কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই

মানুষ যেমন বিভিন্ন উপাদান নিয়ে বাসা তৈরি করে পাখিরাও তাই। লতা, পাতা, ঘাস বা কাগজ  দিয়ে। কেউ তৈরি করি পালক বা রেশম দিয়ে।

আবু আফজাল সালেহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2019, 04:34 AM
Updated : 6 July 2019, 04:34 AM

বাড়ির পাশের আবর্জনা দিয়েও বাসা তৈরি করে অনেক পাখি। কাঁদা দিয়েও অনেকে বাসা তৈরি করে। যেমন ফ্লেমিঙ্গো। বালু দিয়েও অনেক পাখি তাদের বাসা বানায়। বাসা তৈরিতে মানুষের চেয়ে বিচিত্রতায় পাখিরাই সেরা।

পৃথিবীতে কত রকমের পাখির বাসা আছে তার ইয়ত্তা নেই। পাখির মধ্যে একই নামের বিভিন্ন প্রজাতির পাখির রঙ-চেহারায় অমিল আছে। বিভিন্ন নান্দনিক রঙের মিশ্রণে ভিন্নতা রয়েছে। পাখির বাসার কথার ক্ষেত্রেও পার্থক্য আছে। কিছু কিছু পাখির বাসা তৈরির কৌশলে মারপ্যাঁচ আছে।

তোমাদের দেখা কিছু পাখির বাসা তো তোমরা দেখেছ। এসবের কিছু বাসা নিতে কথা বলব আজ। ধরো টিয়া পাখি। এরা বিভিন্ন বড় বড় গাছে বিশেষ করে তাল, নারিকেলের ফোঁকরে বাসা তৈরি করে। ফোঁকর থেকে লাল ঠোঁটে উঁকি দিলে কেমন লাগে? আর টি টা করতে করতে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলে! ভারি মজা লাগে! লাল আর সবুজে আমাদের জাতীয় পতাকার কথা মনে হয়ে যায়। প্যাঁচা, কিছু শালিকও গাছের কোটরে বাসা তৈরি করে থাকে। ওহ,কাঠঠোকরার কথা তো বলা লাগবে?

একটা কবিতা তোমরা শুনেছো নিশ্চয়। রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতা। এখানে বাবুই আর চড়ুই পাখির বাসা নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে। তাহলে কিছু অংশ তুলেই ধরি আবার-

‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই/ কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই/ আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে...’

চড়ুই নিজে বাসা তৈরি করতে পারে না! অন্যের ঘরে বাস করে বা ছনের চালে বাসা বাঁধে। অট্টালিকা বা ঘরের কোনে সামান্য তৃণ দিয়ে বাসা তৈরি করে। কিন্তু আরামেই থাকে। আর বাবুইকে শিল্পী পাখি বলা হয়। এরা বহু কষ্ট করে মাঠ থেকে বা তৃণ, পাতা ইত্যাদি সংগ্রহ করে বাসা বানায়। কিন্তু ঝড়ে বহু কষ্ট পায়। তারপরও বাবুই বলে নিজের বাসায় থেকে পরম সুখ।

এ থেকে আমাদেরকেও শিক্ষা নিতে হবে। তাই বলি তোমাদেরকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখতে হবে। বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনের কাছে মুখাপেক্ষী হওয়া যাবে না। এর জন্য পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হতে হবে।

টুনটুনি আমাদের প্রিয় পাখিদের মধ্যে অন্যতম। এরাও পাতার সাথে পাতা মিলিয়ে সুন্দর বাসা তৈরি করে। ছোট্ট পাখি এরা। এদেরকে ‘দর্জি পাখি’ বলা হয়। টুনটুনি পাখি তার বাসা তৈরি করার আগে দুটি কি তিনটি পাতা সেলাই করে একটা বাটির মতো তৈরি করে; তার মধ্যে নরম ঘাস পাতা দিয়ে সে তার বাসাটি বানায়। সেলাইয়ের সুতো সাধারণত রেশমেরই ব্যবহার করে; কাছে রেশম না থাকলে যে সুতো পায় তাই দিয়ে করে। সেলাইয়ের ছুঁচ হলো তার সরু ঠোঁট-জোড়া।

শালিকের বাসা কেমন? দেখতে ভালো লাগে না! শুকনা খড়, পাতা, কাগজ দিয়ে ইয়া বড় একখান বাসা। কিন্তু গাঙশালিকের বাসা? নদীর তীরে মাটির ফোঁকরের বাসা কিন্তু মন্দ না!

কাকের বাসা থাকলেও ডিম পাড়ে কোকিলের বাসায়। এটা তোমরা গল্পেও শুনেছ। দোয়েল অন্য পাখিদের বাসা দখলের ক্ষেত্রে প্রথম বলতে হবে। এরা আবাবিল, কাঠঠোকরা, টিয়া, বসন্তবৌরি ইত্যাদি পাখির বাসা দখল করে বাস করে। আবার নিজেরাও বাসা বানায়। বাসা বানানোর ক্ষেত্রে বোকামি করে। মানুষ চলাচল করে এমন জায়গায় বা বন্য প্রাণীর নাগালেই বাসা করে ফেলে।

কিছু পাখি পানিতে থাকে। এদের আমরা জলজ পাখি বলি।  যেমন ডাহুক, কালিম পাখি ইত্যাদি জলজ পাখি পানির ওপর কলমি, শাপলা, পদ্মফুল বা জলজ কোনো উদ্ভিদের ঝোপে খড়কুটা দিয়ে বাসা বানায়। অনেক সময় পানির চলমান স্রোতে কলমি বা কচুরিপানার সঙ্গে এসব পাখির বাসাও ভেসে যেতে থাকে।

এবার বলি মাটির তৈরি বাসার কথা। মাটির গর্তে বাসা বানায় মাছরাঙ্গা, গাঙশালিক, কাদাখোঁচা, সুইচোরাসহ জলচর অনেক পাখি। এরা সাধারণত লম্বা খারালে নদীর খাড়া পাড়ের মাটিতে ১৪ থেকে ১৮ ইঞ্চি গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। এদের বাসায় ঢোকার মুখটা সঙ্কুচিত হলেও ভেতরের ডিম ও বাচ্চা লালন-পালনের স্থানটি অনেক বড়। 

অনেক জাতের পাখি কাদা দিয়েও তাদের বাসা বানায়। আফ্রিকার ফ্লামিঙ্গোর বাসা কাদার তৈরি। একটা ঢিপির মতো কাদা সাজিয়ে তার মাঝে একটা গর্ত করে ফ্লামিঙ্গো ডিম পাড়ে। আরো অনেক জাতের পাখিও কাদার বাসা বানায়; তাদের অধিকাংশই আফ্রিকার।

রাজহাঁস মাটির বাসায় থাকতে ভালোবাসে। এরকম কিছু পাখি আছে শুধু বালু, পাথুরে ভূমি এবং ঝোপঝাড়ের আড়ালে মাটিতে বাসা বানায়। নীল হাঁস,বুনো মুরগি, বুনো হাঁস, সরালি হাঁস, অ্যালবাট্রস, গাঙচিল, বিভিন্ন হাঁস প্রজাতির পাখি। এদের বাসায় পাখির বুকের নরম পালক, শুকনো জলজ উদ্ভিদ সুন্দর করে বিছিয়ে তাতে ডিম পাড়ে। খোলামেলা মাটিতে বাসা হলেও ঝোপঝাড়, বালুর ঢিবি ও পাথরের চাঁইয়ের আড়ালে লুকানো বাসাগুলো সহজে কারো নজরে পড়ে না। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট্ট পাখি ‘হামিং বার্ড’ এর বাসা কিন্তু অর্ধেক শ্বাসযুক্ত নারকেলের খোলের মতো।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানাkidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!