নতুন ধানে নতুন স্বপ্ন

পূর্ব-দক্ষিণ আকাশের মিষ্টি আলোতে হলদে-সোনালি ধানের শীষগুলো সোনা রূপ ধারণ করেছে। এক টুকরো রোদের ঝলক মাঠে ধান কাটা মানুষগুলোকে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে।

রেজা করিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2019, 10:07 AM
Updated : 9 Dec 2019, 10:11 AM

আর মানুষগুলো মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে ধান কেটে আটি বেঁধে রাখছে। একজন গান গাইছে আর অন্য সবাই সে গানের সাথে কোরাস করছে।

শুক্রবার সকাল এগারোটা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে রবিন। চা শেষে অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সফিক আসল। সফিকও চা খেল। তারা চা খেতে খেতে গল্প করতে লাগল।

সফিক গ্রামে যাবে মাছ ধরতে। তাদের গ্রামের বাড়িতে একটা পুকুর আছে। ওই পুকুরের মাছ ধরে আজ দুপুরে পিকনিক করবে। রবিনও সাথে চলল। সফিক ও রবিনের সাথে আরো বেশ কয়েকজন বন্ধু জড়ো হলো।

পাঁচজন চার্জার ভ্যানে আর তিনজন মোটরবাইকে রওনা হলো। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা শহরের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামের রাস্তায় চলে এলো। এখন গ্রামের রাস্তাগুলোও শহরের মতো। ইট-পাথরের পিচঢালা পথ।

তবে রাস্তার দুই পাশে শহরের মতো ইট-পাথরের বাড়ি নেই, আছে দিগন্তবিস্তৃত কাঁচা-পাকা ধানের ক্ষেত। হলদে কাচা-পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধ রবিনের নাকে এলো। এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে তারা ধীরে ধীরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যেতে লাগল।

চার্জার ভ্যানটি এসে থামল ধান ক্ষেতের পাশে। দু-চোখে যতদূর দেখা যায় ততদূর শুধু হলদে পাকা ধানের ক্ষেত। হালকা মিষ্টি বাতাসে আধ পাকা ধানের সোনালি শীষগুলো অনবরত দুলছিল। নানা রং-বেরঙের প্রজাপতি ওই ধানের শীষে ভেসে বেড়াতে দেখা গেলো। ধানের ক্ষেতের আইল দিয়ে তারা মাছ ধরার জন্য পুকুরে চলে গেলো।

ঝাঁকি জাল দিয়ে পুকুরের মাছ ধরা শুরু হলো। রবিন মাছ ধরা দেখতে দেখতে পুকুরের চারপাশে ধানের ক্ষেতে হলদে পাকা ধানগুলো আলতো করে হাত দিয়ে বোলাতে লাগল। একটা অন্য রকম অনুভূতিতে তার মনে আনন্দ বয়ে গেল। দু-চোখ ভরে ধানের ক্ষেত দেখতে লাগল। হাতের ক্যামেরা দিয়ে ধানের ক্ষেতের ছবি তুলতে তুলতে এক সময় ধান ক্ষেতের ভিতরে চলে গেলো সে।

কিছু কিছু ক্ষেতে পাকা ধান কাটা হয়েছে। পাকা ধানগুলো আটি বেঁধে ধানের ক্ষেতেই রেখে দেওয়া হয়েছে। আরো দূরে কৃষকরা দল বেঁধে ধান কাটছে। আবার অনেকে কাটা ধানগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে ধানের বোঝা মাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। কেউ কেউ বাইঙ্গ দিয়ে পাকা ধান কাঁধে করে বাড়ি ফিরছে।

রবিন দূর থেকে কৃষকদের ধান বয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি তুলতে লাগল। হঠাৎ কয়েকজন কৃষকের ডাক শুনে তাদের দিকে তাকাল। দূর হতে কৃষকদের একটি দলের কয়েকজন তাকে ডাকছে। সাথে সাথে হাত ইশারায় কাছে যাওয়ার জন্য আহ্বান করছে। রবিন কৃষকদের ডাকে সারা দিয়ে দূরের ধান ক্ষেতের দিকে যেতে লাগল।

রবিন ধানক্ষেতের মাঝে আইল বরাবর সাবধানে হাঁটতে লাগল। ক্যামেরাটা গলায় ঝুলিয়ে রাখল। ছোট আইল, খুব সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। তবু তার হাঁটতে খুব ভাল লাগছে। আইল ধরে হাঁটছে আর দুই হাত দুদিকে বাড়িয়ে ধানের শীষগুলোকে আলতো স্পর্শ করে চলছে। ধানের শীষে আলতো স্পর্শে তার হাতের তালুতে এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগল। যে অনুভূতি তাকে নিয়ে গেল মাটির কাছাকাছি আর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার ফসলের কাছে।

দক্ষিণাকাশের মিষ্টি রোদ তার চোখে লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে কৃষকদের কাছাকাছি চলে গেল। কৃষকরা ধান কেটে আটি বেঁধে জমিতে সারি সারি করে রাখছে। রবিনকে কাছে পেয়ে তাদের মধ্যে এক আনন্দের ছটা ফুটে উঠল। ধান কাটা বন্ধ করে যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। সাবার হাতে ধান কাটার কাঁচি দেখা গেল। রবিন কথা বলল তাদের সাথে। রবিন বলল, আপনারা ধান কাটতে থাকুন, আমি কিছু ছবি তুলি।

ছবি তোলার কথা শুনে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। মহানন্দে ধান কাটতে শুরু করল। বাঁ হাত দিয়ে ধানের গোছাগুলো শক্ত করে ধরে ডান হাত দিয়ে কাঁচি চালাতে লাগল। ধারালো কাঁচি পাকা ধানের ডাটাতে স্পর্শ পাওয়া মাত্রই এক অদ্ভুত ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ হতে লাগল। সাথে সাথে সবাই সমস্বরে গান গাইতে লাগল। মুখে গান, হাতে ধারালো কাঁচি দিয়ে অদ্ভুত ছন্দে ধান কাটতে লাগল তারা। রবিনের ক্যামেরা সাথে সাথে ক্লিক ক্লিক শব্দে ছবি তুলতে লাগল।

একটা শালিক আর কয়েকটি ফিঙে কাটা ধানের আঁটিতে বসে কুটকুট করে ধান খেতে লাগল। কখনও আবার দু-একটি ফিঙে উড়ে গিয়ে কৃষকদের সামনে নাচানাচি করতে লাগল। রবিনকে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে দেখে পাখিগুলো অদ্ভুতভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল।

কৃষকদের ধানকাটার ছবি তোলা শেষে রবিন তাদের সাথে কথা বলতে লাগল। কথা বলা শেষে রবিন তার নিজের মতো করে কিছু ছবি তুলল। তারপর তাদের কাছ হতে বিদায় নিয়ে পুকুরের দিকে রওনা হলো।

রবিন ধানক্ষেতের আইলের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসতে লাগল। তার পেছনে পড়ে রইল ধানক্ষেত। যে ক্ষেতে মিশে আছে কৃষকের শ্রম, সাধনা আর ভালবাসার সোনালি ফসল। যে ফসলে পূর্ণ হবে খেটে খাওয়া ওই মানুষগুলোর দু-বেলা দু-মুটো খাবারের নিশ্চয়তা আর সুন্দর আগামী দিন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!