের বেশ মিল খুঁজে পায়। মায়ের মতো রসিক বাবুও কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে থেমে যাওয়াটা ভুলে যান।

এজন্য রাহুলের ইচ্ছা হয় রসিক বাবুর ক্লাস কামাই করার। কিন্তু ক্লাস টিচার হওয়ায় বাধে বিপত্তি। একদিনের কথা তো না বললেই নয়। ক্লাস শুরুর আগে রাহুল কিছু হোমওয়ার্ক খাতায় তুলছিল। লুকিয়ে লুকিয়ে কমিকস পড়তে গিয়ে ওসব তোলা হয়নি।

লিখতে লিখতে রাহুল তার হাতে আঠালো কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে। বস্তুটা কালো রঙের। ভালো করে খেয়াল করতেই লক্ষ্য করে, তার সদ্য কেনা বলপেনটা উদরে জমে থাকা সব কালি ত্যাগ করে সাদা শার্টসহ হাতও বিশ্রী করে দিয়েছে। রাহুলের মাথায় রাগ চরমে ওঠে। জানালার ফাঁক দিয়ে সজোরে ছুঁড়ে ফেলে কলমটা। কিন্তু পড়বি তো পড় এে এক্কেবারে রসিক বাবুর ফুরফুরে শার্টের কলারে। তিনি রাহুলদের ক্লাসেই আসছিলেন।

রসিক বাবু রাগে লাল হয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেন। অসম্ভব লাল লাগছিল তাকে। রাগলে রসিক বাবুর নাকটা মোটা আর কান গরম হয়ে যায়। কান গরম হয়ে যাওয়াটা রাহুলই আবিষ্কার করে। ও কথা বলে লাভ নেই। বর্তমান ধারায় আসা যাক। শ্রেণিকক্ষে ঢুকেই রসিক বাবু দুই হালি সিলেটের বিখ্যাত জালিবেত আনার আদেশ দেন। অবশ্য জালিবেত অফিস কক্ষে রেডি স্টকেই থাকতো।

বেত আনার জন্য পাঠিয়ে রসিক বাবু ছাত্রদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েন- ওটা ওভাবে ছুড়ছিল কে? বেয়াদব, বেহায়া, বেশরম....। আমি ওর পিঠে বেত মেরে লাল করে দেবো। এ্যাঁ, রসিককে চেনে না। কাউকে আজ আর জামাই আদর করা হবে না। যে এই কর্মটা সম্পাদন করেছিস তাড়াতাড়ি রেডি হ। মাই অর্ডার ইজ অর্ডার। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না....।

এদিকে রাহুলের অবস্থা শোচনীয়। রসিক বাবুর ক্যাডারমার্কা কথা শুনতে শুনতে তার কান ঝালাপালা। কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকে চুপচাপ। রসিক বাবুও তার তদন্ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন নিজস্ব স্টাইলে। একবার একে ধরেনতো আরেকবার ওকে। যত সময় গড়াচ্ছে রসিক বাবুর গলার স্বরও বাড়তে থাকে ক্রমাগত।

সুযোগ বুঝে রাহুল শ্রেণিকক্ষের পেছনের দরোজা দিয়ে ভোঁ দৌড়ে পগারপার। রসিক বাবুও দমবার পাত্র নন- কে গেলোরে? কে? ধর ব্যাটাকে, আমার সাথে ইয়ার্কি....।

এ রকম আরো নানা পদের বাক্যবান ছুড়তে ছুড়তে দৌড়াচ্ছিলেন রাহুলের পেছন পেছন। কিন্তু তাকে আর পায় কে।

সেদিন রাহুল রাত দশটায় বাসায় ফিরেছিল। বাসায় এসে মায়ের কাছ থেকে যে রায় ঘোষিত ও প্রয়োগ হয়েছিল তা না বলাই ভালো। কারণ ও কাহিনি শুনলে তোমরা হাসি খুশিহীন গম্ভীর হয়ে যাবে। তোমাদেরকে আমি গম্ভীর দেখতে চাই না।

খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা রাহুল ভাবতে থাকে তার কোনও একদিন কি আনন্দে যাবে না! প্রতিদিন একটা না একটা অস্বস্তিকর কাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আর রাহুলের সব আনন্দ মাটি করে দেয়। সকাল সকাল ওরকম একটা বিশ্রী কাণ্ড ঘটে যাবে নিজের দোষে, ভাবতে পারেনি রাহুল। মায়ের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য মশার কামড় খেয়ে শুয়ে থাকতে হচ্ছে মেঝেতে, তাও আবার খাটের নিচে।

সকালবেলা টেবিলের ওপর এলোমেলো হয়ে থাকা বইগুলো গুছিয়ে রাখছিলেন রাহুলের মা। হঠাৎ বাংলা বইয়ের ভেতর থেকে আবিষ্কার করেন কমিকসের বইটা। পুরোটা স্কুলে পড়তে না পেরে বাসায় এনেছিল রাহুল। কিন্তু যার জন্য বইয়ের ভেতর লুকিয়ে রাখা ঠিক তার হাতেই গিয়ে পড়লো ওটি।

তারপর থেকেই রাহুলকে খোঁজা শুরু করেছেন তিনি। মায়ের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার খবর পেয়েই রাহুল তার সদ্য আবিষ্কৃত দুর্গে মোটামুটি নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে। নিরাপদ আশ্রয় এই কারণে যে, কোনো এক কবিরাজের আদেশ নাকি রয়েছে রাহুলের মায়ের প্রতি, যেন তিনি কক্ষনো খাটের নিচে না তাকান। তাকালে যে কোনো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই জেনেও তিনি ছেলেকে ওখান থেকে বের করে আনতে পারেন না।

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ রাহুল এক সময় খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। শাস্তির ধারা বদলে দিয়েছেন রাহুলের মা। আর নতুন শাস্তিটা হলো, দু’বেলা উপোস করে সন্ধ্যেবেলায় দু’টো ভূতের বই পড়ে তারপর খাওয়া দাওয়া। অতঃপর শ্রেণির বই পড়ে ঘুমোতে যাওয়া। উপোসকালীন পাঁচ হাজার শব্দ হাতে লিখতে হবে। কারণ, রাহুলের মায়ের ধারণা উপোস করে লিখলে হাতের লেখা নাকি খুউব সুন্দর হয়।

শুধু রাহুল নয়। রাহুলের বাবা, ছোট বোন মিতি, এমনকি কাজের ছেলে ইনুছ আলী কেউ বাদ যায় না রাহুলের মায়ের দৃষ্টি থেকে। স্ত্রীর এমন ব্যবহারের জন্য রাহুলের বাবা সব সময়ই বাসার বাইরে থাকেন। সকালবেলা কোনমতে ব্রেকফাস্ট সেরেই অফিসে রওয়ানা হন। লাঞ্চ সারেন অফিসেই। রাতে এসে ডিনার সেরে সোজা বিছানায়। মিতি অবশ্য নীরব স্বভাবের কারণে বেঁচে যায় প্রায় সময়। যত ঝড় যায় রাহুল আর ইনুছ আলীর উপর দিয়ে।

প্রতিদিন বাজার থেকে ফিরলেই ইনুছ আলীর জন্য কেয়ামত অপেক্ষা করে। রাহুলের মায়ের রাগত সংলাপগুলোও মজাদার- বলেছিলাম বেগুন, এনেছিল পটল, আলুগুলোর চেহারা দেখলেই সাধ মিটে যায়। বাজারে কি আর মাছ নেই? যত্তসব পয়সা মারার ধান্ধা।

ইদানিং রাহুলের মায়ের জেদ হয়েছে ছেলেকে কবি বানাবেন। বেচারা রাহুল ভেবে কুল পায় না- কবিতার ক-ও না জেনে সে কবি হবে কিভাবে? তারচেয়ে বরং আর্টের স্কুলে ভর্তি করে দিলে শিল্পী হওয়া যেত। কমিকসও তৈরি করা যেত। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার ঠিকানা জোগাড় করে রাহুলের মা ছেলেকে দিলেন। যেন সে কবিতা লিখে অই সব পত্রিকায় পাঠায়, রাহুলের কবি হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। তার মা শুধু উদাহরণ দেখান- অমুকের ছেলে কী সুন্দর ছড়া-কবিতা লেখে। পত্রিকায় কী সুন্দর হয়ে তার নাম আসে। তুইতো একটা গাধা...।

এই গাধা উপমাযুক্ত কথাবার্তা শুনে রাহুলের একটা প্রবাদের বাণী মনে পড়ে। সে ওটা নিয়েই একটা ছাড়া লেখার চেষ্টা করে। ছড়াটা তোমাদের জন্য এখানে তুলে ধরলাম-

নাকের ডগায় মুলা

পিঠের উপর ঝুলা,

মুলা খাওয়ার লোভে

চলতে থাকে গাধা

গোলক ধাঁধায় বাঁধা।

বয়ানটা খুব সত্যি-

মিথ্যে নয় একরত্তি।

রাহুলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। কারণ- কয়েকদিন আগে একটি ছেলে স্কুলে গিয়ে বাসায় আর ফিরে আসেনি। সবার ধারণা ছেলেটাকে ছেলেধরা নিয়ে গেছে। ছাত্র উপস্থিতি কম থাকায় স্কুলও বন্ধ হবার উপক্রম। রাহলের মা-ও তাকে স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না। ফলে রাহুলের কমিকস পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। রাহুল খুব বেশি করে মায়ের দেয়া বইগুলো পড়তে শুরু করলো।

ছেলের জেদে রাহুলের মা তাকে একটা গোয়েন্দাকাহিনী এনে দিলেন। রাহুল অই গোয়েন্দাকাহিনী পড়তে পড়তে কমিকস না পড়ার দুঃখ ভুলতে চেষ্টা করলো। স্কুলে না যাবার দিন দীর্ঘায়িত হতে থাকলো। এদিকে এত অবসর ভালো লাগে না রাহুলের। ছেলেধরার ভয়ে বাসার বাইরেও বের হতে দেয়া হচ্ছে না তাকে।

অলঙ্করণ :সোহাগ পারভেজ

রাহুল অবসর কাটানোর জন্য কত্ত রকম চিন্তা মাথায় খেলাতে লাগলো। কিন্তু কোনোটাই তার পছন্দসই হয় না। সারাটা দিন বাসায় থাকতে থাকতে, মায়ের অসহ্য রকম বকবকানি শুনতে শুনতে রাহুলের বকবকানি শ্রবণ প্রুফ কানের পর্দা কিছুটা করে লিক হয়ে আসছে। তার ফলে, মায়ের বকবকানি এখন অসহ্যরকম মনে হয় রাহুলের। তার এ অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে ছোট্ট মিতি।

পাড়ার শতেক বছর পুরনো লাইব্রেরিটা ঘাটতে গিয়ে একটি রোমাঞ্চকর পেপার কাটিং আবিষ্কার করে রাহুলের বন্ধু তপন। ওটাতে রয়েছে কয়েকজন লোকের হারিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে ওই লোককে খুঁজে পাওয়ার খবর। অবসর সময়ে এরকম একটা পুরনো, গা কাঁপানো খবর শুনে দু’জনেরই মন চমকিয়ে ওঠে। এই পেপার কাটিংয়ের প্রতি ওদের অতি উৎসাহের কারণটা অবশ্য অন্য কারণে।

কারণটা এই, রাহুলদের পাড়ায় একটা অতি পুরাতন রাজবাড়ি রয়েছে। কাণ্ডটা ঘটেছিলো সেখানেই। রাহুলেরা আগে থেকেই এ ঘটনা মুখে মুখে শুনে আসছিলো। তাই তারা মনে করতো অই রাজবাড়িতে না যাওয়ার জন্য এটা বড়দের বুদ্ধির ফাঁদ। কিন্তু এখন তা লিখিত আকারে তাও আবার পেপার কাটিংয়ে দেখে অন্যরকম কিছু চিন্তা তাদের মাথায় দোলতে লাগলো। অবশ্য রাহুল এবং তপন যুক্তি করে অন্য বন্ধুদের জানানো থেকে বিরত রইলো।

পাড়ার পুরাতন রাজবাড়িতে কোনো মানুষের যাতায়াত বর্তমানে নেই। ওটাকে পতিতই বলা যায়। বেশ আগে সরকারের পক্ষ থেকে যাদুঘর করার উদ্যোগ নিলেও কী এক অদৃশ্য কারণে সেই প্রকল্প ভেস্তে যায়। পেপার কাটিংটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে ওটির রহস্য উদঘাটনে রাহুলের মনে অদম্য স্পৃহার জন্ম হতে লাগলো।

রাজবাড়িতে অভিযান চালানোর জন্যে রাহুল তপনের সাথে যুক্তি করলো। এই অভিযান চালানোর জন্যে আরো কয়েকজনকে প্রয়োজন। তাই সবার সাথে বসে মিটিং করার প্রয়োজন। কিন্তু মায়ের কড়া পাহারার কারণে বাসা থেকে বের হতে পারছে না রাহুল। রাহুল মায়ের কাছে নতুন পুরাতন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও বাসা থেকে বেরুবার ছুটি পেলো না। বিনিময়ে তার মায়ের চিরাচরিত বকবকানির ঝড় অসহ্য রকমের সহ্য করতে হয়। অবশেষে অবলম্বন করতে হয় আরো নতুন কৌশলের।

তপন রাহুলের মায়ের কাছে জানায় তাদের এক প্রিয় বন্ধু খুব গুরুতর অসুস্থ। যায় যায় অবস্থা। অই বন্ধুটি রাহুলের দেখা পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। তাই ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্যে ওর মা-বাবা তাকে পাঠিয়েছেন রাহুলকে নেওয়ার জন্য। যে কারণেই হোক রাহুলের মা এই ফাঁদে পা দিলেন। এবং রাহুলকে ওদের বাসায় যেতে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সায় দিলেন। তবে কড়া গলায় বেশ করে সতর্ক করে দিলেন সাবধান থাকার জন্য।

রাহুলের পরিকল্পনাতে তপনের দ্রুতগামী সার্ভিসে সব বন্ধুরা মিলিত হলো তাদের পাড়ার সবচেয়ে আশ্চর্য ভয়াবহ প্রাচীন রাজবাড়ির কাছাকাছি কোনো জায়গায়। কারণ এখানে কোনো বুকের পাঠার আসার সাহস নেই ওরা বাদে। তাই তাদের বৈঠকের কথাও গোপন থাকবে। শোভন বললো- শুন, এই প্রাচীন বাড়ির ভেতরে এমন কিছু তাজ্জব বিষয় ঘটে যা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। রুবি নামের একজন বন্ধু ওর কথা শুনে বললো- কী আবোল তাবোল বকছিস। এ সংবাদ আবার কোথায় পেলি?

এবার তার সাথে গলা মেলায় শোভন, জালাল ও অনুপরা। রাহুল রসিকতা করে বললো-ওহে ভীতু বন্ধুরা, এই বাড়ি সম্পর্কিত একটি ঘটনা শুনলে তোদের পিলে ঢিলে হয়ে যাবে। বুঝলি?

এতোক্ষণ তপন চুপচাপ ছিলো। সে অন্য সবার পক্ষ থেকে রাহুলকে অই ঘটনা বলার জন্যে অনুরোধ করে। রাহুল বেশ গম্ভীর ভাব নিয়ে বলতে শুরু করে- আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে এই প্রাচীন রাজবাড়িতে কেউ আসতো না ভয়ে। এখনও যেমন লোকজন আসে না। কারণ তখনকার মানুষের ধারণায় হাজার বছরের পুরনো এ বাড়িটা ছিলে যত ভূতের আড্ডা।

একবার হলো কি আমাদের মতোই তিন বন্ধু এই রহস্য উদঘাটনের জন্য এর ভেতর গিয়েছিলো। পরদিন থেকে ওদের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি, চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলো। আর সবার ধারণা হলো, এই ভয়াবহ কাণ্ড ঘটেছে ভূতগুলোকে চটানোর দায়ে। আমাদের এই রহস্য একশ বছর পর উদঘাটন করতে হবে। রাহুলের মুখ থেকে এই ঘটনা ও তা উদঘাটনে তাদের অভিযানের কথা শুনে তপন বাদে সবাই ভয়জড়িত কণ্ঠে বললো- ওরে বাবা! না, তা কক্ষনো হবার নয়, আমরা তোর সাথে নেই। কী এক আকর্ষণে বন্ধুরা অবশেষে ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

প্রায় ৩ ঘণ্টা বৈঠকের পর ক্ষুদে গোয়েন্দা বাহিনির নেতা রাহুল সভা মুলতবি ঘোষণা করলো। মুলতবির পূর্বে পরের রোববার সবকিছু চূড়ান্ত করার জন্য পরবর্তী সভা এখানেই হবে বলে সবাইকে জানিয়ে দিলো। ফলে স্বভাবতই বাসায় ফিরতে দেরি হলো রাহুলের। ভাগ্যিস আজ সে মায়ের বকবকানি থেকে বেঁচে গেলো। না, তার মায়ের চরিত্রে কোনো দৈব পরিবর্তন নয়। তিনি অন্য এক বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। এজন্য রাহুল বিধাতার কাছে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো। রাহুল মনে মনে ভাবে নিয়তি বোধ হয় তার পক্ষে আসতে শুরু করেছে।

রাহুল অভিযানের খসড়া বাসায় বসেই তৈরি করতে থাকলো। মাঝে মাঝে তপন এসে সব প্রস্তুতি কিভাবে সম্পন্ন করা হবে তা রাহুলের কাছ থেকে জেনে নিল। রাহুলের অভিযানের পথ আরো পরিষ্কার হলো যখন রাহুলের মা তার বাবা তথা রাহুলের নানার অসুখের খবর শুনে তাকে দেখতে গেলেন। রাহুলকেও যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু পড়াশোনার অজুহাত দেখিয়ে থেকে গেলো সে। এজন্য অবশ্য কম গঞ্জনা সইতে হলো না তাকে। কিন্তু অভিযানের আকর্ষণ সবকিছু তুচ্ছ করে দিলো।

পরবর্তী রোববার ওরা মিলিত হলো সেই একই স্থানে। রাহুল সবাইকে কাজ বুঝিয়ে  দিলো। নির্ধারিত দিনে যে যার দায়িত্ব মতো টর্চ, রশি, ছুরি, শুকনো খাবার, ওষুধ, ফাস্ট এইড বক্স ইত্যাদি আনবে। রাহুল এই অভিযানে তার পড়া সেবা গোয়েন্দা কমিকসগুলোর পদ্ধতি ব্যবহার করার পরিকল্পনা দিলো।

দুদিন পর সন্ধ্যাবেলায় এসে জমায়েত হয় জমির মিয়ার পুকুর পাড়ে। জালাল তো ভয়েই অস্থির, রাহুল সবাইকে বেশ কয়েকবার ব্রিফ করে রওয়ানা হলো প্রাচীন রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে।

এক সময় প্রাচীর বেয়ে ওরা ঢুকে পড়লো প্রাচীন বাড়ির সীমানায়। বাড়ির সামনের বাগানটা ধ্বংসপ্রাপ্ত বললেই চলে। কিন্তু বুনোলতা আর গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ ভরে আছে জায়গাটায়। হঠাৎ লজ্জাবতী কাঁটা বিঁধে গেলো জালালের পায়ে। ভয়ে চিৎকার করতে যাবে এমন সময় তার মুখ চেপে ধরলো রুমি। আপাতত একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলে ওরা।

তারপর বেড়ালের মতো নিঃশ্বব্দে পা ফেলে আস্তে আস্তে ওরা এগিয়ে গেলো প্রধান ফটকের দিকে। ফটকটা অরক্ষিত ছিল। ফলে সহজেই ওটা নিঃশ্বব্দে খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় ওরা বন্দি হলো একটি খাঁচায়। খাঁচাটি কে বা কারা যেন উপর থেকে ফেলেছিলো। ওদেরকে বন্দি করে রাখা হলো চিলেকোঠায়। জালাল তো মূর্ছা গেলো সঙ্গে সঙ্গেই।

ওদেরকে বন্দি করার আগে সঙ্গে আনা সবকিছু কেড়ে নিলো মুখোশধারী কিছু ভয়ঙ্কর লোক। সহায়হীন হয়ে পড়ে ওরা। বেশ কিছুক্ষণ সেবাযত্নের পর জালালের জ্ঞান ফেরে। এভাবে বন্দি অবস্থায় কাটে একটি দিন। অনাহারে থাকার ফলে তারা কিছুটা ক্লান্তি অনুভব করে।

ওদিকে পুরো পাড়ায় সাড়া পড়ে গেছে। সবার মুখে একই কথা, পাড়ার কয়েকজন কিশোর রাতেরবেলা উধাও হয়ে গেছে। পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। থানায় খবর দেয় হলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। পাড়ার অনেক যুবক ওদেরকে খুঁজতে সারা শহরময় চষে বেড়ালো। সংবাদপত্রে ফলাও করে ছাপা হলো কিশোরদের কাহিনী। সে কী হেডিং! ফলে সারা দেশে ঘরে-বাইরে, হাটে বাজারে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, চা খানায় এই কাহিনী বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হতে লাগলো।

রাহুলের মা-ও জেনে গেলো তার ছেলে হারানোর কাহিনী। তাই তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরলেন তিনি। বাসায় ফিরে তার অগ্নিমূর্তি ধারণ দেখে কে। বেচারা রাহুলের বাবা এমনিতেই ছেলের শোকে মুহ্যমান, তার ওপর স্ত্রীর কণ্ঠঝড়ের তোলপাড় তার হৃদয়ের শোকটা বাড়িয়ে তুললো বেশি করে।

রাহুলের মা-ও ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকলেন। ছেলের শোকে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলেন প্রায়। তিনি শুধু প্রলাপ বকেন এখন। ছেলের জন্য খাজা বাবার মাজারে মানত করেন। তিনি মনে মনে ভাবেন কবিরাজের আদেশ অমান্য করে খাটের নিচে একদিন তাকানোর ফলেই এ অবস্থা হয়েছে। ফলে তিনি অই কবিরাজকে খবর দিলেন এবং এ সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করলেন। ব্যাটা কবিরাজ তো মওকা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। বেশ বড় বাজেটের একটা অংশ দেখালো সে।

এ বাজেটের টাকা দিয়ে নাকি বিভিন্ন প্রণালীতে ফাড়া কাটাতে হবে। সে এ-ও  জানালো যে, রাহুল ভালোই আছে। তবে ফাড়া কাটানোর ব্যবস্থা না করলে যে কোনো সময় বিপদজ্নক কোনো কিছু ঘটে যাবে। রাহুলের মা অন্ধ বিশ্বাসের কারণে কবিরাজের হিসাব মতো টাকা দিলেন।

এদিকে দু’দিন পর কয়েকটি শুকনো আটার রুটি আর এক জল জগ দিয়ে যায় মুখোশধারীরা। ওগুলো ভাগ করে খেয়ে নেয় ওরা। শোভনরা কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বসে থাকেনি। ওই চিলেকোঠা থেকে বেরুবার ফন্দি খুঁজছিল। কিন্তু কিছুতেই তারা সে কাজ সাধন করতে পারছিল না। ফলে ভেঙে পড়ে ওদের মনোবল।

রাহুল অনুসন্ধিৎসু মনে দৃষ্টিপাত করে চারদিকে। হঠাৎ তার দৃষ্টিগোচর হয় কীসের ক্ষীণ আলোর ঝিলিক এসে পড়েছে তাদের ওপর। চমকে ওঠে সে। ভালো করে লক্ষ্য করে সে আলোর উৎস বের করার জন্য। সে আবিষ্কার করে চিলেকোঠার দক্ষিণ দালানে একটা বেশ বড় ভেন্টিলেটার। সে আশ্বস্ত হয়। সে ভাবতে থাকে, ওটা দিয়ে বেরুলে কোথায় যাওয়া যাবে। ওই ভেন্টিলেটার দিয়ে বেরুলে সমনে পড়বে একটি বারান্দা যেখানে পাহারায় থাকে একজন সশস্ত্র প্রহরী। ওকে কাবু করতে পারলে অনেক সহজে কাজ হাসিল হবে। সে তার প্ল্যান তপনদের জানায়।

একেক জনের কাঁধে একেকজন দাঁড়িয়ে রাহুল পৌঁছে গেলো ভেন্টিলেটার পর্যন্ত। পাড়ার বড় ভাই সোহেলের কাছ থেকে শেখা বিদ্যাটা ভালোই কাজে লাগালো তারা। রাহুল তার সাথে থাকা লুকানো একটি ছোট্ট চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে একটি ইট বের করে। পুরনো দালান হওয়ায় কাজটি সহজে হয়ে যায়, ক্রমান্বয়ে কয়েকটি ইট বের করার ফলে ভেন্টিলেটারের পরিধি বাড়ে। তাতে সে বসে পড়ে এবং তাদের সকলের শার্ট জোড়া লাগিয়ে তৈরি রশির সাহায্যে ইটগুলো নিচে ফেলে দেয় নিঃশব্দে।

তারপর সেই রশি একটি রডে শক্ত করে বেঁধে দেয়াল বেয়ে নেমে পড়ে সে। আর প্রহরীর অলক্ষ্যে তার বন্দুকটি কেড়ে নেয়। প্রহরীটিকে অজ্ঞান অবস্থায়ই বেঁধে ফেলে রাখে। তারপরে সাবধানে বারান্দা পেরোতেই কয়েকজন লোকের কথোপকথনের শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ায় রাহুল।রাহুল এখানে এলো কী করে?

বুঝতে পারছি না।

আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি শেষ পর্যন্ত কিনা অই পুঁচকে ইঁদুর আমাদের ব্যবসার মূল ধরে টান দেবে।

তাহলে এই চালানে ওদের পাচার করা দ্যান।

তাই করতে হবে বোধ হয়।

রাহুল তার নামে কথাবার্তা বিস্মিত হয়। সে নিঃশব্দে এগিয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে ওদের দেখার চেষ্টা করে। সে যা দেখলো তাতে প্রায় দু’মিনিট ৩০ সেকেন্ড নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো। রাহুলের মনে প্রশ্নের মিছিল হয়ে যায়- অই ব্যক্তি এখানে কেন? সেই কি নাটের গুরু? আর তার দোকানের কর্মচারীরাই বা এখানে কেন? রাহুলের বুঝতে বাকি রইলো না। রাহুল দৌড়ে নিচে নেমে আসে। ফটকের কোণায় লুকিয়ে থাকে। তারপর ডেঞ্জার জোনটা খুব সতর্ক হয়ে অতিক্রম করে সবার অলক্ষ্যে প্রাচীরের কাছে এসে পড়ে। প্রাচীর ডিঙাবে এমন সময় তার পায়ে কী যেন বিদ্ধ হলো। সে তাতে মাথা না ঘামিয়ে দৌড়াতে থাকলো থানার দিকে।

১০

ওসি সাহেব তাকে দেখেতো থ। হাজারো প্রশ্ন করতে বসলেন তিনি। কিন্তু রাহুল সব কথা সংক্ষেপে বলে। ওসি সাহেব একদল পুলিশ নিয়ে দ্রুত যেতে থাকেন প্রাচীন রাজবাড়ির দিকে। ওদের সঙ্গে আহত রাহুলও। খুব সহজেই ধরা পড়ে যায় মিস্টার ডি. খান। তিনি এতদিন ছদ্মবেশে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সফল ব্যবসা করেছেন এ শহরে। তার সাদা চেহারার ভেতরে জঘন্য এত কুৎসিৎ কালো লোক বাস করে দেখে তো মানুষ অবাক। তার সব দোকান সিজ করে কোটি কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রাচীন রাজবাড়ি থেকে মুক্তি পায় প্রায় অর্ধশত ছেলেমেয়ে। যাদেরকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে এখান থেকে রাতের আঁধারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হতো। এর আগে এখান থেকে প্রায় পাঁচশ ছেলেমেয়ে পাচার হয়েছে বলে জানতে পারে সবাই। রাহুলের জয়জয়কার পড়ে চারদিকে।

এ ঘটনার পর থেকে রাহুলের মায়ের আচরণও বদলে যায়। বকবকানির মাত্রাটা তিনি কমিয়ে দেন। হয়তো নিজেকে সফল গোয়েন্দার জননী হিসেবে ভেবে। ছেলের প্রতি আগের মতো কড়াকড়িও আরোপ করলেন না।

প্রাচীন রাজবাড়ি স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসে জাদুঘরে পরিণত করা হয়। হাজারো লোকের গুঞ্জনে মুখরিত হয়। রাহুলের পায়ে অস্ত্রোপাচার করে গুলি বের করে আনা হয়। কয়েক মাস পর সুস্থ হয়ে ওঠে সে। লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করে, ক্লাবের মিটিং-এ সভাপতিত্ব করে। নব প্রতিষ্ঠিত এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সরকার এই সাহসী কিশোরদের পুরস্কৃত করে।

সারা দেশময় যেমন তাদের হারিয়ে যাওয়ার খবর পত্রিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো তেমনি তাদের সাফল্যের কথাও সারা দেশের জনগণ জানলো। রাহুলের মা এখন খোশ মেজাজে ঘুরে বেড়ান। ছেলে কবি না হোক গোয়েন্দা তো হয়েছে! এখন হাজারো কেসের জন্য মানুষ আসে তার কাছে। হিমশিম খায় সে। কোনটা রেখে কোনটায় যাবে। তপন, রুমি, জালালরাও বসে নেই। ওর সহকারী হিসেবে দিনরাত খেটে চলেছে।

দিন যায়। একদিন এসে হাজির হয় সেই কবিরাজ। রাহুলের মাকে জানায় তার ছেলে সহি-ছালামত ফিরে আসতে পেরেছে তার অলৌকিক ক্ষমাতার জন্য। সে ছলে বলে কৌশলে বখশিস দাবি করে। রাহুলের মা বুঝতে পারে ব্যাটার দু’নম্বরী। ফলে তাকে নীরবে কেটে পড়তে বলেন।

কিন্তু কবিরাজ ব্যাটা এতটাই নির্লজ্জ যে বখশিশের জন্য মার খেতেও প্রস্তুত। ওকে তাড়াতে রাহুলের মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন। তিনি আবার আগের মতো বকবকানি শুরু করলেন। মায়ের বকবকানি থামাতে রাহুল অন্য কাণ্ড ঘটানোর মতলব মনে মনে আটতে লাগলো। পরে শুনাবো সেই কাণ্ডের কথা, আজ এ পর্যন্তই।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!