শহর থেকে গ্রামে

‘আসতে পারি স্যার।’ কথাটা শুনেই সবার চোখ পড়ল ক্লাসরুমের দরজার দিকে। চটপটে ধরনের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনুমতির অপেক্ষায়।

সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2019, 08:54 AM
Updated : 19 Oct 2019, 08:54 AM

স্যার হাসিমুখে বললেন, ‘এসো এসো।’ মেয়েটি এক লাফে চৌকাঠ ডিঙিয়ে সোজা স্যারের পাশে এসে দাঁড়ালো। আমরা হা করে তাকিয়ে রইলাম নবাগত মেয়েটির দিকে।

স্যার মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন, ‘এই হলো পৃথা। ঢাকার একটা নামকরা স্কুলে পড়ত। তার নাকি ঢাকা একটুও ভালো লাগে না। সোজা চলে এসেছে মফস্বলের এই স্কুলে। ভর্তি হয়ে গেছে। তোমাদের সঙ্গে পড়বে সে। আমরা হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাতে পারি।‘

স্যারের কথা শেষ না হতেই তালি শুরু হয়ে গেল। স্যার বললেন, ‘ধন্যবাদ সবাইকে।’ তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি সিটে গিয়ে বসো।’

মেয়েটি ছুটে এসে আমার পাশের সিটে পটাপট বসে পড়ল। তারপর হাসিমুখে চট করে আমাকে বলল, ‘তোমার নাম কি?’

‘সুমাইয়া’, বললাম আমি।

‘ভেরি কমোন নেম। তবে নামটা আমার খুব পছন্দ। কারণ সুমাইয়া হলেন প্রথম শহীদ নারী।’

স্যার বললেন, ‘পৃথা, তুমি নতুন এসেছ। সবার সঙ্গেই পরিচিত হবে। ক্লাস শেষ হলে পরে পরিচয় করো, ঠিক আছে?’

’জ্বী সার।’ বলে আমরা স্যারের দিকে মন দিলাম।  

মনে মনে বলছি, ‘ইশ্, যদি ঢাকার নামকরা কোনো স্কুলে পড়তে পারতাম, ওই সব স্কুলের ছাত্রীদের কত দাম!’ এসব ভাবছি আর ক্লাস টিচারের চোখ ফাঁকি দিয়ে পৃথার দিকে এমন ভাবে তাকাতে লাগলাম যে, নামকরা স্কুলের ছাত্রীর দিকে যেভাবে তাকাতে হয় ঠিক সেভাবে।

স্যার চলে গেলেন। পৃথা দুহাত উপরে তুলে আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল, ‘উফ আমার যে কি ভালো লাগছে না, বলতে পারছি না। তোমরা অনেক ভালো। তোমাদের পেয়ে আমি অনেক খুশি। আচ্ছা আমাকে পেয়ে তোমাদের কেমন লাগছে বলো না একটু।’

বললাম, ‘খুব ভালো, খুব ভালো,’ পৃথা আবদার আর অভিমানের সুরে কথা বলে অল্প সময়েই সবার আপন হয়ে গেল। সে মুগ্ধ হয়ে বলছে, ’ইশ কি সুন্দর তোমাদের স্কুল, কত বড় মাঠ, চারদিকে সবুজ আর সবুজ’, বলল সে লম্বা শ্বাস টেনে ‘আহা, কি বিশুদ্ধ বাতাস। ছুটির পর আমি ইচ্ছেমতো ছোটোছুটি করব। আমার সঙ্গে থাকবে না তোমরা, বলো।’

আমি বললাম, ‘ছুটির পরে পেটে থাকে রাক্ষসের ক্ষুধা’ তখন ছোটোছুটি করলে না সমানে পেট কামড়ানি শুরু হয়ে যাবে!’ পৃথা বলে, ‘কিচ্ছু হবে না, তোমরা জানো না, এই খোলা আকাশ, বাতাস, মাঠ, পথঘাট আমি শহরে একটিও পাইনি। দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। এখন আমি মুক্ত। আমি দৌড়াব, খেলব, চিৎকার করব।’ আনন্দে ভরে গেল আমাদের মন।

একদিন পৃথাকে প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি শহরের মেয়ে, এত সুখ-শান্তি, আনন্দ আর ভালো একটা স্কুল ফেলে এভাবে চলে আসতে পারলে গ্রামে? তোমার কি শহরের উন্নত জীবনের কথা মনে হয় না পৃথা?’

‘নাহ্, তোমাদের কথা শুনে মনে হয়, শহরে সুখ আর সুখ, আনন্দ আর আনন্দ, আরামের শেষ নেই, নাহ্? শহরে থাকলে বুঝতে, কত শান্তি সেখানে, আযাব।’ বলল পৃথা।

‘আমরা তো মনে করি, শহরে থাকা মানেই আনন্দে আর আরামে থাকা। তুমি এসব কি বলছ পৃথা!, বললাম আমি।

‘জানো, এখানে এসে এই কয়দিনে যা পেলাম, শহরে তা কোনো দিনই পাওয়া যাবে না। শহরে আজ পর্যন্ত চোখ বন্ধ করে প্রাণ খুলে একটা দৌড় দিতে পারিনি আমি, স্কুলে মাঠ নেই, বাসার আশপাশে খোলা জায়গা পর্যন্ত নেই। স্কুলে যাওয়া-আসা করব, রোড জ্যাম, এক ইঞ্চি মাটির ছোঁয়া পাবে না শহরে। আর টাটকা সবজি, সবুজ মাঠ, এই নরম ঘাস, খোলা আকাশ আর এই শান্তির বাতাস, শহরের কেউ কোনোদিন পায়নি, বিশ্বাস করতে পারছ না? না পারলে নাই।’

‘আশ্চর্য, এই তোমাদের শহরের জীবন?,’ বললাম আমি।

‘তো কি বলছি সোনা, তোমরা বোঝো না আমার কথা!’

পৃথার কথার মাঝে আমি নতুন করে গ্রামকে দেখতে লাগলাম। কি সুন্দর গ্রাম! আমার নতুন করে ভালো লাগতে থাকে গ্রাম। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে এই ভালোলাগাটুকু একাই উপভোগ করতে লাগলাম আমি।

লেখক পরিচিতি: প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সম্মান তৃতীয় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!